ফেসবুক কর্ণার:
আমার শৈশব-কৈশরের প্রিয় নদী মাতামুহুরী। মাঝেমধ্যে শহুরে যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে ছুটে আসি প্রিয় মাতামুহুরীর কাছে। মাতামুহুরীর রূপ পরিবর্তনে হতাশ হই। নয়ন জলে ভাসি…!
জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে সে আমার সঙ্গে মিশে আছে। অতি নিবিড়ভাবে ও সংগোপনে। তিনদশক আগে কক্সবাজার শহরের কস্তুরি ঘাট থেকে সার্ভিস ট্রলারের ভটভট শব্দ, প্রবল স্রোত, তীরভাঙা ঢেউ, বাকঁখালী মোহনায় কূল ঘেঁষে এগিয়ে চলা।
মহেশখালীর আদিনাথ পাহাড়, তার মাঝদিয়ে একে বেঁকে বয়ে গেছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ছুটে চলা সার্ভিস ট্রলারে ঝর্ণাধারার শব্দ। কখনো দুই ধারে সবুজের সমারোহ। নদীর ধারে সারি সারি বৃক্ষের ডালে সংসারপাতা সাদা বকের ডানার ঝাপটানি, জেলেদের মাছ ধরা মাতামুহুরী নদীর সৌর্ন্দয অবগাহনে স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে টেকনাফ থেকে শিক্ষক বাবার সাথে করে কস্তুরি ঘাট হয়ে সার্ভিস ট্রলারে করে নিজস্ব বাড়ি মাতামুহুরীর তীরবর্তী বাঘগুজরা বাজারের সায়ের মোহাম্মদ সৈকত এলাকায় হওয়ায় সেই ছোট্ট বয়স থেকেই তাকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বাবার সঙ্গে যখন বাড়ি আসতাম, তখন মাতামুহুরীর স্বচ্ছ জলরাশির প্রেমে পড়ে নির্ধারিত দিনের চেয়ে কয়েকদিন বেশিই থেকে যেতাম। প্রতিদিন দুপুরে ভাইবোনদের সঙ্গে সাঁতার জানা শিখেছি। বড় ভাই বোনদের পিছু পিছু ছুটে যেতাম সাঁতার কাঁটার জন্য। কী স্বচ্ছ জলরাশি আর কী প্রবহমান স্রোত না ছিলো তখন মাতামুহুরীর! ভাবলেই অবাক লাগে। নদীরও যে মানবজীবনের মতো যৌবনের জোয়ার আর বার্ধক্যের ভাটা থাকতে পারে, তা ছিলো কল্পনাতীত। আমার সেই অকল্প কথাটাই আজ দুঃখজনকভাবে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখনকার মাতামুহুরী আর আমার শৈশব-কৈশোরের মাতামুহুরীতে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ইদানীং মাতামুহুরীর চেহারাটা দেখলেই মনটা বিষন্নতায় ভরে যায়। আনমনেই নস্টালজিক হয়ে পড়ি।
যেসব ভদ্রলোক মাতামুহুরীর প্রমত্তা রূপ দেখেননি, তাদের কেউ যদি এখনকার মাতামুহুরী দেখে বলে উঠেন, ‘এটা কী করে নদী হয়? এটা তো মাঝারি সাইজের একটি খালমাত্র!
দুই দশক আগে মাতামুহুরী ৩০-৪০ ফুট গভীর এবং প্রায় ১৫শ’ ফুট প্রস্থ ছিল। নদীর উজানে পাহাড়ে দুই দশকে ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধন, বাঁশ কর্তন ও পাহাড়ে জুম চাষের কারণে মাটি ক্ষয়ে নদীতে পড়েছে।
অল্প বৃষ্টিতেই পাহাড়ি ঢলে নদীর দুই তীরে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় জেলে পরিবারগুলোরও হতাশ। আমিওতো রীতিমতো জাল পেতে মাছ ধরেছি শৈশবে। মাতামহুরী নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলোর সুদিন ফেরাতে আর চকরিয়া উপজেলার মানুষের বর্ষাকালীন বন্যাজনিত দুর্ভোগ কমাতে ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা অত্যাবশ্যক।
ছবিঃ পুরান বাড়ী (সায়ের মোহাম্মদ সৈকত পাড়া, মাতামুহুরি, পেকুয়া, কক্সবাজার।)
Gulam Azam Khan -এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।