ফেসবুক কর্ণার:
এমন একটা ঘর হবে আমাদের ইনশাআল্লাহ। বর্ষার দিনে উঠোন থাকবে স্যাঁতসেঁতে। হাঁস-মুরগির ছানাগুলো আম-কাঁঠালের ছায়ায় বাঁধা থাকবে উইজ্জার ভেতর।
আমাদের গাঁয়ে বর্ষার দিনগুলোতে কাঁঠাল বিচি আর বিন্নি চাউল একসাথে তাওয়ায় ভাঁজা হতো ঘরে ঘরে। মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো পুরো পাড়ায়। দক্ষিণ পাড়া হতে মাথা ও পিঠে জুঁইর চাপিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে ছুটে আসতো বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সে পাড়ার বড় মা।
আমাদের ঘরটা হতেও তেমন বিচিও চাউল ভাজা সুঘ্রাণ আসবে। সন্ধ্যা কিংবা বিকেলে চুলোয় তাওয়া বসিয়ে চেরাগটা কাঠের কুপিদানীতে রেখে হাতে নারিকেল পাতার কাঠি নিতো আম্মু। তারপর মিটি মিটি আলোতে কাঠি দিয়ে তাওয়ায় ঢেলে দেওয়া চাউলগুলো নাড়তো।
চেরাগের আলোয় মায়ের হাতের সোনালী চুড়িগুলো চিক চিক করতো। সেই সাথে চুড়ির শব্দে অদ্ভুত এক ছন্দ খেলা করতো সারা ঘর। পাশে চাটাই পেতে বসতো মেঝো ফুফু, ছোট ফুফু, দাদী আর ভাই বোনেরা।
মায়ের কাছে শিখেছিলাম কীভাবে অল্প আঁচে বিন্নি ধান হতে খৈ ফুটে। ভাজা আতপ চাউলে কীভাবে বেশ সুঘ্রাণ আসে।
আমাদের ঘরটাতেও চাটাই বিছিয়ে গল্প হবে। চেরাগের আলোয় সোনালী চুড়িতে ঝিকিয়ে ওঠা আমার হাতের ছোঁয়ায় তাওয়ায় ফুটবে চাউল। অতঃপর রাত নেমে এলে জোনাকি পোকার আসর নামবে আমাদের ঘরের পূর্বদিকটায়, যেখানে হেলেঞ্চারা সবুজের সংসার পাতবে।
একজীবনে অনেক বেশী সুখী হওয়ার জন্য বিশেষ কিছুর দরকার নেই। একটি প্রাচীন উঠোন সহ ছোট্ট একটি ঘর দরকার হয়। যেখানে শৈশবের পরিপূরক হিসেবে জোনাকিরা থাকবে। বাঁধাহীন বর্ষাযাপনের সুযোগ থাকবে। আর থাকবে প্রিয় মানুষের উল্লাসে মুখরিত সবুজে ভরপুর আঙিনা….
নোটঃ ‘উইজ্জা’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শব্দ। এর প্রকৃত নাম আমার জানা নেই। তেমনি ‘জুঁইর’ ও আঞ্চলিক। বৃষ্টির দিনে ছাতার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয় গ্রাম বাংলায়। প্রকৃত শব্দ জানা নেই।
স্বপ্নের বাড়ি
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
