সিবিএন ডেস্ক:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের জন্য সংকটে পড়েছেন। এ নিয়ে গত দু’বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো একই সমস্যা হচ্ছে।

ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বা তার প্রতিপক্ষ- কেউই আসলে ক্ষমতায় যাবার মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। আর এর মধ্যেই কিংমেকার হয়ে উঠেছে রাম নামে একটি ইসলামপন্থী আরব দল, যারা মূলত ইউনাইটেড আরব লিস্ট হিসেবেও পরিচিত। দলটি এবারের নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে- যা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতায় রাখা বা ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে।

জানা গেছে, রক্ষণশীল মুসলিম মানসুর আব্বাসের নেতৃত্বে রাম দলটি মূলত ফিলিস্তিনের গাজা শাসন করা হামাসের ধর্মীয় ভাবধারায় গড়ে ওঠা একটি ইসলামপন্থী দল। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি শুরু থেকে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট আসন পেয়ে আসছে।
যদিও ২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ। পরে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।

২০২০ সালে ইসরায়েলের আরব রাজনৈতিক দলগুলোর জোট- জয়েন্ট আরব লিস্টের অংশ ছিল যারা নজিরবিহীনভাবে ১৫টি আসন পেয়েছে পার্লামেন্টে। তবে একাই নির্বাচনে লড়ার জন্য চলতি বছরের ২৮শে জানুয়ারি ওই জোট ছেড়ে আসে রাম।

আরব সম্প্রদায়ের সামগ্রিক দরকষাকষির ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেললেও এ সিদ্ধান্ত দলটির ‘কিংমেকার’ হয়ে ওঠার পথও তৈরি করে দিয়েছে।

যার নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে উঠছে সেই দল
৪৬ বছর বয়সী মানসুর আব্বাস হলেন দলটির মূল ব্যক্তি। ইসরায়েলের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে তিনি এখন রাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছেন। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা দন্ত চিকিৎসক তিনি।

যদিও পরে হাইফা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৯ সালে তিনি ইউনাইটেড আরব লিস্টের নেতা মনোনীত হন এবং ওই জোটের অংশ হিসেবে পার্লামেন্টেও নির্বাচিত হন। অবশ্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার লিকুদ পার্টির সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি দলের মধ্যে বিভক্তিও তৈরি করেন।

ইসরায়েলে আরব রাজনীতি
ইসরায়েলের প্রায় নব্বই লাখ মানুষের মধ্যে উনিশ লাখের মতো আরব আছেন যারা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের সীমানায় থেকে গিয়েছিলেন। ওই প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছিলো অথবা তাদের বহিষ্কার করা হয়েছিলো।

যদিও ইসরায়েলের নাগরিক এমন অনেক আরব নিজেদের ফিলিস্তিনি বা ইসরায়েলি ফিলিস্তিনি হিসেবে পরিচিত হতে পছন্দ করেন আর অন্যরা নিজেদের ইসরায়েলি আরব হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। ইসরায়েলের আরবদের বেশিরভাগই সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী আর দ্বিতীয় বড় অংশটি খ্রিস্টান।

ইসরায়েলের দশ শতাংশ মুসলিম আরব বেদুইন গোত্র থেকে আসা। ১৯৪৯ সালের নির্বাচনে তারা অংশ নিয়েছিলো। আরব রাজনৈতিক দলগুলো দেশটিতে আরবদের সমান অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে এবং একই সাথে ফিলিস্তিনের প্রতিও তাদের সমর্থন আছে।

রামকে নিয়ে নানা সমীকরণ
গত বছর নেতানিয়াহুর প্রতিপক্ষ বেনি গান্টজ আরব দলগুলোর সাথে জোট করে সরকার গঠনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর আগে নেতানিয়াহু নিজেও রামের সাথে জোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদিও প্রচারণায় তার সুর ছিলো নরম।

এখন যদি তারা একটি জোট করতে পারেন তাহলে নেতানিয়াহু ও আব্বাস- দু’জনেই লাভবান হবেন। যদিও সংবাদদাতারা বলছেন, নেতানিয়াহুর অন্য শরীকদের সাথে তারা কিভাবে একযোগে কাজ করবেন তা এখনো পরিষ্কার নয়।

জেরুজালেমে বিবিসি সংবাদদাতা অবশ্য বলছেন, কোয়ালিশনে না থেকেও নেতানিয়াহুকে সমর্থন দেয়ার চুক্তি করতে পারে রাম। কিন্তু চুক্তি বা সমঝোতা যাই হোক- আব্বাস এখন নিশ্চিত যে দরকষাকষির সুযোগ তার হাতে।

তিনি বলেছেন ইসরায়েলের আরব জনগোষ্ঠীর জন্য সেরা সিদ্ধান্তটিই তিনি নেবেন। যদিও অনেকেই এখনো এ নিয়ে নিশ্চিত নন। জেরুজালেম অধিকার কর্মী ইতাফ আওয়াদ বলছেন, লিকুদ ও রাম দলের জোট ফিলিস্তিনিদের জন্য ভালো হবে না।