মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩ হাজার ৯৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন-অসাধারণ আইনজীবী বান্ধব ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের এই সংখ্যা সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ইতিহাসে একটা বিরল রেকর্ড।
গত ১০ ও ১১ মার্চ ২০২১-২০২২ সেশনের এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ টি পদের বিপরীতে মোট ৫১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া এই ৫১ জন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯৫ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭ হাজার ৭’শ ২১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট এবার দিয়েছেন, ৫ হাজার ৬’শ ৮৬ জন আইনজীবী।
অত্যন্ত দূরদর্শী ও ডায়নামিক ব্যক্তি হিসাবে খ্যাতি পাওয়া ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর মহান আল্লাহতালার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্মানিত ভোটারগণ আমার উপর আস্থা রেখে, আমি এবং ২০২০-২১ সালের কমিটির সম্পাদিত ধারাবাহিক কাজের মূল্যায়ন করে আবারো তাঁদের খাদেম হিসাবে আমাকে নির্বাচিত করায় সম্মানিত ভোটাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। সম্মানিত ভোটারদের এই ঋন আমি কখনো শোধরাতে পারবো না। বিজ্ঞ আইনজীবীরা আমার প্রতি যে সমর্থন দিয়েছেন, সে আস্থা ও প্রত্যাশার জায়গা’কে আরো প্রশস্ত ও মজবুত করা হবে-আমার কাজ। করোনাকালীন যথেষ্ট ভোটার ভোট দিতে আসবেন কিনা-এ আশংকা থাকা সত্বেও প্রচুর সম্মানিত ভোটার ভোট দিতে এসে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করে তুলেছে। এজন্য সম্মানিত ভোটারদের ধন্যবাদ জানাই।
অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা, অদম্য সাহসী ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এবারের নিবার্চনে নতুন কোন কাজ করার ইশতেহার, কমিটমেন্ট বা এজেন্ডা আমার ছিলোনা। বিগত ২০২০-২০২১ সেশনে করোনাকালীন সময়ে ৫ মাস সম্পূর্ণ লকডাউন থাকার পর বিজ্ঞ আইনজীবীদের কল্যান ও সুবিধার কথা চিন্তা করে যে কাজ গুলো শুরু করেছিলাম, নতুন কমিটিকে নিয়ে সেগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে এখন আমার প্রধান কাজ। বিশেষকরে ‘ভবন ২০২০’ এর কার্যাদেশ দিয়ে সেটির জন্য ফান্ড কালেক্ট করে নির্মাণ কাজ শুরু করা নতুন কমিটির জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদের কল্যান ও সুবিধার্থে কাজ করাই হবে-আমার অন্যতম লক্ষ্য ও ব্রত। যেটা আইনজীবীদের ন্যায্য হক ও তাঁদের অধিকার।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর হিংস্র থাবায় পুরো বিশ্বের মতো সারাদেশ যখন ক্ষত বিক্ষত, তখন আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনের প্রচন্ড ঝুঁকি থাকা সত্বেও প্রতিদিন সুপ্রীম কোর্ট অঙ্গনে এসে সমিতির সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছি। সমিতির দায়িত্ব নেওয়ার পর একদিনের জন্যও আমি বারে অনুপস্থিত থাকিনি। সমিতির আইনজীবী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩ টি বিখ্যাত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তারমধ্যে, একটিতে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবীদের কল্যাণে হেলথ ক্যাম্প করেছি। আইনজীবীদের কল্যাণে বুদ্ধি ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ আইনী সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে অনেক। আইনজীবী পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য পারিবারিক মিলনমেলা ‘ফ্যামিলি ডে’ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রথম স্পোর্টস এর আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমবারের মত আইনজীবীদের সন্তানদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বুকস্টল, জুতাপালিশ স্টল করা হয়েছে। সমিতির ৫ টি হলের মধ্যে মাত্র একটি হল আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বাকী ৪ টি হলও আধুনিকায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। সর্বোপরি বিগত সেশনে মাত্র এক বছরের কম সময়ের মধ্যে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অবকাঠামোগত ও অন্যান্য সার্বিক কার্যক্রম উন্নয়ন, সংস্কার ও আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করেছি।
এ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেলের বিজিত প্রার্থী এডভোকেট আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল’কে বিজয়ের পর অভিবাদন জানাতে গিয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন-ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ শুভেচ্ছা জানানোকে অনেকে জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, হতে পারে, চিরায়িত নিয়মানুযায়ী দু’জন দু’ আদর্শের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছি। এখানে জয়-পরাজয় থাকবেই। সেটা বড় কথা নয়, দিনশেষে আমারা দু’জন ভাই, আইনজীবী বন্ধু, এটাই বড়কথা। আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই, সাংঘাত নেই।
ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাঁর দ্বিতীয় সেশনের দায়িত্বপালনকলীন সময়ে আল্লাহতালার অসীম রহমত এবং বিজ্ঞ আইনজীবী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী :
স্বপ্নবাজ ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল ১৯৮৬ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহের মহেশপুর হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৮ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্ট্যান্ড সহ প্রথম বিভাগে এইসএসসি-তে উত্তীর্ণ হন তিনি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল ১৯৯২ সালে এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে কৃতিত্বের সাথে এলএল.এম সম্পন্ন করেন। আবার যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি (অনার্স) করেন ২০০৪ সালে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনস্থ দি সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে পিজিডিএল ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৫ সালে। বিশ্বের স্বনামধন্য যুক্তরাজ্যের দি অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস ইন থেকে ‘ব্যারিস্টার-এট-ল’ ডিগ্রি লাভ করেন কৃতিত্বের সাথে ২০০৬ সালে।
বিস্ময়কর প্রতিভাসম্পন্ন ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ১৯৯৫ সালে একজন নবীন আইনজীবী হিসাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে এডভোকেটশীপ সনদ লাভ করেন। তখন থেকে আইনপেশায় সুদীর্ঘ ২৬ বছর তিনি আর পেছনে তাকাননি। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন আইনজীবী হিসাবে এনরোল্ট হন। ২০০৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী হিসাবে প্রেকটিস করতে অনুমতি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
হার নামানা, সাধারণ আইনজীবীদের অত্যন্ত সুহৃদ, মেধা ও মননে একজন সুশীল ব্যক্তিত্ব, সদা সহাস্যমুখ, নির্ভীক, আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সদা ব্রত ও আধুনিক ধারার সফল কারিগর, মুক্ত মনের আইনজীবী ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতি’র আজীবন সদস্য। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ আইন সমিতি, ব্যারিস্টার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএল.এম ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন (ডুলা), ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতি, দক্ষিণবঙ্গ আইনজীবী সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েসন, কমনওয়েলথ ল’ইয়ার এসোসিয়েন, ল’এশিয়া’র সদস্য সহ আইন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও আঞ্চলিক ফোরামের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
কর্মপাগল ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, খুলনা ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব সহ অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, শিক্ষা ও কল্যানকর প্রতিষ্ঠানের সদস্য। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের কুটনীতিক হিসাবে তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত স্বজ্জন, অমায়িক ও সদালাপী ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল অগ্রণী ব্যাংক এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ফারজানা বেগম’কে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে বেচে নিয়েছেন। আইনজীবী নেতা ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র ব্যাংকার ফারজানা বেগম দম্পতি ২ কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী। তাঁদের প্রথম কন্যা যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত কিংস কলেজে আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত এবং কনিষ্ঠ কন্যা দেশের স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ‘সানসবীম’ এ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ২০০৭ সালে তাঁর মমতাময়ী মা’কে হারান। গর্বিত পিতা এখনো ছায়া দিয়ে কৃতিসন্তান ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল মায়ার জালে আগলে রাখেন সবসময়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।