বিশেষ প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ।

তবে ওই ৮ জনের সকলেই মেজর (অব) সিনহা হত্যা মামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বা আসামিদের সাথে সম্পৃক্ত কিনা তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু খলনায়ক ইলিয়াস কোবরার নাম এ তালিকায় থাকায় তার দিকে কদিন আগে উঠা সন্দেহের তীর আরও তীব্র হলো।

যদিও তিনি একাধিক গণমাধ্যমকে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগকে ভিত্তিহীন কাল্পনিক বলে দাবি করেছিলেন।

সোমবার (১৭ আগস্ট) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে দেশে কার্যরত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে যে আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেসব হিসাবগুলো হচ্ছে, এবিএম মাসুদ হোসেন, প্রদীপ কুমার দাশ, চুমকী কারান, প্রতীম কুমার দাশ, প্রতুশ কুমার দাশ, মো. লিয়াকত আলী, দিলীপ ও ইলিয়াস কোবরার। হিসাবগুলোকে লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ক্ষমতাবলে ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া চিঠিতে প্রত্যেকের নামের পাশে জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে চিঠি ইস্যু করার দিন থেকে তিনদিনের মধ্যে স্থগিত করা হিসাবগুলোর নাম, নম্বর, স্থিতি ও এ সংক্রান্ত তথ্যাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী) পাঠাতে বলা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ এনে ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশের নয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

এরপর আদালতে গত ৬ আগস্ট নয় আসামির মধ্যে পরিদর্শক লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাতজন আত্মসমর্পণ করেন। দুজন করেননি। তাদের পর্যায়ক্রমে রিমান্ডও দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ব্যাংক হিসাব স্থগিতের এ নির্দেশনা।

এরআগে একটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার খবরে বলা হয়, ইয়াবাসহ নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে টেকনাফে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করছিলেন মেজর (অব) সিনহা। তাই সিনহা ওসি প্রদীপের ভিডিও সাক্ষাৎকার নিয়ে যখন দ্রুত টেকনাফ থানা ত্যাগ করছিলেন। এরমাঝে বাহারছড়া-সংলগ্ন মারিসঘোনা এলাকাতেই বসবাস করেন চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপ পরিচালনাকারী ইলিয়াস কোবরা। হঠাৎ তার টেলিফোনে করা আমন্ত্রণ পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেননি মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এদিকে থানা থেকে মেজর সিনহা বেরিয়ে যেতেই ওসি প্রদীপ অচিরেই বড় রকমের বিপদের আশঙ্কায় তৎক্ষণাৎ কক্সবাজারের এসপি মাসুদকে ফোন করে বিস্তারিত জানিয়ে দেন। সব শুনে এসপি নিজেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কয়েক মিনিটেই এসপির নির্দেশনায় তৈরি হয় সিনহা খুনের ছক। আলাপ-আলোচনা শেষে এসপি-ওসি এমনভাবেই ত্রিমুখী মার্ডার মিশন সাজিয়েছিলেন- সেই ফাঁদ থেকে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের প্রাণে বাঁচার কোনো সুযোগই ছিল না।

ওই পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপের পরিচালক ইলিয়াস কোবরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, আতিথেয়তার নামে নানা কৌশলে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেজর সিনহাকে তার নিভৃত পাহাড়ি গ্রামে আটকে রাখার। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরিচিতি থাকলেও ইলিয়াস কোবরা ইদানীং। ‘ক্রসফায়ার মিটমীমাংসার দালালি’ কাজেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম থাকার গুজব ছড়িয়ে অসংখ্য মানুষকে গোপনে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দিয়ে টেকনাফের শীর্ষ দালাল হিসেবে বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে কোবরার। তবে ক্রসফায়ারের কবল থেকে জীবন বাঁচানোর সমঝোতায় ওসি প্রদীপ হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত

অন্যদিকে দালালির কমিশন হিসেবে ইলিয়াস কোবরাকেও মাথাপিছু এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পাইয়ে দিয়েছেন প্রদীপ। ওসিসহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে পরীক্ষিত দালাল ইলিয়াস কোবরা ঠিকই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। মারিসঘোনায় নিজের বাগানবাড়ি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখানোর নামে ইলিয়াস কোবরা সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্জন পাহাড়েই নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন মেজর সিনহাকে। এ সময়ের মধ্যে মেজরের অবস্থান, কতক্ষণ পর কোন রাস্তায় কোথায় যাবেন সেসব তথ্য জানিয়ে ইলিয়াস কোবরা ওসি প্রদীপকে ৯টি এসএমএস পাঠান বলে খবরে উল্লেখ করা হয়।