সিবিএন ডেস্ক:

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে পারলেন না বরেণ্য অভিনেতা আব্দুল কাদের। পাড়ি জমালেন ওপারে।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আব্দুল কাদের’র মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন অঙ্গনে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাঁর মরদেহ মরদেহ হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হবে।
১৯৭২ সালে আন্তহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলেন আব্দুল কাদের।

১৯৭২-৭৪ পরপর ৩ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে পুরস্কার পাওয়া আবদুল কাদের ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।

১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তাঁর।

টেলিভিশনে আবদুল কাদের অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের (টেনাশিনাস) সহসভাপতি ছিলেন।

থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’।

১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এ অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, দিল্লি, দুবাই এবং দেশের প্রায় সব কটি জেলায় আমন্ত্রিত হয়ে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা।

টেলিভিশনে ২ হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন কাদের। এর মধ্যে- ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকআপ’, ‘ঢুলি বাড়ি’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’ ইত্যাদি।

আবদুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে চাকরি করেন। সেখানে ছিলেন ৩৫ বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর প্রথম নাটকে অভিনয়।

আব্দুল কাদের মঞ্চ ও ছোট পর্দার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমায়ও । অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতা।

বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান আব্দুল কাদের। এছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকে দুলাভাই চরিত্রেও দারুণ প্রশংসিত হন। ছিলেন ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী।

১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল কাদের। তিনি আবদুল জলিল ও আনোয়ারা খাতুনের সন্তান।