আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী:
মানুষের মূল্য মনুষ্য ও পৌরুষের মধ্যে। আর জীবন মূল্যবান হয় কর্ম দ্বারা ধন-সম্পদ কিংবা পদ ও পদমর্যাদা দ্বারা নয়। পৃথিবীতে কত বড় বিত্তশালী, নির্মাণ কুশলী ও পেশাদার এসেছে আর চলে গেছে তাদের নাম-নিশানাও অবশিষ্ট নেই আজ।

মরহুম ফিরােজ আহমদ চৌধুরী ছিলেন কক্সবাজারের ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এবং এদেশের ইসলামী আন্দোলনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি মেধাবী ও ভদ্র হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি যখন ছাত্র জীবনের বিভিন্ন স্তর পাড়ি দিচ্ছিলেন, নিজের এলাকায় পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ, কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব জায়গায় তার সহজাত যােগ্যতা ও প্রতিভার স্ফুরণ ঘটতে লাগলাে।

একজন আইনজ্ঞ এ্যাডভােকেট হিসাবে সম্মানজনক পেশা নির্বাচন করে তিনি দ্বারা,ধন-মজলুমদের অধিকার আদায় এবং অসহায় মিসকিনদের সেবায় সফল ভূমিকা পালন করেন।

১৯৫৪ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলীর সদস্য পদও লাভ করেছিলেন। খতীবে আজম হযরত মাওলানা সিদ্দিকী আহমদ (রাঃ) এর সাথে খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলাে। মাওলানার সাথে ইসলামী আইন কায়েমের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছেন তিনি। উলামা, তালিবে ইলম ও ইসলামী আন্দোলনের সাহায্য সহযােগিতা এবং অভাবীদের অভাব মােচন অন্তর দিয়ে করতেন এড. ফিরোজ আহমদ চৌধুরী ।

নিজের এলাকায় একটি আদর্শ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করার বড় আগ্রহ ছিলাে তার। তাই তিনি মরহুমা মায়ের নামে ‘মাদ্রাসা উমিদিয়া’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং মাদ্রাসায় প্রাথমিক স্তর সমূহ পর্যন্ত উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন। মরহুম চৌধুরীকে আমি দ্বীনি সভা-সমাবেশে ও ইসলামী আন্দোলনের প্রােগ্রামগুলােতে বড় গুরুত্বের সাথে অংশ নিতে দেখেছি। অধিকাংশ মাহফিলে স্বীয় দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার আলােকে স্রোতাদের উপকৃত করতেন। পাশাপাশি সেই সব মাহফিলের ব্যয় খরচে সহযােগিতা করে দায়িত্বশীলদের বােঝা হালকা করতেন।

তিনি সত্য উচ্চারণে অত্যন্ত সাহসী ও স্পষ্টভাষী ছিলেন। এ লেখককে তিনি বড়ই মহব্বত ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন। বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় ছিলেন। তিনি যখন জাতীয় এসেম্বলীর সদস্য হলেন, তখন তাে প্রাপ্ত বয়স্কও হইনি। বয়সে চাচার বয়সী হওয়া সত্বেও তিনি আমার সাথে যে আচরণ করতেন তা তার ভদ্রতারই পরিচায়ক। খতীবে আজমের মতাে ব্যক্তিত্বের হাতে হাত মিলিয়ে, কাধে কাধ মিলিয়ে চলার এবং কাজ করার কারণে তার গর্বও ছিল। তাই তিনি উলামাদেরকে নিঃসংকোচে সম্বােধন করতেন।

আলহাজ্ব ফিরােজ আহমদ চৌধুরীর আকষ্মিক মৃত্যু এদেশের ইসলামী আন্দোলনের জন্য বিরাট ক্ষতি। তার সুযােগ্য সন্তানরা বিশেষতঃ স্নেহাস্পদ ভাই মৌলভী হাসসান এর কাছে আমি আশা করবাে যে, তারা মরহুমের অসম্পূর্ণ প্রজেক্টসমূহ সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা নিবেন। সৃষ্টি সেবা আর দ্বীনি শিক্ষার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে তার রূহ শান্তি পাবে।

মরহুমের শােকাকূল সন্তানদের সাথে আজ আমরাও সমব্যথী। আল্লাহ পাকের দরবারে দু’আ করি, যেন তার সকল গােনাহ মা’ফ করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন। শােক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদেরকে ধৈর্য ধরার এবং তার পদাংক অনুসরণ করে চলার তাওফীক দান করেন। আমীন।

লেখক
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া চট্টগ্রাম
বিশিষ্ট আরবী ভাষাবিদ ও সদস্য, রাবিতা আলমে আল ইসলামী।