আতিকুর রহমান মানিক:
প্রাণঘাতী করোনার ২য় ঢেউয়ে বেসামাল বিশ্ব। অদৃশ্য এক অনুজীবের সাথে আজ দৃশ্যমান লড়াইয়ে লিপ্ত মানবসভ্যতা। করোনা নামক এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আজ বিশ্ব অর্থনীতি ও মানবজাতি হুমকির মুখে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও অসহায় এই দানবের কাছে।
এর মধ্যেই জুমাতুল বিদা তথা পবিত্র মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার আজ। পবিত্র মাহে রমজানের বিদায়ী সুর বেজে উঠেছে মুসলিমদের প্রানে। একমাস সিয়াম সাধনার পর বিদায় নেবে বরকতময় মাহে রমজান। আজ জুমাতুল বিদার পাশাপাশি একই সাথে যথারীতি মুসলিম বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। দীর্ঘদিন ধরে ইহুদীবাদী ইসরায়েলের দখলে থাকা মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের দাবিতে প্রতি বছর রমজানের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদার এ দিবসে একই সাথে আল কুদস দিবসও বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।
কুদস অর্থ পবিত্র। ‘আল কুদস’ বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ, যা মসজিদুল আকসা বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামে পরিচিত। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তাঁর পুত্র হজরত ইসহাকের (আ.) সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফের (আ.) বংশধর হজরত দাউদের (আ.) সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুর্নর্নির্মাণ করেন। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
মহানবীর (সা.) নবুওয়তের ঘোষণার পর থেকে মুসলমানদের কাছে বায়তুল মুকাদ্দাস পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য হতে থাকে। কোরআন শরিফে বায়তুল মোকাদ্দাসকে পবিত্র ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘স্মরণ করো, মুসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন, এতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে’ (সুরা আল মায়িদা, আয়াত : ২১)। বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত। হাদিসে আছে, ‘কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজে এক লাখ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববীতে নামাজে ৫৯ হাজার গুণ সওয়াব, বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজে ২৫ হাজার গুণ সওয়াব।’ বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের কাছে সব সময় সম্মানিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস প্রথম সফর করেন, যা ইসরা নামে পরিচিত। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণের স্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামী সংস্কৃতির চারণভূমি ও ইসলাম প্রচারের লালনক্ষেত্র। এই পবিত্র ভূমির ভালোবাসা প্রত্যেক মোমিনের হৃদয়ের গভীরে আবেগে আপ্লুত।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমরের (রা.) খিলাফতকালে ৬৩৮ সালে বায়তুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেমসহ পুরো ফিলিস্তিন সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন জবরদখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সিপাহসালার সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) পুনরায় জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।
এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; দূরদর্শী সুলতান তাদের এ দুরভিসন্ধিমূলক প্রস্তাবে রাজি হননি। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে।
ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে ইহুদির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দাঙ্গা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। এ সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মাঝে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে।
ইসরায়েল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে নেয় ১৯৬৭ সালে। এরপর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে। ইসরায়েল নতুন নতুন মুসলিম এলাকা জবরদখল করে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে এবং হত্যা, গুম চালিয়ে যাচ্ছে। ইহুদিদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা সচেতন মুসলমানদের সংগ্রামী প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে পরিপূর্ণভাবে সফল হতে পারেনি। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনি মুসলিমদের এ প্রতিরোধ আন্দোলন সমর্থন করেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে আল আকসা মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শেষ শুক্রবারে আল কুদস দিবস পালন করে। তখন থেকে সারাবিশ্বে এদিনটি মুসলিম মুক্তির প্রতীকরূপে পালিত হয়ে আসছে। আল্লাহতায়ালা সারা পৃথিবীতে ইসলাম কায়েম করে দিন, বিশ্বের বিভক্ত মুসলিমদের এক করে দিন।
দখলদার ও জারজ ইসরাইল ইতিমধ্যেই বহুমুখী সমস্যায় আক্রান্ত । ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের শান্তিপূর্ন পারমাণবিক কর্মসূচী রুখতে ইসরাইল এর আগে ইরানের বেশ কয়েকজন পরমানু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। ইরানের সামরিক উত্থানের দিকপাল জেনারেল কাসেম সোলাইমনীকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইসরাইল। ইরানও পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। তাই ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশংকায় এখন চরম ভীত ইসরায়েল।
এছাড়াও আরো রকমারী আভ্যন্তরীন সমস্যায় জড়িত জারজ ইসরাইল।
কিন্তু বিশ্ব মিডিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ খবরগুলো তেমন ছড়ায়না। মুসলিম উম্মাহর দীর্ঘশ্বাস ইসরাইলের পতন আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে।
ইসরাইল নিপাত যাক, মসজিদুল আকসা মুক্ত হোক।
আতিকুর রহমান মানিক
চীফ রিপোর্টার
দৈনিক আমাদের কক্সবাজার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।