মোহাম্মদ কাইমুল ইসলাম ছোটন:
বিজয়ের মাস তুমি দিয়েছ নিতে ভয়হীন প্রশান্তিময় দীর্ঘশ্বাস।বিজয়ের ডিসেম্বর,একাত্তর থেকে দুই হাজার বিশ,৪৯ বছর।ডিসেম্বর এলেই সবকিছু পিছনে ফেলে একাত্তরের দিনগুলো বার বার উচ্চারিত হয়,সেকালের সাথে একাল মিলালে বারবার হোঁচট খেতে হয়।
বাঙ্গালী জাতির হাজারো বছরের সংগ্রামী-বিপ্লবী ইতিহাস- সিপাহী বিদ্রোহ,ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন,মাতৃভাষার জন্য লড়াই,শিক্ষা ও স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম,ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান পার করে পৌঁছেছি অনিবার্য একাত্তরের প্রান্তে।এমন ইতিহাস পৃথিবীর আর কোন দেশের নেই।৯৩ হাজার দখলদার বাহিনীর একসাথে আত্মসমর্পণ পৃথিবীর আর কোন জাতির নেই।পৃথিবীর কোন স্বাধীন দেশ তার দখলদার বাহিনীকে এইভাবে পরাজিত করতে পারে নাই।বিজয়ের এই একাত্তর অনন্য।
একাত্তর শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নই,একটি বাংলা অক্ষর যেন এক একটি বাঙ্গালীর জীবন।আমাদের জন্য বিশাল-গৌরবের জায়গা।একাত্তরে আহরিত শক্তি,আদর্শ,দর্শন এবং তার থেকে তৈরি হওয়া চেতনা আগামী শত বছরে ও বাংলাদেশকে সঠিক পথ দেখাবে এটাই মনে করি।
যখন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী আমাদের উপর অত্যাচার,শোষণ,অর্থনীতির বৈষম্যর পরিমাণ বাড়াতে থাকে।আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আধিপত্য নয়, দেশের সম্পদ লুন্ঠনে ও পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বেপরোয়া মনোভাব ধরা পড়ে। তখন বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখে মুক্ত হবার।যখন তারা আমাদের উপর প্রতিটি স্থানে হামলা শুরু করে তখন বাংলার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে, প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে।স্বপ্ন দেখে অধিকার আদায়ের।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণের উদাত্ত আহবানের মাধ্যমে বাংলার মানুষ গ্রামে-শহরে,পথে-প্রান্তরে,জলে-ডাঙ্গায়, ক্ষেতে-খামারে,বনে-জঙ্গলে,পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে।এভাবে দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী আত্নসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।তখন ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে কাক্ষিত লক্ষ্য মাত্রার বাস্তবায়ন ঘটে।যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বিশিষ্ট ফুটে ওঠে বাংলাদেশ নামের একটি সুবাসিত ফুল ।
এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর আজ সঙ্গতভাবে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দেশ।মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে আবার একাত্তরে পরাজিত গোষ্ঠীর হুমকি শুনতে হয়।
তবু বিজয়ের মাস এলেই আমাদের ভিতর আনন্দ উল্লাস অনুভব হয়।একাত্তরের ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে একটি অনন্য দিন।এতে জড়িয়ে আছে একাত্তরের শহীদদের স্মৃতি,মা-বোনরা হারিয়েছে তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ,স্বজন হারানোর আর্তনাদ,তবু তারা থেমে থাকেনি।এনে দিয়েছে নতুন উদীত সূর্য লাল-সবুজের পতাকা।অশ্রু বিসর্জনে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমাদের কাছে গৌরবের, অনুপ্রাণিত হয় আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।বিজয়ের মাসে সারা দেশ লাল-সবুজের পতাকায় ভরে যাই লাল-সবুজের ভালবাসার দেশ।১৬ ই ডিসেম্বর আসলে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনার আয়োজন করা হয়।দেখানো হয় মুক্তিযোদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত বিভিন্ন প্রমাণ্য চিত্র।যাতে তরুণ প্রজন্মরা মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠে।বিজয় আমাদের দেয় অফুরন্ত প্রেরণা,চলার পথে দিশা।তাই আমরা প্রতিবছর শপথ গ্রহণ করি নবচেতনায় উদ্দীপ্ত হয়।যাদের কাছে সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধের চেতনার বুকে ভরা বল।
বিজয়ের মাসে একটি চাওয়া,স্বাধীনতা বিরোধী কোন পরাজিত শক্তি যেন অর্থনৈতিক সামাজিক কর্মকান্ডকে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।বিজয় দিবসকে ঘিরে সকল বাঙ্গালী জাতি ঐক্যবদ্ধ হউক, দেশের কল্যাণে কাজ করুক,দেশকে সবার উর্ধ্বে রাখুক,দেশপ্রেম জাগ্রত হউক,দেশকে ভালবাসুক, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াঁক।তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জবীত হউক এটাই কাম্য।আমি একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক এর চেয়ে আমার আর গর্বের কি হতে পারে।পরিশেষে, বীরপ্রতীক তারামন বিবি সহ সকল শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি। পৃথিবীর এই আঁধার কেটে গিয়ে পৃথিবী সুস্থ হউক। সকলকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
কাইমুল ইসলাম ছোটন
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মী ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।