ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম (লাবীন)

বিশ্ব আজ এক বিরূপ পরিস্থিতিতে। করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত বিশ্বের প্রতিটি দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে এমনই বিরূপ পরিস্থিতে চলে যাচ্ছে যে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসকসহ পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে এবং হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে যাতে প্রাথমিক চিকিৎসার ঘাটতি না হয় সে লক্ষ্যেই এই দিক-নির্দেশনামূলক প্রতিবেদন। লক্ষ্য একটাই, যাতে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত কোনো রোগী প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে বসে প্রাথমিক এবং ক্ষেত্রে বিশেষে (হাসপাতাল বা ক্লিনিক এ জায়গা না পেলে) সঠিক পদ্ধতিতে বাড়িতে চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে, এরই মাঝে যোগযোগ রাখতে হবে বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সাথে- যাতে প্রয়োজনে রোগীকে সেখানে স্থানান্তর করা যায়।

প্রারম্ভিক কথা

1. গত একটি বছর ধরে মানবজাতির উপর মারনাস্ত্র হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে Corona Virus Disease-19 (Covid-19)। ২০২০ সালের বর্তমান সময়ে এর প্রভাব এবং প্রাদুর্ভাব যে পর্যায়ে ছিল এই ২০২১ সালের এই সময়ে তা সকল স্তর অতিক্রম করেছে।
2. ২০২০ এ এটি যে তীব্রতা বা ইনফেকটিভিটি নিয়ে এসেছিলো এবার তা আরো বহুগুণে বেড়ে আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে ব্যাপক আকারে আঘাত হানছে। এর মূল কারণ হলো এই ভাইরাসের বারবার স্বভাবগত পরিবর্তন- যা মূল ভাইরাসটির জীনের (Gene) এর ঘনঘন রূপ পরিবর্তনের ফলে সংঘটিত হচ্ছে। এই বিষয়টিই হলো মিউটেশন (Mutation)। একটা সময় সমগ্র বিশ্বে যখন এর প্রাদুর্ভাব প্রায় কমে আসছিলো, ঠিক তখনই ইউরোপের একটি দেশ ইংল্যান্ডে (ইউ.কে) এরই আরেকটি রূপ বা স্ট্রেইন (Strain) ধরা পড়ে- যার ইনফেকশন ছড়ানোর হার এবং এর প্রভাবে মারাত্মক লক্ষণাদিও আলাদাভাবে ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে এটি সেখান থেকে প্রায় সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে মূলত ৩ ধরনের কভিড-১৯ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ১. ব্রাজিলিয়ান, ২. সাউথ আফ্রিকান, ৩. ইউ.কে (যুক্তরাজ্য) প্রকৃতির। এদের ভিতর ১ ও ২ নং এর সংক্রামণ করার ক্ষমতা ইনফেকটিভিটি (Infectivity) মোটামুটি কম। তবে ইউকে ভ্যারাইটির দ্রুত ছড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এই যে ভাইরাসের প্রভাবে দ্রুত ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ছে তা মূলতঃ দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসের মতো (৮১%) [সূত্র: ICDDRB]। তবে অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মত হলো এটি মূলতঃ ইউকে ভ্যারাইটির আচরণের সাথে মিলে যায়।
3. এরূপ বিরূপ পরিস্থিতিতে যাতে সকলে নিজ গৃহে থেকে এই মরনঘাতি অসুখ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন- সেজন্যই বস্ততঃ এই দিক নির্দেশনামূলক প্রতিবেদন।

লক্ষণাদি

1. প্রধানত কভিড-১৯ একটি ভাইরাস জনিত রোগ। তাই এর প্রাথমিক লক্ষণাদি ঠিক অন্যান্য ভাইরাস রোগের লক্ষণের মতই।
2. প্রাথমিক লক্ষণাদি: লক্ষণ- জ্বর/শুকনা কাশি/গাঁ ব্যাথা/মাথা ব্যাথা/খাবারে অরুচি/খাবারের স্বাদ না পাওয়া/বমিবমি ভাব/বমি হওয়া/বিষণ্ণতা
3. একটু আলাদ বা ব্যতিক্রম লক্ষণাদি:
২০২০ সালে ব্যতিক্রম লক্ষণসমূহ খুব একটা প্রকাশ পায়নি। তবে করোনার এই ২য় ঢেউয়ে এবার ব্যতিক্রম লক্ষণাদি অত্যন্ত প্রকট আকারে প্রকাশ পাচ্ছে।
 হালকা জ্বর বা গায়ে ব্যথার সাথে পেটের অসুখ বেশি দেখা যাচ্ছে; বিশেষ করে পাতলা পায়খানা।
 শুধুমাত্র হালকা কাশি অথবা শুধুমাত্র ক্লান্ত বা অবসাদ এবং সাথে গা ম্যাজম্যাজ করা অথবা খাবারে স্বাদ না পাওয়া।
 হালকা জ্বরসহ মেরুদণ্ডে ব্যথা।
 তবে এ বছর অনেক রোগী রয়েছেন যাদের কোনও লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে না।
 অনেকে শুধুমাত্র অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্তের লক্ষণাদি নিয়েও কভিড-১৯ পজেটিভ হচ্ছেন। অনেক রোগী দেখা যাচ্ছে যেখানে যারা যে রোগে ভুগছেন বা চলমান তাদের সেই রোগসমূহের লক্ষণাদি নতুনভাবে আবার তীব্র আকারে প্রকাশ পাচ্ছে।
 অনেকে শুধুমাত্র হালকা জ্বরসহ হেঁচকি (Hiccup) নিয়েও আসেন।
মূলকথা হলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দ্রুত শনাক্ত হওয়া জরুরি। অর্থাৎ প্রথম দিকে শনাক্ত হলে চিকিৎসা দ্রুত দেয়া সম্ভব হয় বিধায় জটিলতা যেমন কমে যায় তেমনী মৃত্যু হারও অনেক কম।

পরীক্ষাদি

১. মনে রাখতে হবে যত দ্রুত রোগ নির্ণীত হবে, ততই তার জন্য মঙ্গল। তাই সামান্য আকারে কভিড-১৯ এর লক্ষণাদি প্রকাশ পেলেই নিকটস্থ এবং সুবিধাজনক স্থানে RT-PCR পদ্ধতিতে পরীক্ষা করাতে হবে জরুরিভিত্তিতে।
২. RT-PCR পজেটিভ হলে রোগী র লক্ষণাদি পর্যবেক্ষণ করে নিম্নোক্ত পরীক্ষাসমূহ করতে হবে।
(ক) CBC
(খ) D-Dimer
(গ) CRP
(ঘ) S. Ferretin
(ঙ) LDH
প্রয়োজনবোধে গ, ঘ, ঙ এর মাঝে শুধু CRP করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে-
(ক) S. Creatinine
(খ) Urine For RIE
(গ) RBS
(ঘ) NS1 (ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ বিশেষ করে জ্বর থাকলে প্রথম ৪ দিন)
Anti Dengue (IgM, IgG): প্রথম সপ্তাহের পর বিরতি দিয়ে পুনরায় লক্ষণাদি প্রকাশ পেলে।
৩. রোগীর যদি কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে:
Plain X-ray Chest (CXR) [Digital]
[টাকার স্বল্পতা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে CT না করতে পারলে]

CXR এ কিছু দৃষ্টি গোচর হলে বা রোগীর কাশি বা শ্বাসকষ্ট প্রকট হলে:
High Resolution CT Scan [HRCT]

৪. কভিড-১৯ পজেটিভ এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস থাকলে
 ক্রমিক ২ ও ৩
 FBS with 2 hr ABF
 Urine For RE
 S. Creatinine
 ACR
 eGFR (প্রয়োজন বোধে)
৫. কভিড-১৯ পজেটিভ এর পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ থাকলে
 ক্রমিক ২ ও ৩
 Lipid Profile (Fasting)
 ECG
 ECHO (প্রয়োজন বোধে)
৬. কভিড-১৯ পজেটিভ এর পাশাপাশি অ্যাজমা থাকলে
 ক্রমিক ২ ও ৩
 Ig E
 Spiromestry (প্রয়োজন বোধে)
৭. কভিড-১৯ পজেটিভ এর পাশাপাশি কিড্নি ডিজিজ থাকলে
 ক্রমিক ২ ও ৩
 Urine For RIE
 S. Creatinine
 eGFR
 ACR
 S. Albumian
 S. Electrolyte
 USG of KUB
৮. কভিড-১৯ পজেটিভ এবং পাতলা পায়খানা থাকলে
 Stool for RIE
 S. Electrolyte
৯. কভিড-১৯ পজেটিভ এবং স্ট্রোক বা ক্যান্সার
 স্ব স্ব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষাদিসমূহ

লক্ষণ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা (টেস্ট পজেটিভ হওয়ার পূর্বে):

• শুধু জ্বর থাকলে (১০০.৪ F এর উপরে থাকলে)
Tab. Napa Extened (665 mg)
(১ + ১ + ১) ভরাপেটে- জ্বর থাকা পর্যন্ত। ওজন বেশি থাকলে Tab. Napa (500 mg) (২+২+২)
• সর্দি/হালকা কাশি/এলার্জি থাকলে
Tab. Fexo-120
(১ + ০ + ১) প্রয়োজন মতো
Tab. Monas-10
(০ + ০ + ১) ১ মাস (যাদের এ্যাজমা বা ফুসফুসের রোগের পূর্ব ইতিহাস আছে তারা দীর্ঘদিন খাবেন)।
• পাতলা পায়খানা/বদহজম
Tab. Femotid/Yamadin (20 mg)
(১+ ০ + ১) খাবারের ২০ মিনিট পূর্বে- প্রয়োজন মতো
∑ ওরস্যালাইন (প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস)
বি:দ্র: বর্তমান গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, Tab. Femotid/Yamadin (20 mg) ঔষধ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন রোগীকে প্রথম ৪/৫ দিনের মাঝে দেয়া হয় তাহলে জটিলতা কম পরিলক্ষিত হয়।
• পাতলা পায়খানা দীর্ঘসময় হলে
Tab. AZ/Zimax/Azith (500 mg)
(০ + ০ + ১) ৫ দিন
Tab. Femotid/Yamadin (20 mg)
(১ + ০ + ১) খাবারের ২০ মিনিট পূর্বে – প্রয়োজন মতো
∑ স্যালাইন পানি (প্রেসার চেক করে)/রাইস স্যালাইন/ডাবের পানি
∑ স্বাভাবিক খাবার
• যদি পাতলা পায়খানার হার বেড়ে যায় তাহলে উপরের ঔষধের পাশাপাশি
Tab. Recitril (100 mg)
(১ + ১ + ১) প্রয়োজন মতো
• যদি পাতলা পায়খানা ও বদ হজম একত্রে থাকে উপরের চিকিৎসার পাশাপাশি
Tab. zymet/suzyme
(১ + ১ + ১) খাবারের পূর্বে- প্রয়োজন মতো
• যদি বমি বমি ভাব বা বমি হয়
Tab. Emistat (8mg)
(১ + ১ + ১) প্রয়োজন মতো
• বমি ও পায়খানা বেশি হলে, শরীরে পানি শূন্যতার পাশাপাশি সেরাম ইলেকট্রোলাইট (সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি) এর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই তৎক্ষণাত S. Electrolyte পরীক্ষা করে স্যালাইন এর ধরণ নির্ধারণ পূর্বক স্যালাইন দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত 0.9% নরমাল স্যালাইন প্রয়োগই যথেষ্ট। তবে রিপোর্ট-এ সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতি পরিলক্ষিত হলে Inj. Koloride বা কলেরা স্যালাইন প্রয়োগ বুদ্ধিমানের কাজ। এ ক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশের কোন প্রশিক্ষিত নার্স বা ক্লিনিকের সাথে যোগযোগ রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন বোধে হাতে ক্যানুলা (Canula) লাগাতে হবে। [ক্যানুলা হলো শরীরের শিরায় স্যালাইন বা ইনজেকশন প্রবেশের এমন এক পদ্ধতি যেখানে স্যালাইন শেষ হলে এর মুখ ছিপি দিয়ে বন্ধ করা যায়। আবার প্রয়োজনের সময় ছিপি খুলে পুনরায় স্যালাইন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ প্রয়োগ করা যায়]।
• যদি GERD (Gasto Oesophageal Refux Disease) বা যখন টক ঢেঁকুরসহ খাবার প্রতিনিয়ত উপরের দিকে ঠেলে উঠতে চায় এমন হলে,
∑ Tab. Rabe (20 mg) অথবা Tab. Pantonix (20 mg) অথবা Cap. Seclo (20 mg) দিতে হবে।
(১ + ০ + ১) (খাবারের পূর্বে)
∑ Tab. Motigut
(১ + ০ + ১) (খাবারের পূর্বে)
• যদি টকটক পানি মুখে চলে আসে বা বুক জ্বলে যায়; তখন বুঝতে হবে Acid এর পরিমাণ ইতোপূর্বেই বেড়ে গেছে। তাই এক্ষেত্রে-
Tab. Entacyd Plus
(২ + ২ + ২)
অথবা
Susp. Gaviscol
২ চামুচ ৩ বার (খাবারের পর)

এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপদেশসমূহ কঠিনভাবে মেনে চলতে হবে।

 এই সময় আঁশ জাতীয় খাবার খাবেন না।
 দুধ জাতীয় খাবার বন্ধ রাখবেন।
 সহজ লঘুপাচ্য খাবার গ্রহণ করতে হবে।
 টক, বাসী, ঝাল, ভাজাপোড়া, তেলজাতীয় খাবার, মিষ্টি, চা, কফি, ধুমপান, তামাক পরিহার করতে হবে।
 খাবার সময় নিয়ে মুখে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে- যাতে পর্যাপ্ত লালা খাবারের সাথে মিশ্রিত হতে পারে।
 খাবার গ্রহণের সময় পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
 খাবার গ্রহণের অন্তত ২০মি. পর পর্যন্ত পানি পান এবং তারও আধাঘণ্টা পর ফলমূল খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে সন্ধ্যার পর কোনো ফলমূল গ্রহণ সঠিক নয়।
 রাতের খাবার গ্রহণের পর কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা পর বিছানায় যেতে হবে। রাতের খাবারের পর হালকা একটু হটাহাটি করা উত্তম।
 উপরের লক্ষণসমূহের সাথে যদি হিস্কি (Hiccough) থাকে তাহলে প্রথমেই
∑ Tab. Motigut বা Omidon দিনে ২/৩ বার গ্রহণ করে দেখা যেতে পারে।

তবে না কমলে:∑
∑ Tab. Beclo-5 (প্রয়োজনবোধে ডোজ বাড়ানো যেতে পারে)
(১ + ০ + ১)
** সাথে উপরের উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে।

মনে রাখবেন ঔষধ নয় পথ্যই সমাধান।
খ. করোনা চিকিৎসায় প্রচলিত প্রেসক্রিপশনস (টেস্ট পজেটিভ জানার পর)

প্রথম প্রচলিত প্রেসক্রিপশন

1. Tab. Ivera/Scabo/Ibac (6 mg)
৩টি ট্যাবলেট একত্রে খালি পেটে সকালে – ০১ দিন
* ৬০ কেজি  ৩টি ট্যাবলেট
* ৬০ কেজি  ২টি ট্যাবলেট
* আক্রান্তের ২/৩ দিনের মধ্যে খেলে ভালো
2. Tab. Doxicap
(১ + ০ + ১) ৭ থেকে ১০ দিন
অথবা
Tab. AZ/Zimax/Azith (500 mg)
(০ + ০ + ১) ৭ থেকে ১০ দিন
3. Tab. Fexo-120
(১ + ০ + ০) ১০ দিন
4. Tab. Monus-10
(০ + ০ + ১) ১ মাস
5. Tab. D-Rise (20000 – 40000 I.U)
(০ + ১ + ০) -১টা করে প্রতি সপ্তাহে ৬ সপ্তাহ। ক্ষেত্র বিশেষ ১টি করে একদিন পরপর ৫ দিন দেয়া যেতে পারে।
পাশাপাশি দুপুরের রোদ ২০ মি গায়ে লাগালে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
6. Tab. Xinc B অথবা Xinc (20 mg)
(১+০+১) ২ সপ্তাহ
7. Tab. Femotid/Yamadin (20 mg)
(১+০+১) ২ সপ্তাহ
8. Tab. Ceevit Forte (1000 mg)
(১+০+০) – খাওয়ার পরে, ½ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাবেন।

মনে রাখবেন যত কম ঔষধ তত ভালো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঔষধ প্রেসক্রিপশনে না লিখলে রোগী মানসিক ভাবে অসহায় বোধ করেন। তাই প্রচলিত চিকিৎসা উপরে দেওয়া হলো তবে মনে রাখতে হবে যদি বমি বমি ভাব বা বমি বেশি হয় তাহলে ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত ক্রমিকের ঔষধগুলো বন্ধ রাখা যেতে পারে।

দ্বিতীয় প্রচলিত প্রেসক্রিপশন

করোনায় আক্রান্ত এবং পাশাপাশি যাদের Co-morbidity অর্থাৎ অন্য কোন জটিল রোগ (যেমন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, কিডনী ডিজিজ, হার্ট ফেইলর, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, বাইপাস বা রিং পড়ানো, অপুষ্টিজনিত রোগ বা জটিল ইনফেকশনে আক্রান্ত, লিভার রোগ ইত্যাদি) রয়েছে তাদের জন্য নিম্নোক্ত প্রেসক্রিপশন আলাদা গুরুত্ব বহন করে। মনে রাখতে হবে বর্তমানে যে বিরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে অর্থাৎ ICU সংকট এবং হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসা নেয়া সন্তোসজনক নয়- সেখানে নিজেদের ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে নিজেদেরই করে রাখতে হবে। এ প্রত্রিয়ায় উপরে বর্ণিত রেগীরা বেশি বিপদে পড়ছেন। তাই হতাশ না হয়ে যাতে ঘরে থেকে উপযুক্ত চিকিৎসা নেয়া যায়, সে লক্ষ্যেই এ নির্দেশনা প্রতিবেদন।

প্রাথমিকভাবে ১ম নির্দেশিত প্রেসক্রিপশনের ঔষধগুলো শুরু করে রোগীকে মনিটরিং করতে হবে। বর্ণিত পরীক্ষাদি ও পাল্স অক্সিমিটারের রিডিং অনুযায়ী ২য় ধাপের চিকিৎসা বাড়িতে শুরু করা যেতে পারে, যখন কোনো হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না। করণীয়:
১. অনলাইন থেকে ‘জরুরি অক্সিজেন সরবরাহ’ সার্চ দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করা।
২. বাড়ির অতি নিকটে কোনো অনুমোদিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সাথে যোগাযোগ করে একজন চিকিৎসা সহকারী (Nurse)-এর সাথে যোগাযোগ রাখা যেন প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর হাতে ক্যানুলা করে যাবেন এবং সময় অনুযায়ী নিম্নোক্ত প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীর শরীরে ঔষধ প্রয়োগ করবেন।
৩. Co-morbidity সহ কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী জটিলতাবিহীন অবস্থায় থাকেন তখন নিম্নোক্ত প্রেসক্রিপশন তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
• Tab. Favinil/Faviravir/Viraflu (200 mg) [AntiViral: flavipiravir]
(৮ + ০ + ৮) ১ম দিন, [৮টি ট্যাবলেট খেতে না পারলে (৪ + ০ + ৪)]
এরপর (৩+০+৩) ৯ দিন।
• ১ম প্রেসক্রিপশনের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ক্রমিক
• Inj. Clexane (40mg) [Enoxaparin]
1 PFS চামড়ার নিচে দিনে দু’বার – ৭ থেকে ১০ দিন।
এরপর Tab. Rivarox (5 অথবা 10) [(Rivaroxaban)] [কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অথবা স্ট্রোকের ঝুকি কমায়]
(০ + ০ + ১) – ১ মাস

তৃতীয় প্রচলিত প্রেসক্রিপশন

কভিড-১৯ পজেটিভ, ডায়াবেটিস অথবা হার্ট ফেইলর, সাথে জ্বর বা কাশি অথবা HRCT-তে ফুসফুস মাঝারীভাবে আক্রান্ত অথবা কভিড-১৯ জনিত কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার ৭ দিন পর)
• Tab Cefoclav/Axim cv (500/125 mg)
(১ + ০ + ১) – ৭ দিন
• Tab. Pulfibro (Pirfenidone) 267 mg [অজ্ঞাত কারণে ফুসফুসকে Fibrosis থেকে রক্ষাকারী ঔষধ]
(১ + ১ + ১) – চলবে
• Tab. Predixa/Methigic (Steroid) (4mg)
(৪ + ০ + ০) – ৭ দিন
(৩ + ০ + ০) – ৭ দিন
(২ + ০ + ০) – ৭ দিন
(১ + ০ + ০) – ৭ দিন
• Tab. Viscotin/Mucomist DT 600 (Acetyl cysteine)
(১ + ০ + ১) – পানিতে মিশিয়ে- কাশি বেশি হলে বা থাকলে।
• Tab. Delpino/Ivanor/Ivaprex 5 (Ivabrodin: হার্ট ফেইলর থাকলে)
(১/২ + ০ + ১/২) – চলবে
• Tab. Rabe (20 mg)
(১ + ০ + ১) – খাবারের পূর্ব- Steroid ঔষধ চলা পর্যন্ত।
• প্রথম প্রেসক্রিপশনের ৩ থেকে ৮ ক্রমিক (প্রয়োজন অনুযায়ী)

চতুর্থ প্রচলিত প্রেসক্রিপশন

• কভিড-১৯ এর লক্ষণাদি (মাঝারী বা তীব্র)
• তীব্র অরুচি অথবা ডায়ারিয়া বা বমির কারণে পানি শূন্যতা
• প্রথম ক’দিন অতিবাহিত হবার পর পুনরায় তীব্রতা বেড়ে যাওয়া
• অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, বাইপাস জাতীয় Co-morbidity থাকলে।
• পালস অক্সিমেট্রিতে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ধীরে ধীরে কমে যাওয়া (৯৫ এর নিচে)। পাশাপাশি নিকটস্থ কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া।
উপরোক্ত কারণে রোগীকে বাড়িতে রেখে নিম্নোক্ত উপায়ে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরবর্তীতে সুযোগ পাওয়া গেলে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:
∑ অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্যে মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন দেয়া।
∑ ঘনঘন কমপরিমানে প্রোটিনযুক্ত তরল জাতীয় খাবার দেয়া।
∑ জ্বর বেশি হলে Suppository দেয়া এবং শরীর Sponging করা।
∑ মেডিসিনসমূহ:
• Inj. 0.9% Normal Saling- 1000 c.c [বমি বা খেতে না পারলে অথবা পানি শূন্যতা হলে]
শিরায় (ক্যানুলা করে নিতে হবে) প্রতি মিনিটে ৩০ ফোঁটা করে।
• Inj. Iventi/Moxibac/Moxquin 400 IV [Moxifloxacin (এন্টিবায়োটিক)]
৪০০ মি. গ্রাম শিরা পথে দিতে হবে (মিনিটে ১০ ফোঁটা করে)। দিনে ১ বার ৭ দিন।
• Inj. Carbanem/I-Penam/Merobac/Meroren 1gm/vial
[Meropenem: Antibiotic]
১৫-৩০ মিনিট ধরে ধীরে ধীরে, শিরা পথে ১২ ঘণ্টা পর পর ∑ ৭ দিন
• Inj. Dexa/Decason [Dexamethasone] (0.5mg)
অ্যাম্পুল শিরাপথে ১২ ঘণ্টা পরপর – ৭-১০ দিন
• Inj. Progut/Maxpro [Esomeprazole] (40mg/Vial)
১ ভায়াল ১২ ঘণ্টা পরপর শিরা পথে- ৭-১০ দিন
• Inj. Clexane (40mg) [Enoxaparin]
1 PFS চামড়ার নিচে দিনে দু’বার – ৭ থেকে ১০ দিন।
এরপর Tab. Rivarox (5 অথবা 10) [Rivaroxaban] [কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অথবা স্ট্রোকের ঝুকি কমায়]
(০ + ০ + ১) – ১ মাস
• Inj. Remivir/Ninavir – (100mg)
১ম দিন: ২টি ইনফিউশন ব্যাগ
৩০-১২০ মিনিট ধরে দিতে হবে।
২য় দিন: ১টি ইনফিউশন ব্যাগ একই প্রক্রিয়া থেকে
৫ম দিন:
[তবে এই ইনজেকশনটি হাসপাতাল ছাড়া অন্যস্থানে দেয়া নিরাপদ না]

জটিলতা

 করোনায় আক্রান্ত রোগী কে মাঝে মাঝে পালস্ অক্সিমিটার দিয়ে দেখতে হবে মাত্রা ৯৫ এর নিচে এলো কিনা। যদি নিচে আসে এবং রোগী শ্বাসকষ্ট কিছুটা অনুভব করে তবে চিকিৎসক বা হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হবে।
 যদি ভর্তি হতে না পারা যায়, তাহলে দিনে ৫/৬ ঘণ্টা উপুর হয়ে শুয়ে থাকলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।
 আবার সামর্থ থাকলে বাসায় বহনযোগ্য অক্সিজেন সিলিন্ডারও রাখা যেতে পারে।
 বর্তমানে ডেক্সা মেথাসন যা এক প্রকার স্টেরয়েড হরমোন এর প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে। আসল কথা হলো রোগী র পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে অথবা অতীত ইতিহাস না জেনে অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনেক্রমেই এই ঔষধ প্রয়োগ সঠিক নয়। দেখা যাবে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে।
 যে সমস্ত রোগীর বমি অথবা পাতলা পায়খানার লক্ষণ বেশি তারা ইলেক্ট্রলাইট ইমব্যালেন্স (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড এর ঘাটতি)-এ পতিত হয় তাই তখন হাপাতালে যাবার উপায় না থাকে তাহলে নিম্নের পরিক্ষা দুটি করাতে হবে।
১. S.Electrolyte
২. S.Creatinine
 পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর সম্ভব হলে টেলিফোনের মাধ্যমে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
 কভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর যদি অন্য কোন অসুখ থাকে তাহলে তাকে পূর্ণচিকিৎসা যথাযথভাবে নিতে হবে। তা না হলে জটিলতা আরো জটিলতর হবে।
 একটি কথা মনে রাখতে হবে, যতদ্রুত কভিড-১৯ শনাক্ত হবে- ততই তার জন্য মঙ্গল। অর্থাৎ দ্রুত শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু এবং জটিলতা ও তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়া। তাই কভিড-১৯ পরীক্ষা শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

দীর্ঘমেয়াদী: করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সর্বাধিক আক্রান্ত রোগীর প্রথম অভিযোগ তীব্রভাবে দুর্বলতা এবং অবসন্নতা (Fatigul)
• Post Covid Syndrom: নানা উপসর্গ নিয়ে বারবার ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হওয়া। যিনি যে রোগে ভুগছেন বা ভুগেছিলেন সেই সব রোগের লক্ষণাদি পুনরায় প্রকাশ পাওয়া বা তীব্র আকারে ফিরে আসা।

কভিড-১৯ ও অক্সিজেন: কিছু কথা (সংগৃহীত)

করোনাকালে যে নতুন শব্দগুলোর সঙ্গে মানুষ এবার বেশি করে পরিচিত হলো, তার একটি ‘হাইপোক্সিয়া’। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় হাইপোক্সিয়া বলা হয়। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুষ্ঠু কার্যক্রমের জন্য দরকার অক্সিজেন। ফুসফুসের শ্বসনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা এই অক্সিজেন বহন করে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। আর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই ঘরে ঘরে পালস অক্সিমিটার রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। কভিড-১৯-এর অন্যতম উপসর্গ শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া। তবে শুধু কভিড-১৯ নয়, অন্যান্য অসুখেও হাইপোক্সিয়া হতে পারে। এটি কিন্তু কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ।

কেন হয়
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্র ৯৭ থেকে ১০০ শতাংশ থাকা উচিত। ফুসফুসে সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া হাইপোক্সিয়ার অন্যতম কারণ। দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণেও অনেকের হাইপোক্সিয়া হতে পারে, আবার আচমকাও দেখা দিতে পারে। সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্র্যাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) ও হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপোক্সিয়া একটি পরিচিত সমস্যা। ফুসফুসের কার্যক্ষমতায় ঘাটতির কারণে তাঁদের শরীরে এমনিতেই অক্সিজেন কম থাকে। তাই হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রঙ্ক্ষাইটিসের রোগীর সমস্যা বেড়ে গেলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়। তীব্র মাত্রার রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার রোগীদের মধ্যেও এই উপসর্গ দেখা যায়। হৃদযন্ত্রে বা কিডনিতে সমস্যা থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে।

দুর্ঘটনার কারণেও এটি হতে পারে। যেমন, শ্বাসনালিতে কোনো খাবার আটকে গিয়ে বা কোনো স্থানে আটকা পড়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হলে, অনেক উঁচু পর্বতের ওপর বা অগ্নিকাণ্ডের স্থানে অক্সিজেন কমে যেতে পারে।

অক্সিজেনের ঘাটতি বোঝার উপায়
করোনাভাইরাসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ বেশি ক্লান্ত বোধ করলে, মাথা ঘুরতে শুরু করলে, শরীর অতিরিক্ত অবসন্ন লাগলে, ঝিমুনি বোধ হলে, সবকিছু এলোমেলো মনে হলে দ্রুত সতর্ক হওয়া উচিত। এ ছাড়া যাঁরা হাইপোক্সিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের নিয়মিত অক্সিজেন মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। পালস অক্সিমিটার নামের ছোট্ট যন্ত্রটি এখন প্রায় বাড়িতেই আছে, যা আঙুলের মধ্যে লাগিয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ও পালস রেট মাপা যায়। যদি অক্সিজেন মাত্রা ৯২ শতাংশের নিচে নেমে যায় তবে মস্তিস্কে ও অন্যান্য অঙ্গে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়।

অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমাগত কমতে থাকলে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, কিডনি ইত্যাদি বিকল হতে শুরু করে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া’ হয়। অর্থাৎ, অক্সিজেনের মাত্রা কম, কিন্তু শ্বাসকষ্ট না হওয়ায় তিনি তা উপলব্ধি করতে পারেন না। ফলে চিকিৎসা পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। কভিড-১৯-এ আক্রান্ত কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে। একে বলে ‘হ্যাপি হাইপোক্সিয়া’। সে ক্ষেত্রে বড় ভরসা হলো পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে অক্সিজেন সেচুরেশন দেখা।

তাই দিনে অন্তত দু’বার অক্সিমিটারে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে দেখা উচিত। অক্সিমিটারের রিডিং যদি ৯৪ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তবে অনেক হাঁপানি ও সিওপিডির রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থাতেই ৯৪ থাকে, তাই তাদের ক্ষেত্রে ৯০-এর নিচে নামলে বিপজ্জনক।

প্রতিকারের উপায়
বাইরে থেকে অক্সিজেন দিয়ে রোগীর শরীরের অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি পূরণ করাই হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক। অক্সিজেন সিলিন্ডার বা অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের সাহায্যে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ বা অন্য যে কারণে হাইপোক্সিয়া হচ্ছে, তার চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু ধাপ রয়েছে। প্রথমে নাজাল ক্যানুলা বা ফেস মাস্কের সাহায্যে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কাজ না হলে উচ্চ প্রবাহযুক্ত মাস্কের সাহায্যে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এতে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তখন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এ ছাড়া শোয়ার ধরন পরিবর্তন করেও (উপর হয়ে শোয়া) অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা বাড়ানো যায়।

আসল কথা

• যতই ঔষধ বা প্রেসক্রিপশন ফলো করি না কেন সঠিক নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা (যেমন- সর্বদা মাস্ক পরিধান করা, সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, সামাজিক বা শারীরিক বা সুরক্ষা দূরত্ব বজায় রাখা)। অন্যদিকে শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে তবে কোন কিছুতেই কিছু হবে না। উপরোক্ত প্রেসক্রিপশনের বেশ কটি ঔষধই হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য।
• একটি বিষয়ে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। সেটি হলো হাত দিয়ে মুখে, চোখে এবং নাকে স্পর্শ করছে কী না। এ বিষয়ে সর্বদা স্বীয় অন্তরকে সিগনাল দিয়ে রাখতে হবে।
• যদি জ্বর না থাকে ঔষধ দরকার নাই; যদি সর্দি/কাশি না থাকে ঔষধ দরকার নাই; যদি পেটের সমস্যা না থাকে ঔষধ দরকার নাই। অর্থাৎ যতকম ঔষধ তত নিরাপদ। এমনিতেই অসুখের সময় খেতে ভালো লাগে না, উপরন্তু বমিবমি ভাব সর্বদাই বিরাজমান; তাই প্রয়োজন ছাড়া ঔষধ সেবন সঠিক নয়। তাহলে উপরে এত ঔষধের কথা বলা হলো কেন? বাস্তবতা হলো করোনার আকার আকৃতি ছাড়া তার সম্পর্কে যত তথ্যই উঠে এসেছে- সবই হাইপোথিসিস অর্থাৎ অনুমান নির্ভর। যেহেতু রোগটি মহামারীতে রূপ নিয়েছে তাই যত অল্প ব্যবস্থাপনায় জীবন রক্ষা করা যায় ততটুকুই মনুষ্যসমাজ নেয়ার জন্য হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে; আসল কথা হলো:
– মনোবল শক্ত রাখুন। আতঙ্কিত হলে ইমিউনিটি কমে যায়। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখুন।
– WHO এর কথা মতো-
– Test, Test, Test এর সূত্র ধরে বলতে চাই
মাস্ক, মাস্ক এন্ড মাস্ক এবং Protein, Protein, Ultimately Protein। হ্যাঁ, অন্য অসুখের কথা না ভেবে দৈনন্দিন খাবারে প্রোটিনের পুরমাণ দ্বিগুণ করে দিতে হবে।
– ধান, গম, আলু, চিনির প্রতি সংবেদনশীলতা কমিয়ে আনতে হবে।
– এই ফলের মৌসুমে প্রতিদিন খাবারের খানিক্ষণ পর ফল খেতে হবে। মনে রাখবেন সন্ধ্যার পর কোন ফল নয়।
– বিধি নিষেধ না থাকলে প্রতিদিন ২.৫-৩ লিটার পানি বা তরল খাবার বারবার খেতে হবে।
– সাধ্যমত হাঁটাহাঁটি ব্যয়াম বা যোগব্যায়াম করতে হবে।
– মনকে রাখতে হবে প্রফুল্লচিত্তে, কথা বলতে হবে মন খুলে। বিষন্নতাকে কিছুদিন তুলে রাখতে হবে সিন্দুকে।

সবার সুস্থতা কামনা করছি আর আশা করছি নতুন পরিচ্ছন্ন কভিডমুক্ত একটি পৃথিবীর।

ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম (লাবীন)
পরিচালক
বাংলা একাডেমি, ঢাকা

(কালেরকন্ঠ থেকে সংগৃহীত)