সিবিএন ডেস্ক:
ওয়াইম্যাক্স (উচ্চগতির ইন্টারনেট) ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে। লাইসেন্স বাতিলের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসি সরকারের পূর্বানুমোদন চেয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস একসেস (বিডব্লিউএ) অপারেটর বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের কাছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিটিআরসির সব মিলিয়ে বকেয়া পড়েছে ২০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এই টাকা পরিশোধ না করা এবং লাইসেন্স বাতিলের জন্য পাঠানো কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব না দেওয়ায় ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১’ এর ধারা ৪৬ (৩) (খ) অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে প্রদত্ত বিডব্লিউএ লাইসেন্স বাতিলের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিআরসির ২৫১তম কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিটিআরসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, লাইসেন্স বাতিল কার্যক্রম পরিপূর্ণ করতে সরকারের অনুমোদন গ্রহণের জন্য বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। কমিশন বৈঠকের পরই এই চিঠি পাঠানো হয়।
লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধের সামর্থ্য বাংলালায়নের নেই। কখনও তাদের সে সামর্থ্য হবে বলেও মনে হয় না। বকেয়া পরিশোধ করলে না হয় অন্যকিছু ভাবা যেত। কিন্তু তারা তো বকেয়াই পরিশোধ করতে পারছে না। এজন্য তারা অনেক সময়ও পেয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলালায়নের ব্যান্ডউইথ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই ব্যান্ডউইথ ফাইভ-জিতে ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো— বাংলালায়নের অস্তিত্ব থাকার কোনও যুক্তি নেই।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স অপারেটর ছিল তিনটি— বাংলালায়ন, অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লিমিটেড (কিউবি নামে পরিচিত) এবং ওলো (বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ-বিআইএ)। এরমধ্যে প্রথম দুটি ২০০৮ সালে ওয়াইম্যাক্স সেবাদানের জন্য লাইসেন্স পায়। বর্তমানে তিনটি প্রতিষ্ঠানেরই সেবা বন্ধ রয়েছে। সেবা বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের জুন মাস থেকে বিটিআরসি ওয়াইম্যাক্সের গ্রাহক সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়। এর আগে ওই বছরের মার্চ মাসে ওয়াইম্যাক্সের গ্রাহক সংখ্যা নেমে যায় মাত্র দুই হাজারে, যা এক সময় ছিল ৫ লাখের বেশি।
বাংলালায়নের লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর বিডব্লিউ লাইসেন্স পায়, যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। বাংলালায়নের বকেয়া সংক্রান্ত বিষয়ে (বাংলালায়নের কাছ থেকে বিটিআরসি তথা সরকারের বকেয়া রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে) ২০১৯ সালের ২২ মে অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ২২৭তম কমিশন বৈঠকে জানানো হয়, বাংলালায়নের ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ ১১ কোটি ৩৯ লাখ, রাজস্ব শেয়ার বাবদ ৮ কোটি ৬৭ লাখ, স্পেক্ট্রাম চার্জ বাবদ ৬৮ কোটি ৭৭ লাখ, বিলম্ব ফি বাবদ ৫৫ কোটি ৬৮ কোটি ও ভ্যাট (মূসক) বাবদ ৮ কোটি ৯ লাখ টাকা— অর্থাৎ সব মিলিয়ে বকেয়ার পরিমাণ ১৫২ কোটি ৬১ লাখ (প্রায়) টাকা। যা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কমিশন কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। (পরবর্তীতে এই বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।)
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলালায়নের ব্যান্ডইথের ৯৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি ব্লক করে দেওয়া, বরাদ্দকৃত তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) বাতিলের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান, লাইসেন্স বাতিলের কার্যক্রম গ্রহণে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যুর অনুমোদন প্রদানের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত।
পরে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলালায়ন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাপ্য বকেয়া পরিশোধ না করলে তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১০ মার্চ বাংলালায়নের লাইসেন্স বাতিলের লক্ষ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ ইস্যুর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ একই মাসের ১৫ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ অনুমোদন প্রদান করে বিটিআরসিতে চিঠি দেয়।
২২৭তম কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে, বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আইআইজি-গুলোর (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) মাধ্যমে বাংলালায়নের ব্যান্ডউইথের সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বসীমা আরোপ করা হয় এবং স্পেক্ট্রাম বিভাগ থেকে একই বছরের ৩ জুলাই বাংলালায়নের অনুকূলে বরাদ্দকৃত তরঙ্গ (২৫৮৫-২৬২০ মেগাহার্টজ), যার ব্যান্ডউইথ ৩৫ মেগাহার্টজ বাতিলসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন বরাবরে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য বাংলালায়নকে চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠির উত্তরে বাংলালায়ন বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম বিভাগ বরাবর একটি আই্নি নোটিশ পাঠায়।
ওই নোটিশের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনি মতামত জানতে চেয়ে স্পেক্ট্রাম বিভাগ থেকে বিটিআরসির লিগ্যাল শাখায় নথি পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে লিগ্যাল শাখাকে অনুরোধ করা হলে লিগ্যাল শাখা বিটিআরসির আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট প্রাপ্ত আইনগত মতামত সংযুক্তি আকারে স্পেক্ট্রাম বিভাগে পাঠায়।
বিটিআরসির আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রতিষ্ঠানটি (বাংলালায়ন) কোনও প্রকার বকেয়া পরিশোধ না করায় সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গত ২০ জানুয়ারি বাংলালায়নকে লাইসেন্স বাতিলের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। কারণ দর্শানো নোটিশে উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কোনও জবাব দেয়নি। নথিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, বিডব্লিউএ লাইসেন্স, লাইসেন্সিং গাইডলাইন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ অনুযায়ী, লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট যাবতীয় চার্জ যথা সময়ে কমিশনে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে, যা বাংলালায়ন মানেনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।