অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন:
ককসবাজারে জেলা শিল্পকলার জন্য কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছেনা। ককসবাজার জেলা শিল্পকলার জন্য এপরযন্ত কোন জায়গা পাওয়া যায়নি। যা পাওয়ার আশা ছিল তার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।বন্ধ হয়ে গেছে সব ক্লাস সহ অন্যন্য কার্যক্রম। এক সময় সচিব মহোদয় এসে বর্তমান শিল্পকলার জায়গার কথা বলে গিয়েছিলেন।বর্তমানে তাও হচ্ছেনা। কারন বিমান বাহিনীর জায়গার প্রয়োজনে।বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বর্তমান জেলা শিল্পকলার ভবন সহ ছয় একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিল্পকলার এই ভবনটিতে প্রায় ২৫/২৬ বছর ধরে একাডেমীর কাজ কর্ম চলে আসছিল। এখন হঠাৎ এমন প্রজ্ঞাপন আসাতে মাননীয় জেলা প্রশাসনের নির্দ্দেশে শিল্পকলার জিনিষপত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের এককোনে নিয়ে রাখা হয়েছে । এমনিতে করোনাকালীন সময়ে কিছু ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম এবং সরকারী কিছু দিবসের অনুষ্টান রেডিমেট শিল্পীদিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

যাহোক আমরা জানি ককসবাজার বিভিন্ন গুরুত্বপুরন প্রতিষ্টানের জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন। সেখানে শিল্পকলার জন্য জায়গার গুরুত্ব কম বেশী থাকলেও নাই। উল্লেখ্য এক এক সময় জেলা শিল্পকলার জন্য জায়গা বরাদ্ধের এক এক কথা শুনি। কখনও বাঁকখালীর তীরে। আবার কখনও শ্বশানঘাটে। আবার কখনো কবিতা চত্বরে ইত্যাদি ইত্যাদি। কোনটাই হচ্ছেনা একেবারে প্রথম দিকে ডায়াবেটিক হাসপাতালের পাশে যে বিল্ডিং ছিল , তা কয়েক যুগ ধরেও হস্তান্তর করা সম্ভবহয়নি। এর পরেও সেখানে সাইন বোর্ড ঝোলানো হয়েছিল। পরে প্রায় এক যুগ কোস্টগার্ড দখলে নিয়েছিল। এর পরে মেডিকেল কেম্প করে আস্তে আস্তে সেটি বিমান বাহিনীর প্রয়োজনে ছেড়ে দিতে হয়েছে। যাহোক সরকারের প্রয়োজন লাগলে অবশ্যই নেবে। কিন্তু কথা হলো, ডায়াবেটিক হাসপাতারের পাশে যে বিল্ডিং এর কথা বলছি তার কোন নাম ,খতিয়ান কোন কিছুই শিল্পকলার নামে নেই। এমনিতে এক সময় জেলা প্রশাসক একক সিন্ধান্তে বাকসের মতো একটি ত্রুটিপুর্ন বির্ল্ডি তৈরী করেছিলেন এলজিইডির প্লানে। তখন শিল্পকলার পুর্নাঙ্গ কমিটি ছিল। তাঁদের কি ভুমিকা ছিল আমি জানিনা। আবার নির্মানকাজ ত্রুটিপুর্ণ হওয়ার কারনে কনট্রাকটারের আর্নেস্ট মানিও বাজেয়াত্ব হয়েছিল বলে জানি। এ সত্বেও ককসবাজারে জেলা শিল্পকলার কর্মকান্ড কোন দিনই থেমে থাকেনি। এখন যেমন বেঙের ছাতার মতো সঙ্গঠন ।বছর কয়েক আগে তা ছিলনা। ছেলে মেয়েদের অনেক য্ত্ন করে গান বাজনা শেখানো্ হতো শিল্পকলায়। বছরে কোন সরকারি অনুষ্টান হলে ,কিংবা কোন মন্ত্রী মিনিষ্টার আসলে ,তাঁদের সৌজন্যে আনন্দ অনুষ্টানের আয়োজন হতো।তখন শিল্পকলার শিল্পীই ভরসা। শিল্পীরা বুকে হেঁটে তা করে দিতো্।এর পরে যা হতো তা “গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধুলি মাঝে” এই অবস্থা। যাহোক অনেক বড়বড় অনুষ্টান যেমন বার্মার ট্রেড উপলক্ষে সেদেশের মন্ত্রী মিনিস্টার সমন্বয়ে অনুষ্টান,নেপালের পার্লামেন্ট মেমবারের সৌজন্যে অনুষ্টান, যেকোন মন্ত্রী মিনিষ্টারের সম্মানে অনুষ্ঠান ইত্যাদী একমাত্র শিল্পকলাই করতো।এখন সে অবস্থা নেই । যেকোন সরকারি বেসরকারি অনুষ্টান যান্ত্রিক হয়ে গেছে। প্রয়োজনে ডাক দিলেই রাতের শিল্পী ,দিনের শিল্পী চলে আসে টাকার বিনিময়ে।প্রয়োজনে ঢাকা থেকে , ইন্ডিয়া থেকে পর্যন্ত চলে আসে শিল্পী। তখন এরকম ছিলনা। টাকা বিনিময়ে তো নয়ই।বরঞ্চ দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলতেন “কেন ডিনার খাওয়ানো হবেতো” ইত্যাদি কথা। আপনারা জানেন একটা রিয়েলিটি শো যা তৈরী করতে অনেক শ্রম মেধা লাগে। যাহোক কথা বাড়িয়ে লাভনেই।আসল কথা ককসবাজার জেলা শিল্পকলার জন্য কোন জায়গা এখন নাই।কেন নেই? শিল্প সংস্কৃতির প্রয়োজন সরকারের আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে সংস্কৃতির ভুমিকা অগ্রগন্য ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার তার উৎকৃষ্ঠ প্রমান। এদেশে গনতন্ত্ সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারেনি বলে আজ এই অবস্থা। সাম্প্রদায়িকতা তো চাঙ্গা হয়ে উঠবেই। বাংলাদেশের ৬৪জেলাতে প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় শিল্পকলার নিজস্ব অডিটরিয়াম রয়েছে। শুধু ককসবাজার এবং আরেকটি জেলা ছাড়া। শিল্পকলার মহাপরিচারক বারে বারে এসে বলেছেন, আপনারা আমাকে জায়গা দেন আমি সাথে সাথে কাজ শুরু করবো। কিন্তু আমরা পারিনি।শেষে কোন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন,আমরা যদি আসছে বছর জায়গা না পাই , সমুদ্রের জলে অনুষ্টান করবো। ককসবাজারে মগ তথা রাখাইন নামের লোকদের জন্য কয়েকটি ভালো ভবন সরকার দিয়েছেন। এর একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। একেবারে মৃতপ্রায় রাখাইনদের কোন কর্মকান্ড নেই। শিক্ষক আছে, বেতন চলছে। সম্পুর্ন ভবনটি নৃগোষ্ঠির নামে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।তেমনি একটি ভবন রামুতে দেওয়া হয়েছে। যা এখন অঘোরে ঘুমুচ্ছে।কোন কাজ নেই।আমি যে ভবন গুলির কথা বলছিলাম তা ছোটখাট কোন ভবন নয়।অনেক বড় ।কিন্তু তাদের কাজ কি? জেলা শিল্পকলা বছরের প্রায় সব সরকারী বেসরকারী অনুষ্টান , প্রাতিষ্টানিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে সব কিছু্ই করে থাকে।জেলা প্রশাসনের সব অনুষ্টান জেলা শিল্পকলা একাডেমীই করে থাকে।এর পরেও তাদের জায়গার কোন বরাদ্দ নেই। বছর দুয়েক আগে পাসপোর্ট অফিস, বি এস টি আই অফিস এসব এর কোন নাম গন্ধও ছিল্না। এখন সেখানে সুরম্য ভবন হয়েছে। তখন জায়গাগুলি পতিত ছিল। জেলা প্রশাসন চাইলে সেখান থেকে একটি জায়গা বরাদ্ধ দিতে পারতেন। তারা নিশ্চই দশ বছর আগে এ জায়গার প্রস্থাব রাখেন নি। বর্তমানে বালিকা মাদ্রাসার পার্শ্বে জেলা শিল্পকলার পুরাতন ভবন এর পাশে মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য ৬ একর জায়গা বরাদ্ধদেওয়া হয়েছে। আমি ঠিক জানিনা শিল্পকলার পুরাতন ভবন বিমান বাহিনীর না মুক্তিযোদ্ধাদের ।যাহোক পার্শ্ববর্তী অফিসার্স ক্লাব ও বিমান বাহিনীর প্রয়োজনে সরে যাচ্ছে। তাদের বিকল্প জায়গা রয়েছে। শুধু নেই জেলা শিল্পকলা একাডেমীর জন্য।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মের শিল্প সংস্কৃতির প্রয়োজন নেই। শুধু আবাসন নিয়ে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে উঠবে কি?জায়গাতো রয়েছে ওখানেই যদি শিল্পকলার ভবন হতো।হয়তো বিমান বাহিনীর বহুতল ভবন নির্মানে শিষেধাজ্ঞা রয়েছে।তা অনুসরণ করে একটা জায়গা দিলে কি মুক্তি যোদ্ধাদের খুব ক্ষতি হবে? প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকতে পারে ।তা অনেকাংশে সামলে নেওয়া যায়।কারন ।সব জায়গায় একি ধরনের নকশা নাও হতে পারে। কিন্তু এক একর জায়গা দিলে মুক্তি যোদ্ধা সংসদ এর কি খুব অসুবিধা হবে। আমরা বিশ বছরেরও অধিক একটি জায়গায় রয়েছি ওখানে তারা বসতি করবে ।একটা এমিক্যাবল সেটেলমেন্ট করা উচিত। কারন শিল্পসংস্কৃতি ছাড়া জাতি বাঁচতে পারেনা। কারন “শহরের জন্য সংস্কৃতি , সংস্কৃতির জন্য শহর নয়।”