এম.আর মাহমুদ:
“নামে কীই-বা আসে যায়, নাম দিয়ে কি হয়? নামের মাঝে পাবে নাতো সবার পরিচয়।” গানটি বহু পুরানো হলেও শুনতে ভাল লাগে। পুরো গানটি শুনলে গানের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়। গত রাত অলস সময় কাটাতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস চোখে পড়ল যা মন দিয়ে পড়েছি। বিষয়টি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নাকি স্থানীয় সরকার পরিষদের ৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত নামগুলো হচ্ছে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের পরিবর্তে ‘পল্লী পরিষদ’, চেয়ারম্যানের পরিবর্তে হবে ‘পল্লী পরিষদ প্রধান’, পৌরসভার পরিবর্তে নাম হবে ‘নগর সভা’, মেয়রের পরিবর্তে হবে ‘পুরাধ্যক্ষ’ আর সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে হবে ‘মহানগর সভা’ আর মেয়রের পরিবর্তে হবে ‘অধিকারীক’। শব্দগুলো নিখুঁত বাংলা হলেও কেন যেন বারবার হটকা লেগেছে। কারণ সাধারণ মানুষ এসব প্রতিষ্ঠান ও পদের নাম মুখস্ত করতে লাগবে কয়েকদিন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করতে ব্যয় হবে অঢেল টাকা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অনেক পরিবর্তন এনেছে যা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে থাকবে। এ ক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি সফল। সর্বশেষ স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ে ৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে দেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নামে ৩টি প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষিত, স্বশিক্ষিত ও অক্ষরজ্ঞানহীনেরাও পরিচিত। কিন্তু হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন এভাবে নাম পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে কি মহৎ উদ্যোগ রয়েছে তা এখনও বুঝা যাচ্ছে না। তবে এ প্রস্তাবনা এখনও জনসাধারণের মধ্যে বেশি করে ভাইরাল হয়নি। ফলে হয়তো অনেক বিজ্ঞজন এসব কান্ডে বিরোধীতা করবে। তবে যেহেতু নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা ইচ্ছে করলে দিনের ভোট রাতেও নিতে পারে। ভোট কেন্দ্রের উপস্থিতি দেখলে পাগলও হাসে। নির্বাচন কমিশন বলে বেড়ায় ‘শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর ভোট হয়েছে’। এখানে এসব বলে কোন লাভ নেই। হয়তো নির্বাচন কমিশন বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন প্রকল্পে হাত দিয়েছে। এর বেশি মন্তব্য করা যথাযথ হবে বলে আমজনতা মনে করে না। সাবেক সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি এইচ.এম এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পর রাতারাতি থানাকে মানোন্নীত থানায় পরিবর্তন করলেও পরে উপজেলা পরিষদে রূপান্তরিত করে। এক্ষেত্রে দেশের সব ক’টি থানা উপজেলা পরিষদে পরিণত হয়েছে। মহকুমা বিলুপ্ত করে বেশিরভাগ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে। তবে লামা, পটিয়া, কাপ্তাই ও রামগড ছাড়া। এ পদ্ধতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে এবং মেনেও নিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তনসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পদবী পরিবর্তন যা অধিকাংশ মানুষের পক্ষে উচ্চারণ করাও কঠিন হবে। সে পথে অগ্রসর হওয়ার রহস্য কি বুঝাই যাচ্ছে না। হয়তো প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অনুকরণে এসব করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন অনেকে। সাধারণ মানুষ বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির উপর আস্থাহীন। মানুষ চায় এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। সে অধিকারটুকু না দিয়ে নাম পরিবর্তন করলে যে লাউ সে কদুতে পরিবর্তন হবে। সব কথার শেষ কথা হচ্ছে “নামে কীই-বা আসে যায়, নাম দিয়ে কি হয়? নামের মাঝে পাবে নাতো সবার পরিচয়।” রাজা নাই শাহী নাই রাজশাহী নাম ……… অতএব, মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।

এম.আর মাহমুদ
চকরিয়া
তাং- ১৬/০৮/২০২০ইং