আবদুর রহমান খান
জুন ০১ :
করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। ভরসা অনলাইন ক্লাস। এমন অবস্থায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে কাশ্মীরের একটি ছ’বছরের মেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে প্রশ্ন করেছে- কেনো ছোটো বাচ্চাদের অনলাইনে এতো বেশী কাজ দেওয়া হয়?
ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শিশুটি প্রশ্ন করেছে, ‘ছ’বছরের ছোট বাচ্চাদের ম্যাডাম ও টিচারেরা কেন এত বেশি কাজ দেন?
এত বেশি কাজ হয় আসলে বড় বাচ্চাদের। ‘আমি যখন সকালে উঠি… ১০ টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত ক্লাস হয়। প্রথমে ইংরাজি, তারপর অঙ্ক, উর্দু, ইভিএস,
কম্পিউটার।…ছোট বাচ্চাদের কেন এত কাজ দেওয়া হয় মোদী সাহেব?’
টাইমস অফ ইন্ডিয়া আজ ( ০১ জুন) এক খবরে জানিয়েছে, খুদে মেয়েটির এই ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ভিডিও টুইটারে সাড়া ফেলে দিয়েছে পাঠকদের মাঝে। তাঁর কিউটনেসে মজেছেন নেটিজেনরা। কেউ আবার বিষয়টা যথেষ্ট গুরুগম্ভীর বলে জানিয়েছেন, বাচ্চাদের এই ব্যাপারটির দিকে সকলের নজর দেওয়া উচিৎ।
অনিল শর্মা নামে অপর এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বাচ্চাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছে। আমাদের বাচ্চাদের খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষিত করতে চাই। আমরা আসলেই তাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছি। ছোট্ট বাচ্চা তোমাকে কুর্নিশ। তোমার সারল্য যে কারও হৃদয় গলিয়ে দিতে পারে।’
করোনায় অনাথ শিশুদের দুরবস্থা
এদিকে, ভারতে করোনার কারনে পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে পড়া অনাথ শিশুদের সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দিল্লী কমিশন ফর প্রটেকশন
অফ চাইল্ড রাইট্স – এর চেয়ারপারসন অনুরাগ কুন্ডু বলেছেন, করোনার কারনে অল্প সময়ের মাঝে অনেক বেশী শিশু তাদের পিতা-মাতাকে হারিয়ে অনাথ
হয়েছে। এসন অনাথ শিশুদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এটি এ মুহুর্তে একটি জাতীয় সমস্য।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের রাজ্য শিশু কল্যান কমিশনের সদস্য ডঃ প্রীতি ভার্মা জানিয়েছেন, তার রাজ্যে এরকম এক হাজারটি অনাথ শিশুর সন্ধান মিলেছে যাদের পিতা-মাতা করনায় মারা গেছেন। তবে এটাই আসল চিত্র নয়। রাজ্যের পুলিশ এবং স্বাস্থ্য-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুর্নাংগ তালিকা তৈরী করতে।
ভারতের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, এ বছর পহেলা এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত প্রায় ছ’শ টি শিশুর বাবা-মা দুজনই করনায় মারা গেছেন। তবে বিশেষজ্ঞগন বলছেন এ সংখ্যা অনেক বেশী।
গত সপ্তাহে মোদি সরকার এরকম অনাথ শিশুদের প্রত্যেকের জন্য ১৪ হাজার ডলারের একটি ফান্ড গঠন করেছে যা দিয়ে তাদের শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া
হবে ।
এদিকে, শিশুদের নিয়ে কাজ করা এনজিও গুলো চাইছে এসব অনাথ শিশুদের যেন দত্তক দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে ভারতীয়
সমাজে। দত্তক নিতে আগ্রহী পরিবারকে এ জন্য ছেলে না মেয়ে ‘ গোত্র পরিচয়, বয়স এসব উল্লেখ করে একটি জাতীয় পোরটালের মাধ্যমে নাম
রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। এর পর রাজ্য শিশু কল্যান কমিটি তথ্য যাচাই বাছাই করে উপযুক্ত শিশুটিকে উপযুক্ত পরিবারে দত্তক নেবার অনুমতি দেয়।
এ অবস্থায় শিশু দত্তক দেবার আগ্রহ জানিয়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারনার খবরও প্রকাশ পাচ্ছে। দিল্লী কমিশন
ফর প্রটেকশন অফ চাইল্ড রাইট্স – এর চেয়ারপারসন অনুরাগ কুন্ডু জানিয়েছেন, ফেসবুকে এরকম একটি দত্তক দেবার বিজ্ঞাপন দেখে তার অফিস
থেকে ফোন করে আগ্রহ প্রকাশ করা হলে এ বাবদ সাত হাজার ডলার “মুল্য” চাওয়া হয়। এরপর কমিশন বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
বিশেষোজ্ঞগন আশংকা প্রকাশ করছেন, ভারতে কোভিদের কারনে মাতৃ-পিতৃহীন শিশুরা অভাব অনটনের শিকার হয়ে শিশু শ্রম বা পাচার হয়ে যাবার ঝুঁকিতে
পড়ছে।