শাহেদ মিজান, সিবিএন:
বাড়ি, গাড়ি, জমি, দোকান, ফ্ল্যাটসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন কক্সবাজার শহরের ঝাউতলাস্থ সুইচ কেক এন্ড পেস্টি শপ’র স্বত্ত্বাধিকারী আজিম উদ্দীন। সুইচ’র মাত্র দুটি শাখা দিয়ে কিভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া যায় তা নিয়ে এতোদিন ছিলো রহস্য! কিন্তু এবার সেই রহস্য ফাঁস হয়েছে! ইয়াবাসহ ধরার পড়ে আজিম উদ্দীনের এই সম্পদের আয়ের উৎস ‘ওপেন’ হয়ে গেছে। প্রশাসনের লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন ইয়াবা ব্যবসা করেই এতো অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন আজিম উদ্দীন!
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সুইচের দুটি শাখাসহ কিছু দৃশ্যমান ব্যবসা রয়েছে আজিম উদ্দীনের। কিন্তু তার যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার সাথে তার ব্যবসা সামঞ্জস্য নেই বলে জানিয়েছেন তাকে জানাশোনা লোকজন। সূত্র মতে, আজিম উদ্দীন গত কয়েক বছরে আকস্মিক অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানার পিছন সড়কে কিনেছেন চারতলা বাড়ি, উখিয়ার রেজুব্রীজ সংলগ্ন স্থানে কিনেছেন কোটি টাকা দামের জমি, ঝাউতলাস্থ তার সুইচ’র পাশে কিনেছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা দামের দুটি দোকান, কলাতলীর আলফা ওয়েভে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, শহরের বদরমোকাম সংলগ্ন এন্ডারসন সড়কে জমি কিনে গড়েছেন ইগলু আসক্রিম ফ্যাক্টরি, চট্টগ্রামের খুলশি ও ঢাকা রয়েছেন একাধিক ফ্ল্যাট, রয়েছে পাঁচটি নোহা গাড়ি, পটিয়ায় গ্রামে কিনেছেন বিপুল জমি এবং চট্টগ্রামের কয়েকটি গরুরবাজারে রয়েছে ইজারার শেয়ার। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজনের নামে এবং বেনামেও আরো সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তাকে জানাশোনা লোকজন।
অনুসন্ধানী সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ১০ বছর আগে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়ায় আজিম উদ্দীন। সুইচ কেক এন্ড পেস্টি শপকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে টেকনাফের এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলো ক্রসফায়ারে নিহত ইয়াবা মাফিয়া হাজী সাইফুলের সাথে। পটিয়ার আবছার নামে এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে আজিম উদ্দীন হাজী সাইফুলের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসার প্রবেশ করে বলে সূত্রটির দাবি। পরে নিজেই হয়ে উঠেন ইয়াবা জগতের ‘লুকায়িত’ কিং। দেশজুড়ে গড়ে তুলেন সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ইয়াবা পাচার করতেন। এভাবে আজিম উদ্দীন হয়ে উঠেন রহস্যময় ধনকুবের! সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, নেতা ও প্রশাসনের কিছু লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, কলাতলীর আলফা ওয়েভটি ইয়াবাকারবাীদের একটি আস্তানা। এই ভবনের অনেক ফ্ল্যাটের মালিকও ইয়াবাকারবারী। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এসে সেখানে আসর বসায়।
এদিকে সুইচ মালিক আজিম উদ্দীন ইয়াবাসহ ধরা পড়া খবর প্রকাশ হলে কক্সবাজারে বিষয়টি বেশ তোলপাড় চলছে। ২০ মার্চ ধরা পড়লেও তার সিন্ডিকেটের লোকজন বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ার মাধ্যমে আজিম উদ্দীনের অঢেল সম্পদের রহস্য উন্মোচন হলো বলে মনে করছেন কক্সবাজারের লোকজন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তার ভাই নাজিম উদ্দীন দাবি করেছেন, আজিম উদ্দীন ইয়াবা ব্যবসায়ী নয়। তাকে একটি শত্রুপক্ষ ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়েছে। তবে এতো সম্পদের উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দেননি ভাই নাজিম উদ্দীন।
আজিম উদ্দীন ও এক সহযোগিকে ইয়াবাসহ আটক অভিযানের ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে আজিম উদ্দীন তার ইয়াবা ব্যবসা ও সিন্ডিকেটের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশ তাকে পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ আজিম উদ্দীনকে আটক করেছেন। একই অভিযানে রাসেল নামে তার এক সহযোগিকেও আটক করা হয়েছে। আটক আজিম উদ্দীন চট্টগ্রামের পটিয়ার হাবিলাশদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন গ্রামের ফকর খাঁন বাড়ির মৃত শামসুল আলমের পুত্র। আটক তার সহযোগি রাসেলের বাড়ি চকরিয়ায়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।