মুহম্মদ নূরুল ইসলাম:
বিসমিল্লাহ্হির রাহমানির রাহিম।
সকল প্রশংসা সেই সত্তার যাঁর হাতের মুঠোতে আমার জীবন-মৃত্যু। সকল প্রশংসা তাঁরই যিনি আমাকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন, শুকরিয়া প্রকাশ করছি রাব্বুল আলামিনের যিনি আমার কলমকে সচল রেখেছেন। সে রবের কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া যিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু লেখার জন্য সাহায্য করেছেন।
অসংখ্য দরুদ ও সালাম বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, মহান শিক্ষক সাইয়্যিদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি, যিনি ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঘোরতর জাহেলিয়াতের যুগে আবির্ভূত হয়ে ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের পংকিলতায় নিমজ্জিত জাতিকে তাওহীদি চেতনায় উদ্ভাসিত ও আলোকিত করেছেন।
ভূমিকা :
সূরা আল ‘ফাতিহা’ কুরআনের প্রথম তথা এক নম্বর সূরা। সুরার আয়াত সংখ্যা ৭। এটি কুরআনের প্রথম নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ সূরা। সূরা আল ফাতিহার সর্বাধিক পরিচিত নাম ‘সূরাতুল ফাতিহা’। তারপরও সূরা ফাতিহার স্থান, মর্যাদা, বিষয়বস্তু, ভাবভাষা, প্রতিপাদ্য বিষয় ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে এর বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক নামের সাথেই সূরাটির সামঞ্জস্য বিদ্যমান। সূরা ফাতিহাকে সূরাতুল হামদ, উম্মুল কুরআন, আস-সাবউল মাছানী, ওয়াকিয়াহ, সূরাতুল কাফিয়্যাহ, সূরাতুল কানয, সূরাতুশ শিফা ও সূরাতুল আসাস নামেও অভিহিত করা হয়। সূরা ফাতিহার প্রত্যেকটি বাক্য ও শব্দ উচ্চারণ করা সহজ। যে কেউ ইচ্ছা করলে সূরা ফাতিহা সহজে মুখস্থ করতে পারে। মক্তব, মাদরাসা ও মসজিদে কুরআনুল করিমের প্রথম সবক সূরা ফাতিহার মাধ্যমে দেয়া হয়। সালাত আদায়ের জন্য কুরআনুল করিম থেকে প্রথম যে দশটি সূরা মক্তব-মাদরাসায় শিখানো হয়, এ ক্ষেত্রে সূরা আল ফাতিহা প্রথম পড়ানো হয়। রাব্বুল আলামিন কুরআন করিমে এরশাদ করেছেন, “আমি আপনাকে দান করেছি পুনঃপুনঃ আবৃত্তির সাতটি আয়াত।” (সূরা হিজর : ৮৭)। বেশির ভাগ মুফাসসিরে কুরআনের অভিমত হলো, পুনঃপুনঃ পাঠের জন্য যে সাতটি আয়াতের ইঙ্গিত সূরা হিজরের মধ্যে এসেছে তা সূরা ফাতিহার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেক নামাজে সূরা ফাতিহা পুনঃপুনঃ পাঠ করা হয় বলে এ সূরাকে ‘সূরাতুস সালাত (নামাজের সূরা)ও বলা হয়। এ সূরার সাতটি আয়াতের প্রথম চারটি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষ তিনটি আয়াতে বান্দার প্রার্থনার কথা বর্ণনা করা রয়েছে। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুরা আল ফাতিহা পাঠ না করলে নামায হবে না। এই সূরাটির ফযিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম।
নামকরণ
‘ফাতিহা’ অর্থ যা দিয়ে খোলা হয় বা শুরু করা হয়। ‘ফাতিহা’ শব্দের অর্থ শুরু, আরম্ভ, উদ্বোধন, উদঘাটন প্রভৃতি। কুরআনুল করিমের ১১৪টি সূরার মধ্যে প্রথম সূরাটি হলো ‘সূরাতুল ফাতিহা’। এই সূরা দিয়েই ক্বুরআন করিম শুরু করা হয়েছে। তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘সূরা আল-ফাতিহা’। একই সাথে ‘সূরা আল ফাতিহা’কে ‘ফাতিহাতুল কুরআন’ বা কুরআনের শুরু বলে অভিহিত করা হয়। এ সূরার অপর নাম ‘উম্মুল ক্বুরআন’, ‘উম্মুল কিতাব’, ‘ক্বুরআনে আযিম’।
সাধারণত সূরার কোনো একটি শব্দের ভিত্তিতে কুরআন করিমের প্রায় সব সূরার নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু মাত্র দুইটি সূরার নাম এমন শব্দে রাখা হয়েছে, যা ঐ সূরায় নেই। এর একটি ‘সূরা আল-ফাতিহা’ এবং ‘অন্যটি সূরা আল ইখলাস’।
মূল বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই সূরাটির এ নামকরণ করা হয়েছে। যার সাহায্যে কোনো বিষয়, গ্রন্থ বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এ শব্দটি ভূমিকা এবং বক্তব্য শুরু করার অর্থ প্রকাশ করে।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
সূরা আল-ফাতিহা মহাগ্রন্থ পবিত্র ক্বুরআন করিমের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। প্রথমত, এ সূরার মাধ্যমেই পবিত্র কুরআন করিম আরম্ভ হয়েছে এবং এ সূরা দিয়েই সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত নামায আরম্ভ হয়।
এটি মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভের একেবারে প্রথম যুগের সুরা। বরং হাদিসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। ‘সূরা আল আলাক’, ‘সূরা আল মুয্যাম্মিল’ ও ‘সূরা আল মুদ্দাস্সির’-এর কয়েকটি আয়াত ‘সূরা আল-ফাতিহা’র পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এ সূরার অবতরণই সর্বপ্রথম। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এটি মক্কি সুরা বা মক্কা মোয়াজ্জামায় নাজিল হয়েছে। যে সকল সাহাবি রা. সূরা আল-ফাতিহা সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন, তাঁদের সে বক্তব্যের অর্থ বোধহয় এই যে, পরিপূর্ণ সূরারূপে এর আগে আর কোনো সূরা নাযিল হয় নি। এ জন্যই এ সূরার নাম ‘ফাতিহাতুল-কিতাব’ বা ক্বুরআনের উপক্রমণিকা রাখা হয়েছে।
সূরা আল ফাতিহার বৈশিষ্ট্য :
কুরআন করিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা হচ্ছে ‘সুরা আল ফাতিহা’। সূরাটিকে আল কুরআন করিমের সার সংক্ষেপও বলা হয়। এ সূরা নাজিল হয়েছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ, মুক্তি ও পথপ্রদর্শক হিসেবে। সূরাটি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্য সব সূরা থেকে আলাদা। সমগ্র আল কুরআন করিম প্রধানত ঈমান এবং নেক আমলের আলোচনাতেই কেন্দ্রিভূত। আর এ দু’টি মূলনীতিই এ সূরায় সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে। তফসিরে রূহুল মা’আনি ও রূহুল বয়ানে এর বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। তাই এ সূরাকে সহিহ হাদিসে ‘উম্মুল ক্বুরআন’, ‘উম্মুল কিতাব’, ‘ক্বুরআনে আযিম’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। -(কুরতুবি)
হাদিস শরিফে সূরা আল-ফাতিহাকে সূরায়ে শেফাও বলা হয়েছে। -(কুরতুবি)
সূরাতুল-ফাতিহার আয়াত সংখ্যা সাত। প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ্র প্রশংসা এবং শেষের তিনটি আয়াতে মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও আবেদনের বিষয়বস্তুর সংমিশ্রণ। মধ্যখানের একটি আয়াত প্রশংসা ও দোয়া মিশ্রিত।
১) এই সূরা কুরআন করিমের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কুরআন কোনো কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই। (বুখারি, মিশকাত : ২১৪২)
২) এই সূরা এবং সূরা আল বাকারাহ’র শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয় নি। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)
৩) যে ব্যক্তি নামাজে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ কথাটি তিনবার বললেন। (মিশকাত : ৮২৩)
৪) আবু সা‘ঈদ খুদরি রা. বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (বুখারি শরীফ : ৫৪০৫)
সুরা আল ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন করিম মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহিদ, আহকাম ও নছিহত। সূরা আল ইখলাছে ‘তাওহিদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরা আল ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী : ১৪৮)
সুরা আল ফাতেহার মূল বিযয়বস্তু হল পুরা কুরআন করিমের ব্যাখ্যা। পবিত্র কুরআন করিমের মূল বিষয়বস্তু ঈমান ও নেক আমল। আর এই দুটি বিষযের ভিত্তিমূলক সূত্র এ সুরাতেই আলোচনা করা আছে। এজন্য সুরায়ে ফাতিহার আরেকটি নাম হলো উম্মুল কুরআন। (-কুরতবী)
সূরা আল ফাতিহার ফজিলত :
সুরা আল ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :
১) উবাই ইবনু কা‘ব রা. বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মত তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাযিল করেন নি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাব‘উল মাসানি’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ী শরীফ : ৩১৯)
২) আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সূরা আল ফাতিহা পড়। কোনো বান্দা যখন বলে, “আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামিন”, তখন আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে”।
বান্দা যখন বলে, “আর-রহমা-নির রহিম”, তখন আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে”।
বান্দা যখন বলে, “মালিকি ইয়াউমিদ্দিন”। আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন”।
বান্দা যখন বলে, “ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন”, আল্লাহ বলেন, “এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়”।
বান্দা যখন বলে, “ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)”। আল্লাহ বলেন, “এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়”। (মুসলিম শরীফ : ৩৯৫)
৩) ইবনে আববাস রা. বলেন, একদা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জিবরাঈল আ. উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল আ. ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয় নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয় নি। তা হচ্ছে সূরা আল ফাতিহা এবং সূরা আল বাকারাহ্’র শেষ দু’আয়াত। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)
সূরা ফাতিহার ফজিলতের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ‘খাজিনাতুল আসরার’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করে ফরজ নামাজ আদায়ের আগে কেউ যদি বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা ৪০ বার পাঠ করে তাহলে ওই ব্যক্তি নিঃসন্তান থাকলে সন্তান হবে, বেকার থাকলে চাকরি হবে, ঋণ থাকলে ঋণ পরিশোধের উপায় হয়ে যাবে, সম্পদহীন থাকলে সম্পদ লাভ হবে, অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়ে যাবে ও বিপদাপন্ন হলে উদ্ধার পেয়ে যাবে’। হজরত আলী রা. বলেছেন, কোনো বিপদে পতিত ব্যক্তি এক হাজার বার সূরা ফাতিহা পাঠ করলে ওই ব্যক্তির আর বিপদ থাকতে পারে না। হজরত ইমাম জাফর সাদেক রা. বলেছেন, ‘৪১ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে খাওয়ালে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যাবে’। (তাওয়ারিখে মদিনা)। এ ছাড়া কুরআনের একটি হরফ বুঝে পাঠ করলে ১০টি নেকি লাভ হয়। সূরা ফাতিহায় ১২৫টি হরফ রয়েছে। ১২৫টি হরফ যিনি পাঠ করবেন তার আমল নামায় ১২৫০টি নেকি দান করা হয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূরা আল ফাতেহা ৩ বার তেলওয়াত করলে ২ বার কুরআন করিম খতম করার সওয়াব পাওয়া যায়। (-তাফসীরে মাযহারী)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হযরত উবাই ইবনে কাব রা.-কে বললেন, “তুমি কি চাচ্ছ যে, আমি তোমায় পবিত্র কুরআনুল করিম হতে এমন একটি সুরা শিক্ষা দেই, যে সূরা তাওরাত, যাবুর, ইনজিল এমনকি পবিত্র কুরআন করিমেও দ্বিতীয়টি নেই”? হযরত উবাই ইবনে কাব রা. আরজ করলেন, “হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সে সুরাটি শিখিয়ে দিন”। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নামাযে তুমি কীভাবে কেরাত পাঠ করো”? উবাই ইবনে কাব রা. সুরা আল ফাতিহা পাঠ করে শুনালেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, সেটি হলো সুরা ফাতেহা যা ‘আস-সাব‘উল মাসানি’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত)”। (-উসওয়ায়ে রাসলে আকরাম/নাসায়ী শরীফ : ৩১৯)
সুরা আল ফাতিহায় কী আছে?
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে শুরু করছি।
১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। ২. যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। ৩. যিনি প্রতিদান (বিচার) দিনের মালিক। ৪. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৫. তুমি আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, ৬. তাদের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছো। ৭. যাদের ওপর তোমার গযব পড়ে নি এবং যারা পথভ্রষ্ট হয় নি।
সূরাতুল-ফাতিহার বিষয়বস্তু :
সূরাতুল ফাতিহার আয়াত সংখ্যা সাত। প্রথম তিনটি আয়াত আল্লাহ্র প্রশংসা এবং শেষের তিনটি তথা ৫ থেকে ৭ নম্বর আয়াতগুলোতে মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা ও দরখাস্তের বিষয়বস্তুর সংমিশ্রণ। মধ্যের একটি আয়াত তথা ৪ নম্বর আয়াত প্রশংসা ও দোয়া মিশ্রিত।
মুসলিম শরিফে হযরত আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেনÑ ‘নামায (অর্থাৎ, সূরাতুল ফাতিহা) আমার এবং আমার বান্দাদের মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত। অর্ধেক আমার জন্য আর অর্ধেক আমার বান্দাদের জন্য। আমার বান্দাগণ যা চায়, তা তাদেরকে দেয়া হবে’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, যখন বান্দাগণ বলে ‘আল্হাম্দু লিল্লা’ তখন আল্লাহ্ বলেন যে, ‘আমার বান্দাগণ আমার প্রশংসা করছে’। আর যখন বলে ‘রাহ্মা-নির রাহিম’ তখন তিনি বলেন যে, ‘তারা আমার মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছে’। আর যখন বলে ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্ দীন’ তখন তিনি বলেন, ‘আমার বান্দাগণ আমার গুণগান করছে’। আর যখন বলে ‘ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাস্তা’ঈন’ তখন তিনি বলেন, ‘এ আয়াতটি আমার এবং আমার বান্দাগণের মধ্যে সংযুক্ত’। কেননা, এর এক অংশে আমার প্রশংসা এবং অপর অংশে বান্দাগণের দোয়া ও আরয রয়েছে। এ সঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে যে, বান্দাগণ যা চাইবে তারা তা পাবে।
অতঃপর বান্দাগণ যখন বলে ‘ইহ্দিনাস সিরা-ত্বাল্ মুস্তাকিম’ (শেষ পর্যন্ত) তখন আল্লাহ্ বলেন, ‘এসবই আমার বান্দাগণের জন্য এবং তারা যা চাইবে তা পাবে’। Ñ (মাযহারি)
আল্হাম্দু লিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার)। অর্থাৎ, দুনিয়াতে যে কোনো স্থানে যে কোনো বস্তুর প্রশংসা করা হয়, বাস্তবে তা আল্লাহ্রই প্রশংসা। কেননা, এ বিশ্ব চরাচরে অসংখ্য মনোরম দৃশ্যাবলী, অসংখ্য মনোমুগ্ধকর সৃষ্টিরাজি আর সীমাহীন উপকারী বস্তুসমূহ সর্বদাই মানব মনকে আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি আকৃষ্ট করতে থাকে এবং তাঁর প্রশংসায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, সকল বস্তুর অন্তরালেই এক অদৃশ্য সত্তার নিপুণ হাত সদা সক্রিয়।
যখন পৃথিবীর কোথাও কোন বস্তুর প্রশংসা করা হয়, তখন প্রকৃতপক্ষে তা উক্ত বস্তুর সৃষ্টিকর্তার প্রতিই বর্তায়। যেমন, কোনো চিত্র, কোনো ছবি বা নির্মিত বস্তুর প্রশংসা করা হলে প্রকৃতপক্ষে সে প্রশংসা প্রস্তুতকারকেরই করা হয়।
‘রাব্বিল আলামিন’ এ ক্ষুদ্র্র বাক্যটির পরেই আল্লাহ্ তা’আলার প্রথম গুণবাচক নাম ‘রাব্বুল আলামিন’-এর উল্লেখ করা হয়েছে। আরবি ভাষায় ‘রব’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘পালনকর্তা’। লালন-পালন বলতে বুঝায়, কোনো বস্তুকে তার সমস্ত মঙ্গলামঙ্গলের প্রতি লক্ষ্য রেখে ধীরে ধীরে বা পর্যায়ক্রমে সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়া।
এ শব্দটি একমাত্র আল্লাহ্র জন্য নির্দিষ্ট। সম্বন্ধপদ রূপে অন্যের জন্যেও ব্যবহার করা চলে, সাধারণভাবে নয়। কেননা, প্রত্যেকটি প্রাণী বা সৃষ্টিই প্রতিপালিত হওয়ার মুখাপেক্ষী, তাই সে অন্যের প্রকৃত প্রতিপালনের দায়িত্ব নিতে পারে না।
‘আলামিন’ শব্দটি ‘আলম’ শব্দের বহুবচন। এতে পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টিই অন্তর্ভুক্ত। যথাÑ আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, তারকা-নক্ষত্ররাজি, বিজলি, বৃষ্টি, ফেরেশতাকুল, জ্বিন, জমিন এবং এতে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে। জীবজন্তু, মানুষ, উদ্ভিদ, জড়পদার্থ সব কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। অতএব ‘রাব্বিল আলামিন’ এর অর্থ হচ্ছেÑ আল্লাহ্ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টির পালনকর্তা। তাছাড়া একথাও চিন্তার ঊর্ধ্বে নয় যে, আমরা যে দুনিয়াতে বসবাস করছি এর মধ্যেও কোটি কোটি সৃষ্টবস্তু রয়েছে। এ সৃষ্টিগুলোর মধ্যে যা কিছু আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় এবং যা আমরা দেখি না সে সবগুলোই এক একটা আলম বা জগত।
এছাড়া আরো কোটি কোটি সৃষ্টি রয়েছে, যা সৌরজগতের বাইরে, যা আমরা দেখতে পারি না। ইমাম রাযি তফসিরে-কবিরে লিখেছেন যে, ‘এ সৌরজগতের বাইরে আরো সীমাহীন জগত রয়েছে’। যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত এবং একথা সর্বজনবিদিত যে, সকল বস্তুই আল্লাহ্র ক্ষমতার অধীন। সুতরাং তাঁর জন্য সৌরজগতের অনুরূপ আরো সীমাহীন কতকগুলো জগত সৃষ্টি করে রাখা অসম্ভব মোটেই নয়। বর্তমানে বিজ্ঞানীরাও প্রমাণ করেছেন যে মহাবিশ্বে আরো অনেক জগত রয়েছে। যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত এবং একথা সর্বজনবিদিত যে, সকল বস্তুই আল্লাহ্র ক্ষমতার অধীন। সুতরাং তাঁর জন্য সৌরজগতের অনুরূপ আরো সীমাহীন কতকগুলো জগত সৃষ্টি করে রাখা অসম্ভব মোটেই নয়।
উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা যাচ্ছে যে, ‘রাব্বিল আলামিন’-এর নিখুঁত প্রতিপালন নীতিই পূর্বের বাক্য ‘আল্হাম্দু লিল্লা-হি’-এর দলিল বা প্রমাণ। সমগ্র সৃষ্টির লালন-পালনের দায়িত্ব একই পবিত্র সত্তার; তাই তারিফ-প্রশংসারও প্রকৃত প্রাপক তিনিই; অন্য কেউ নয়। এজন্য প্রথম আয়াত ‘আল্হাম্দু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন’-এ তারিফ-প্রশংসার সাথে ঈমানের প্রথম স্তম্ভ আল্লাহ্ তা’আলার একত্ব বা তাওহিদের কথা অতি সূক্ষ্মভাবে এসেছে।
দ্বিতীয় আয়াতে তাঁর গুণ, দয়ার প্রসঙ্গ রাহমান ও রাহিম শব্দদ্বয়ের দ্বারা বর্ণনা করেছেন। উভয় শব্দই ‘গুণের আধিক্যবোধক বিশেষণ’ যাতে আল্লাহ্র দয়ার অসাধারণত্ব ও পূর্ণতার কথা বুঝায়। এ স্থলে এ গুণের উল্লেখ সম্ভবত এজন্য যে, আল্লাহ্ তা’আলা যে সমগ্র সৃষ্টিজগতের লালন-পালন ভরণ-পোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেছেন এতে তাঁর নিজস্ব কোন প্রয়োজন নেই বা অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েও নয়; বরং তাঁর রাহ্মত বা দয়ার তাগিদেই করেছেন। যদি সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্বও না থাকে, তাতেও তাঁর কোন লাভ-ক্ষতি নেই, আর যদি সমগ্র সৃষ্টি অবাধ্যও হয়ে যায় তবে তাতেও তাঁর কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি নেই।
‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্ দ্বীন’-এর অর্থ কোন বস্তুর উপর এমন অধিকার থাকা, যাকে ব্যবহার, রদবদল, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সব কিছু করার সকল অধিকার থাকবে। ‘দ্বীন’ অর্থ ‘প্রতিদান দেয়া’। ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্ দ্বীন’ এর শাব্দিক অর্থ প্রতিদিন-দিবসের মালিক বা অধিপতি। অর্থাৎ, প্রতিদান Ñ দিবসের অধিকার ও আধিপত্য কোন্ বস্তুর উপরে হবে, তার কোনো বর্ণনা দেয়া হয় নি। তাফসিরে কাশশাফে বলা হয়েছে যে, এতে ‘আম’ বা অর্থের ব্যাপকতার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন-দিবসে সকল সৃষ্টিরাজি ও সকল বিষয়ই আল্লাহ্ তা’আলার অধিকার থাকবে।
‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্ দ্বীন’ বাক্যটিতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই একথা জানেন যে, সেই একক সত্তাই প্রকৃত মালিক, যিনি সমগ্র জগতকে সৃষ্টি করেছেন এবং এর লালন-পালন ও বর্ধনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং যাঁর মালিকানা পূর্ণরূপে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যেই সর্বাবস্থায় পরিব্যাপ্ত। অর্থাৎ-প্রকাশ্যে, গোপনে, জীবিতাবস্থায় ও মৃতাবস্থায় এবং যার মালিকানার আরম্ভ নেই, শেষও নেই। এ মালিকানার সাথে মানুষের মালিকানা তুলনাযোগ্য নয়। কেননা, মানুষের মালিকানা আরম্ভ ও শেষের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ। এক সময় তা ছিল না; কিছু দিন পরেই তা থাকবে না। অপরদিকে মানুষের মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য। বস্তুর বাহ্যিক দিকের উপরই বর্তায়; গোপনীয় দিকের ওপর নয়। জীবিতের ওপর; মৃতের ওপর নয়। এজন্যই প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ্ তা’আলার মালিকানা কেবলমাত্র প্রতিদান দিবসেই নয়, বরং পৃথিবীতেও সমস্ত সৃষ্টজগতের প্রকৃত মালিক আল্লাহ্ তা’আলা। তবে এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার মালিকানা বিশেষভাবে প্রতিদান দিবসের এ কথা বলার তাৎপর্য কী? আল-ক্বুরআন করিমের অন্য আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে, যদিও দুনিয়াতেও প্রকৃত মালিকানা আল্লাহ্ তা’আলারই, কিন্তু তিনি দয়াপরবশ হয়ে আংশিক বা ক্ষণস্থায়ী মালিকানা। মানবজাতিকেও দান করেছেন এবং পার্থিব জীবনের আইনে এ মালিকানার প্রতি সম্মানও দেখানো হয়েছে। বিশ্বচরাচরে মানুষ ধন-সম্পদ, জায়গা-জমি, বাড়ি-ঘর এবং আসবাব-পত্রের ক্ষণস্থায়ী মালিক হয়েও এতে একেবারে ডুবে রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা মা-লিকি ইয়াওমিদ্ দীন একথা ঘোষণা করে এ অহংকারী ও নির্বোধ মানব-সমাজকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তোমাদের এ মালিকানা, আধিপত্য ও সম্পর্ক মাত্র কয়েক দিনের এবং ক্ষণিকের। এমন দিন অতি সত্বরই আসছে, যে দিন কেউই জাহেরি মালিকও থাকবে না, কেউ কারো দাস বা কেউ কারো সেবা পাবার উপযোগীও থাকবে না। সমস্ত বস্তুর মালিকানা এক ও একক সত্তার হয়ে যাবে।
সূরা-আল-ফাতিহার প্রথম বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ্র প্রশংসা ও তা’রিফের বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর তাফসিরে একথা সুষ্পষ্ট হয়েছে যে, তা’রিফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ঈমানের মৌলিক নীতি ও আল্লাহ্র একত্ববাদের বর্ণনাও সূক্ষ্মভাবে দেয়া হয়েছে।
তৃতীয় আয়াতের তাফসিরে তা’রিফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ইসলামের বিপ্লবাত্মক মহা-উত্তম আকিদা যথা কিয়ামত ও পরকালে বর্ণনা প্রমাণসহ উপস্থিত করা হয়েছে।
এখন চতুর্থ আয়াতের বর্ণনা :
‘ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাস্তা’ঈন’-এ আয়াতের এক অংশে তা’রিফ ও প্রশংসা এবং অপর অংশে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়েছে। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ মানবজীবন তিনটি অবস্থায় অতিবাহিত হয়। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। পূর্বের তিনটি আয়াতের মধ্যে ‘আল্হাম্দু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামিন’ এবং ‘র্আরাহ্মা-নির রাহিম’ এ দু’টি আয়াতে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অতীতে সে কেবল মাত্র আল্লাহ্ তা’আলার মুখাপেক্ষী ছিল, বর্তমানেও সে একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী। অস্তিত্বহীন এক অবস্থা থেকে তিনি তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন।
তাকে সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর আকার-আকৃতি এবং বিবেক ও বুদ্ধিসম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে প্রত্যহ তার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের সুব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। অতঃপর ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্ দীন’-এর মধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ্ তা’আলারই মুখাপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না।
প্রথম তিনটি আয়াতের দ্বারা যখন একথা প্রমাণিত হলো যে, মানুষ তার জীবনের তিনটি কালেই একান্তভাবে আল্লাহ্ তা’আলার মুখাপেক্ষী, তাই সাধারণ যুক্তির চাহিদাও এই যে, ইবাদত ও তাঁরই জন্য করতে হবে। কেননা, ইবাদত যেহেতু অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে নিজস্ব অফুরন্ত কাকুতি-মিনতি নিবেদন করার নাম, সুতরাং তা পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন অন্য কোন সত্তা নেই। মূলকথা এই যে, একজন বুদ্ধিমান ও বিবেকবান ব্যক্তি মনের গভীরতা থেকেই এ স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি উচ্চারণ করছে যে, আমরা তোমাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করি না। এ মৌলিক চাহিদাই ‘ইয়্যা-কা না’বুদু’-তে বর্ণনা করা হয়েছে।
শুধু নামায রোযারই নাম ইবাদত নয়। ইমাম গাযযালি রহ. স্বীয় গ্রন্থ আরবাঈন-এ দশ প্রকার ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন। যথাÑ নামায, যাকাত, রোযা, আল কুরআন করিম তিলাওয়াত, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা’আলার স্মরণ, হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা, প্রতিবেশী এবং সাথীদের প্রাপ্য পরিশোধ করা, মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও খারাপ কাজ হতে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত পালন করা।
একই কারণে ইবাদতে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে অন্য কাকেও অংশীদার করা চলবে না। এর অর্থ হচ্ছে, কারো প্রতি ভালবাসা, আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি ভালবাসার সমতুল্য হবে না। কারো প্রতি ভয়, কারো প্রতি আশা-আকাক্সক্ষা পোষণ আল্লাহর ভয় ও তাঁর প্রতি পোষিত আশা-আকাক্সক্ষার সমতুল্য হবে না। আবার কারো ওপর একান্ত ভরসা করা, কারো আনুগত্য ও খেদমত করা, কারো কাজকে আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদতের সমতুল্য আবশ্যকীয় মনে করা, আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো নামে মানত করা, আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো সামনে স্বীয় কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করা এবং যে কাজে অন্তরের আবেগ-আকুতি প্রকাশ পায়, এমন কাজ আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর জন্য করাÑ যথা রুকু বা সেজদা করা ইত্যাদি কোনো অবস্থাতেই বৈধ হবে না।
সুরার শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের দোয়া ও আবেদনের বিষয়বস্তু এবং এক বিশেষ প্রার্থনা পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে-
৫. ইহ্দিনাস সিরা-তাল্ মুস্তাকিম। ৬. স্বিরা-ত্বাল্ লাযিনা আন্-‘আম্তা ‘আলাইহিম। ৭. গাইরিল্ মাগদ্বূবি ‘আলাইহিম ওয়া লাদ্ব্ দোয়াল্লিন। (আমিন)
অর্থাৎ, ‘আমাদিগকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত মানুষের পথ, যারা তোমার অনুগ্রহ লাভ করেছে। যে পথে তোমার অভিশপ্ত বান্দারা চলেছে, সে পথ নয় এবং ঐ সমস্ত লোকের রাস্তাও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’
এ তিনটি আয়াতে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যেমন, সরল পথের হেদায়েতের জন্য যে আবেদন এ আয়াতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, এর আবেদনকারী যেমনিভাবে সাধারণ মানুষ, সাধারণ মুমিনগণ, তেমনি আওলিয়া, গাউস-কুতুব এবং নবী-রসুলগণও বটে। নিঃসন্দেহে যাঁরা হেদায়েত প্রাপ্ত, বরং অন্যের হেদায়েতের উৎসস্বরূপ, তাঁদের পক্ষে পুনরায় সে হেদায়েতের জন্যই বারংবার প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে কী? এ প্রশ্নের উত্তর হেদায়েত শব্দের তাৎপর্য পরিপূর্ণরূপে অনুধাবন করার ওপর নির্ভরশীল।
‘ইহ্দিনাস সিরা-তাল্ মুস্তাকিম’ একটি ব্যাপক ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মানবসমাজের কোন ব্যক্তিই এর আওতার বাইরে নেই। কেননা, সরল-সঠিক পথ ব্যতীত দ্বীন-দুনিয়া কোনোটিরই উন্নতি ও সাফল্য সম্ভব নয়। দুনিয়ার আবর্তন-বিবর্তনের মধ্যেও সিরাতে-মুস্তাকিমের প্রার্থনা পরশপাথরের ন্যায়, কিন্তু মানুষ তা লক্ষ্য করে না। আয়াতের অর্থ হচ্ছে-‘আমাদিগকে সরল পথ দেখিয়ে দিন।
সরল পথ কোনটি? ‘সোজা সরল রাস্তা’ সে পথকে বলে, যাতে কোন মোড় বা ঘোরপ্যাঁচ নেই। এর অর্থ হচ্ছে, ধর্মের সে রাস্তা যাতে ‘ইফরাত বা ‘তফরিত এর-অবকাশ নেই। ইফরাতের অর্থ সীমা অতিক্রম করা এবং তফরিত অর্থ মর্জি মত কাট-ছাট করে নেয়া। এপ্রসঙ্গে আল কুরআন করিমে এরশাদ করা হয়েছে এভাবে :
অর্থাৎ- “যাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন, নবী, সিদ্দিক, শহিদ এবং সৎকর্মশীল সালেহিন।” আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে উপরোক্ত মকবুল লোকদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর নবীগণের। অতঃপর নবীগণের উম্মতের মধ্যে যাঁরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী, তাঁরা হলেন সিদ্দিক। যাঁরা দ্বীনের প্রয়োজনে স্বীয় জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন, তাঁদেরকে বলা হয় ‘শহিদ’। আর ‘সালেহিন’ হচ্ছেন যাঁরা ওয়াজিব-মুস্তাহাব প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে শরিয়তের পুরোপুরি অনুসরণ ও আমলকারী। সাধারণ পরিভাষায় এদেরকে ‘দ্বীনদার’ বলা হয়।
এ আয়াতের প্রথম অংশে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করে সরল পথের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরোক্ত চার স্তরের মানুষ যে পথে চলেছেন তাই সরল পথ। পরে শেষ আয়াতে নেতিবাচক বাক্য ব্যবহার করেও এর সমর্থন করা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘গাইরিল্ মাগদুবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াল্লিন’। (আমিন)
অর্থাৎ, “যারা আপনার অভিসম্পাতগ্রস্থ তাদের পথ নয় এবং তাদের পথও নয়, যারা পথহারা হয়েছে।”
‘মাগদুবি আলাইহিম’ বলতে ঐ সকল লোককে বুঝানো হয়েছে, যারা ধর্মের হুকুম-আহ্কামকে বুঝে-জানে, তবে স্বীয় অহমিকা ও ব্যক্তিগত স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যাঁরা আল্লাহ্ তা’আলার আদেশ মান্য করতে গাফেলতি করেছে। যেমন, সাধারণভাবে ইহুদিদের নিয়ম ছিল, সামান্য স্বার্থের জন্য দ্বীনের নিয়ম-নীতি বিসর্জন দিয়ে তারা নবী-রাসুলগণের অবমাননা পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করত না। ‘দুয়াল্লিন’ তাদেরকে বলা হয়, যারা না বুঝে অজ্ঞতার দরুন ধর্মীয় ব্যাআরে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে এবং ধর্মের সীমালঙ্ঘন করে অতিরঞ্জনের পথে অগ্রসর হয়েছ। যথাÑ নাসারাগণ। তারা নবীর শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদানের নামে এমনি বাড়াবাড়ি করেছে যে, নবীদিগকে আল্লাহ্ তা’আলার স্থানে উন্নীত করে দিয়েছে। ইহুদিদের বেলায় এটা অন্যায় এজন্য যে, তারা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের নবীদের কথা মানে নি; এমনকি অনেককে হত্যা পর্যন্ত করেছে। অপরদিকে নাসারাগণের বেলায় অতিরঞ্জন হচ্ছে এই যে, তারা নবীদিগকে আল্লাহ্ তা’আলার পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
আয়াতের সারমর্ম হচ্ছে- আমরা সে পথ চাই না, যা নফসানি উদ্দেশের অনুগত হয় এবং মন্দ কাজে উদ্বুদ্ধ করে ও ধর্মের মধ্যে সীমালঙ্ঘনের প্রতি প্ররোচিত করে। সে পথও চাই না, যে পথ অজ্ঞতা ও মুর্খতার দরুন ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সোজা-সরল পথ চাই যার মধ্যে না অতিরঞ্জন আছে, আর না কম-কসুরি আছে এবং যা নফসানি প্রভাব ও সংশয়ের ঊর্ধ্বে।
সূরা আল-ফাতেহার আয়াত সাতটির তফসির শেষ হয়েছে। এখন সমগ্র সূরার সারমর্ম হচ্ছে এই দোয়া-‘হে আল্লাহ! আমাদিগকে সরল পথ দান করুন। কেননা, সরল পথের সন্ধান লাভ করাই সবচাইতে বড় জ্ঞান ও সর্বাপেক্ষা বড় কামিয়াবি। বস্তুতঃ সরল পথের সন্ধানে ব্যর্থ হয়েই দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি ধ্বংস হয়েছে। অন্যথায় অ-মুসলমানদের মধ্যেও সৃষ্টিকর্তার পরিচয় লাভ করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করার আগ্রহ-আকুতির অভাব নেই। এজন্যই আল কুরআন করিমে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় পদ্ধতিতেই সিরাতে-মুস্তাকিমের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কোনো নেয়ামত কোনো বান্দাকে দান করার পর যখন যে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে, তখন বুঝতে হবে, যা সে পেয়েছে, এ শব্দ তা অপেক্ষা অনেক উত্তম।
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে যে, ‘কোন ব্যক্তি যদি বিশ্ব-চরাচরের সকল নেয়ামত লাভ করে এবং সেজন্য সে ‘আল্হাম্দুলিল্লাহ’ বলে, তবে বুঝতে হবে যে, সারা বিশ্বের নেয়ামতসমূহ অপেক্ষা তার আল্হামদু বলা অপেক্ষা অতি উত্তম। Ñ (কুরতুবী)
‘ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাস্তা’ঈন’-এর অর্থ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘আমরা তোমারই এবাদত করি, তুমি ব্যতীত অন্য কারো এবাদত করি না। আর তোমারই সাহায্য চাই, তুমি ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য চাই না’। (ইবনে জরীর, ইবনে আবি হাতেম)
উপসংহার :
আল কুরআন করিম সুরা আল ফাতিহা দিয়ে শুরু করা হয়েছে। এ কারণেই এই সুরার অপর নাম ‘উম্মুল ক্বুরআন’। সুরা আল ফাতিহা একটি দোয়া। আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জনের জন্য এই অন্যতম নিয়ামক। এই সুরার বিশেষত্ব হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার সাথে বান্দার সম্পর্ক। এখানে আল্লাহ্র সাথে বান্দার সম্পর্কটা অনেকটা কথোপথন। বান্দা আল্লাহ্র কাছ থেকে চাইবেন, আল্লাহ্ সাথে সাথে তা দিয়ে দেবেন। সে কারণেই এই সুরার গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা, ফজিলত অনেক বেশি।
প্রথম সমস্ত ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামাজেই সূরা আল ফাতিহা পড়তে হয়। আল কুরআন করিমের সব কয়টা সূরাই দামি তার পরেও সুরা আল ফাতিহা সব সুরা থেকে অন্যতম, এর রয়েছে পৃথক বৈশিষ্ট্য। আর যেহেতু এই সূরাটি দামি তাই এর ফজিলতও অনেক।
সর্বাধিক পরিচিত সূরা ‘সূরাতুল ফাতিহা’র ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং এ মর্যাদাপূর্ণ সূরার ফজিলত লাভ তথা সূরা ফাতিহার হক আদায় করে আল্লাহর ইবাদত করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত পালনীয় বিষয়। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকেই সূরা ফাতিহার দাবি অনুযায়ী আমল করে সে অনুযায়ী বাস্তব জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করেন। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন। আমিন।
লেখক : গবেষক, ইতিহাস লেখক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী।
islamcox56@gmail.com
সাহায্যকারী গ্রন্থসমূহ :
পবিত্র কোরআনুল করীম, মূল : তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন, হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ সাফী রহ., অনুবাদ ও সম্পাদনা : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। খাদেমুল-হারামাইন শরীফাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প কর্তৃক সংরক্ষিত । পোস্ট বক্স নং-৩৫৬১ মদীনা মোনাওয়ারা।
তাফহীমুল কুরআন, ১৯শ খণ্ড, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী র., অনুবাদ : আবদুল মান্নান তালিব। আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা। ২৩তম প্রকাশ মার্চ ২০১০।
তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন (অষ্টম খণ্ড), মূল লেখক : মুফতী মুহাম্মদ শফী এবং বাংলায় অনুবাদ মুহিউদ্দীন খান। পৃ : ৮৮৬ (পঞ্চম সংস্করণ)। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক জুন ২০০০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।
তাফসীরে ইবনে কাছীর, ইমাম আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে কাছীর র. অনুবাদ অধ্যাপক মাওলনা আখতার ফারূক, একাদশ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় সংস্করণ (রাজস্ব), আগস্ট ২০১৩।
ইসলামী বিশ্বকোষ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।