তাওহীদুল ইসলাম নূরী:
যান্ত্রিক ও কোলাহলে পরিপূর্ণ চট্টগ্রামের যে কয়েকটি স্থানে সর্বস্তরের মানুষ স্বস্থির নিঃশ্বাস নিতে পারে তারমধ্যে সিআরবি অন্যতম। দেড়শ বছরের পুরোনো গাছ, উম্মুক্ত মাঠ এবং স্থাপনা সিআরবির দিকে যেন মানুষকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং একটি বেসরকারি সংস্থা এখানে একটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মনে যেভাবে আঁচড় দিয়েছে, আমাকেও প্রবলভাবে ব্যাথিত করেছে।
গত কয়েক বছর ধরে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান, বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সিআরবিতে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয় এখানে। সাংস্কৃতিক, সামাজিক কর্মী ও সেচ্ছাসেবীদের অন্যতম মিলনস্থল সিআরবি। দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিরিষ তলায় ঠাঁই হয় অসংখ্য পথ শিশু এবং উদ্বাস্তু মানুষের। যদি বৃক্ষ, পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এই নানন্দিক স্থানটির ছয় একর জায়গা জুড়ে হাসপাতাল নির্মাণ হয় তাহলে সিআরবি তার সৌন্দর্য হারাবে সেখানে কোন সন্দেহ নাই। কাটতে হবে পাহাড় এবং ছোট-বড় অনেক গাছপালা। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে বিভিন্ন দোকানপাট। অর্থাৎ আমজনতার আজকের স্বস্তির জায়গাটুকু একটি বাণিজ্যিক এবং কোলাহলপূর্ণ এলাকায় পরিণত হবে, প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
সিআরবির ছয় একর জায়গা নিয়ে যে হাসপাতালটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি একটি বেসরকারি হাসপাতাল। তাই নির্ধিদ্বায় বলা যায় হাসপাতালটি সাধারণ জনগণের কোন কল্যাণে আসবে না। চট্টগ্রামে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু, সেটা নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে নয়। কারণ, এখানে হাসপাতাল নির্মাণ হলে একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন বিনষ্ট হবে, তেমনি অন্যদিকে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। সেজন্য চট্টগ্রামের গণমানুষের মত আমিও মনে করি এই হঠকারী এবং অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বেসরকারি সংস্থাটির বেরিয়ে আসা। চট্টগ্রামে রেলওয়ের অনেক পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে। সেসব জায়গায় হাসপাতালটি নির্মাণ করা হোক। আর, যদি এখানে অবশ্যই হাসপাতাল নির্মাণ করতে হয় তাহলে সিআরবিতে অবস্থিত জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় থাকা রেলওয়ে হাসপাতালটি সংস্কার করা হোক।
সিআরবির শিরিষ গাছকে মেয়র তার কলিজার সাথে তুলনা করে বলেছেন দেড়শ বছরের ঐতিহাসিক এই গাছটি কাটা মানে তার কলিজা কাটা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও সবুজের স্নিগ্ধতায় ভরা এই জায়গাটিতে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে নয়। সরকার এবং বিরোধী দলসহ সকল দলমত ও শ্রেণি পেশার মানুষও চায় না হাসপাতালটি নির্মিত হোক। তাই, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য নগরীর ফুসফুসে কোন হাসপাতাল নয়। সিআরবি আমজনতার সিআরবিই থাকুক। শত শত বছর ধরে ছড়িয়ে যাক তার সৌন্দর্য ও মানসিক হাসপাতাল হিসেবে সিআরবিতে ঠাঁই হোক সকল মানুষের।
তাওহীদুল ইসলাম নূরী
আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত),
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।