এম এ মাসুদঃ
পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্ভেজাল সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। সব নিয়ম অনিয়ম, বিশ্বাস, নির্ভরতা আর বাধভাঙ্গা সম্পর্কের মিলনস্থল হলো বন্ধুত্ব। চলার পথে যে সম্পর্কে থাকে না জাতিভেদ, যে সম্পর্ক থাকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে। বন্ধুত্বে কখনো বয়স ফ্যাক্টর নয়, যে কোন বয়সের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, একই জাতীয় পছন্দ–অপছন্দ ও সমভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সাধারণ ভিতের উপর দাঁড়িয়েই দু’জন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
‘আলোতে একা হাঁটার চেয়ে অন্ধকারে বন্ধুর হাত ধরে হাঁটা শ্রেয়’ কথাটি বলেছিলেন আলোচিত মার্কিন লেখিকা হেলেন কেলার। জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ বন্ধু খুঁজে নেয়। তবে একথাও ঠিক, সব বন্ধুর গুরুত্ব সমান হয় না। জীবনের নানা বাঁকে বাঁকে সবচেয়ে ভালো বন্ধুটির প্রভাবই প্রবলভাবে আলোড়িত করে। সবচেয়ে ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্য কি? গুণ দেখে কি আর বন্ধুত্ব হয়? গুণের তালিকা করে কি বন্ধু খোঁজা যায়? না যায় না। তারপরও মানুষ মনে মনে আশা করে, সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি নির্দিষ্ট কিছু গুণের অধিকারী হবে।
একজন ভালো বন্ধু পাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে কোনো ধরনের স্বার্থ কিংবা প্রাপ্তির চিন্তা মাথায় না রাখা। স্বার্থের প্রয়োজনে করা বন্ধুত্ব আপনাকে একটা সময়ে লাভবান করলেও চূড়ান্ত বিচারে আপনাকে করে তুলতে পারে নিঃসঙ্গ। তাই কোনো ধরনের প্রাপ্তির চিন্তা থেকে নয়, বরং নিজের ভালোলাগা আর ভালোবাসাগুলোকে ভাগাভাগি করে নেয়াই হোক বন্ধুত্বের প্রথম অঙ্গিকার।
বন্ধুত্বকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুব কাছের একটি অংশ ধরা হয়। দার্শনিক এমারসন বলেছেন, একজন বন্ধু হচ্ছেন প্রকৃতির সবচেয়ে বড় মাস্টারপিস। বন্ধুত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্যে কবি বা দার্শনিক হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আপনার আনন্দে এবং দুঃখে আপনার পাশে কেউ না থাকলে আনন্দ যেমন বহুলাংশে মাটি হয়ে যায়, তেমনি দুঃখও সহজে হালকা হয় না। মানুষ যখন বেদনাভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে তখন বন্ধুর কাছ থেকে সে প্রথম সান্ত্বনা পায়, আর যখন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে তখন এ আনন্দের খবর সে প্রথম বন্ধুকেই জানায়।
বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না। এই আয়নাতে প্রতি মুহূর্তে সে নিজেকে দেখে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও। বন্ধুত্ব হওয়া চাই হাত আর চোখের সম্পর্কের মতো। হাতে ব্যথা লাগলে চোখে পানি আসে। আর চোখে যদি পানি আসে, তবে হাত এগিয়ে যায় তা মুছে দিতে। বন্ধুর কোন রং হয় না, অনেকটা পানির মতন রং বর্ণহীন। বন্ধুত্ব হচ্ছে সেই সম্পর্ক যেখানে একজন আরেকজনকে নিস্বার্থভাবে সাহায্য করে, সুসময়ে, দুঃসময়ে, সবসময় তার পাশে থাকে। একজন খাঁটি বন্ধু কখনও হিংসার বশবর্তী হয়ে তার বন্ধুর অমঙ্গল চাইতে বা করতে পারেনা, যদি তা করে, তাহলে সেটি বন্ধুত্ব না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম ভালো বন্ধু সম্পর্কে বলেন-
“একটি বই একশটি বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান।”
তাই বাস্তব জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করে তুলতে ভালো বন্ধুর কোন বিকল্প নেই। ভালো বন্ধুর কয়েকটি
বিশেষ দিক তুলে ধরলাম।
#দুঃসময়ে_পাশে_থাকা
একজন প্রকৃত বন্ধু চেনা যায় বিপদের সময়। বন্ধুর বিপদে চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়। প্রয়োজনে সময়ে- অসময়ে বন্ধুর বিপদে তাকে সাহায্য করা। যে বন্ধু কোনো স্বার্থ ছাড়াই বিপদের দিনে আপনাকে সাহস যোগায় সেই মানুষটি অবশ্যই আপনার প্রকৃত বন্ধুদের মধ্যে একজন।
#বন্ধুত্বে_বিশ্বস্ত_থাকা
কথায় আছে, বিশ্বাস ভালোবাসার শক্তি। আর বন্ধুত্বে বিশ্বাস রক্ষা করা খুবই জরুরি। তৃতীয় কোনো পক্ষের কথার সূত্র ধরে বন্ধুত্বের বিশ্বাসভঙ্গ কখনোই কাম্য নয়। যে বন্ধু আপনার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় অন্য মানুষকে বলে বেড়াবে সে আর যাই হোক আপনার প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না।
#বন্ধুর_ইচ্ছাকে_সম্মান_জানানো
বন্ধুর ইচ্ছাকে সবসময় সম্মান জানানো উচিত। যদি তা পছন্দ না হয়, তবে সরাসরি বলুন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা অবশ্যই জরুরি। সমালোচনা করুন, তবে কটূক্তি নয়। সমালোচনার ভাষা ব্যবহারে সচেতন হওয়ায় খুবই প্রয়োজন। আপনার কোনো ভুল হলে প্রকৃত বন্ধু আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে না, আপনাকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করবে। বন্ধুর প্রতি বিনয়ী হওয়াই বন্ধুত্বের প্রধান হাতিয়ার।
#বন্ধুর_প্রকৃত_শুভাকাঙ্ক্ষী_হওয়া-
ভালো বন্ধু সবসময় বন্ধুর ভালো চায়। নিজের ভালো হোক সকলেই চায়, তবে তার জন্য বন্ধুর ক্ষতি হোক এমন ভাবা কিন্তু প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় নয়। প্রকৃত বন্ধু চাইবে তার নিজের উন্নতির পাশাপাশি আপনারও উন্নতি হোক।
#বন্ধুত্বে_সৎ_থাকা-
বন্ধুত্বে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। মনের মতো বন্ধু পেতে সততার কোনো বিকল্প নেই। যে বন্ধু নিজেকে বড় করতে সবসময় মিথ্যা বলে সে কখনোই প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না।
#ভালো_শ্রোতা_হওয়া-
বন্ধুত্বে ভালো শ্রোতা হওয়াও খুব জরুরি। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়। বন্ধুকেও কথা বলতে দেওয়া এবং আলোচনায় উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে দু’জনের ভালো লাগা, মন্দ লাগা পরস্পরের বুঝে নিতে সহজ হয়। বন্ধুর সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে উপহাস না করাই প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব। বন্ধু মানেই কেবল আমার সবটুকু কথা তাকে বলে ফেলা নয়, বরং তার কথাগুলোকেও আপন করে নেওয়া।
#বন্ধুত্বকে_টিকিয়ে_রাখতে_শেখা-
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন কাজ। তবে একজন প্রকৃত বন্ধু সব সময়ই সম্পর্ককে প্রাধান্য দেন। যে বন্ধু ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, অনুরাগ, ব্যস্ততা, এড়িয়ে চলা, দূরে রাখে সেই আপনার প্রকৃত বন্ধুদের মধ্যে একজন। বন্ধু বলে কখনো বন্ধুর ঘাড়ে চড়ে বসা ঠিক না, এতে আপনারই বিপদ হতে পারে।
#ক্ষমাশীলতা-
যে কোনো বিষয় নিয়ে আপনি তার ওপর রাগ ঝাড়তে পারেন, বকাবকি করতে পারেন। এতে সম্পর্কে চরম টানাপোড়েনও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যখন বুঝবেন ভুলটা আসলে আপনারই, তখন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো বন্ধুটির কাছে আপনার একটাই প্রত্যাশা থাকতে পারে, তাহলো আপনাকে ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারে সে ২য় বার ভাববে না।
#পছন্দকে_গুরুত্ব_দেওয়া
প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা। সবচেয়ে ভালো বন্ধু বলেই সব বিষয়ে দুজনের পছন্দের মিল থাকবে- এমনটি নাও হতে পারে। তবে আপনি পছন্দ করেন এমন যেকোনো কাজে সে আপনার পাশে থাকবে; উৎসাহও জোগাবে। যদিও কাজটি হয়তো তার ভালো লাগে না।
#লক্ষ্যচ্যুতিতে_কষ্ট_পাওয়া-
সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে সাহস ও সমর্থন দেবে। জীবনে চলার পথে আপনি লক্ষ্যচ্যুত হলে বা মনোযোগ হারিয়ে ফেললে, সে-ই আপনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেবে। তারপরও যদি ব্যর্থ হন, সেটিকে পাত্তা না দিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর প্রেরণা যোগাবে।
#কখনো_‘না’ না বলা-
আপনার যে কোনো সমস্যায় সাহায্যের প্রয়োজন হলে- নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি কখনোই ‘না’ বলবে না। দিন-রাতের যে কোনো সময়ে আপনার একটি মাত্র ডাকেই ছুটে আসবে।
সে-ই আপনার প্রকৃত বন্ধু, ভালবাসার লাবণ্য বজায় রেখেও যে আপনার ভিতরের আবর্জনাকে চিহ্নিত করতে পারে। এটাই হল বন্ধুত্বের মূল কথা।
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
হজরত ইমাম জাফর আস-সাদিক (রহঃ) বলেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তারা হলো-মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি।’
হজরত ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) বলেছেন, ‘যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। আর তা হলো- ‘বুদ্ধিমত্তা, সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া, পাপাচারী না হওয়া, বেদআতি না হওয়া এবং দুনিয়াসক্ত না হওয়া।’
না জেনে কাউকে যেমন বন্ধু রূপে গ্রহণ করা যায় না। তেমনি সত্যবাদী, দ্বীনদার ও পরোপকারী ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করারও কোনো উপায় নেই।
বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে প্রিয়নবী মুহাম্মদ (স.) বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’
প্রিয় রাসুল (স.) বন্ধুত্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন,
‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে-
আতর বিক্রেতা এবং কামারের হাপরের ন্যায়। আতর ওয়ালা তোমাকে নিরাশ করবে না; হয় তুমি তার কাছ থেকে ক্রয় করবে কিংবা তার কাছে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর, হয় তোমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে, নচেৎ তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে আর না হলে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি)
রাসুল (স.) এর এ হাদিসটি আমি সেই পনেরো বৎসর আগে থেকে ফলো করে আসছি, এবং তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছি।
এবার চলুন!
বন্ধু সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কি বলেছেন দেখা যাক- বন্ধু নির্বাচনে যে গুণটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে তা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরাঃ তাওবা-১১৯)
একজন ভালো বন্ধু শুধুমাত্র বন্ধুর ইহকালের কল্যাণ কামনা করে তা নয়, বরং ইহকাল ও পরকাল উভয়কালের কল্যাণ কামনাকামী। আর পরকালের কল্যাণে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বন্ধু নির্বাচনে একজন মানুষ হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ ঈমানদার। যা প্রিয়নবি (স.) ঘোষণা করেছেন ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাউকে ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা দান করা থেকে বিরত থাকে, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করে নিল।’ (আবু দাউদ)
আপনি যদি বন্ধুকে যাচাই করতে চান এবং দেখতে চান ওই ব্যক্তি সত্যিই প্রকৃত বন্ধু কিনা, তাহলে খেয়াল রাখুন আপনার সুসময় ও দুঃসময়ে বন্ধুত্বের মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে কিনা। খেয়াল করুন রেগে গেলে খারাপ কথা বলে কিনা, অপমানজনক বক্তব্য দেয় কিনা, অন্যের দুঃসময়ে সাহায্য করে কিনা। কেউ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সে তাকে ছেড়ে চলে যায় কিনা। হজরত আলী (আ.)-ও বন্ধুকে দুঃসময়ে পরীক্ষা করতে বলেছেন। এছাড়া সফরে গেলেও বন্ধুকে চেনা যায়। সফরে গেলে মানুষকে সুখকর ও কঠিন দুই পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হতে হয়। সফরে নিঃস্বার্থপরতা ও স্বার্থপরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে ভালো বন্ধু কখনোই মিথ্যা বলে না এবং কখনোই প্রতারণা করে না। প্রতারণা ও মিথ্যাচারিতা খুব দ্রুত বন্ধুত্বের বন্ধনকে নষ্ট করে দেয়।
যিনি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যের বন্ধু খুজছেন তাকেও সর্বোত্তম বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজের গুণের আলোয় তাকে আলোকিত করার চেষ্টা করতে হবে। বন্ধুকে সংশোধন করতে নিজেকে আন্তরিক ও আস্থাপূর্ণ মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। বন্ধুকে অত্যন্ত সুন্দর ও ভদ্র ভাবে তার ঘাটতিগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে হবে এবং তাকে বুঝাতে হবে আপনি তার মঙ্গল চান, আপনি তার ভালোর জন্যই পরামর্শ দিচ্ছেন। ভালো বন্ধুর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বন্ধুর দোষ-ত্রুটি অন্যের সামনে ঢেকে রেখে তাকে সংশোধ করার চেষ্টা চালানো। আসলে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে সত্যিকারের বন্ধুর বিকল্প নেই। সত্যিকারের বন্ধুই মানুষের গোটা জীবনকে উপভোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছেশক্তি বাড়িয়ে দেয় একজন ভালো বন্ধু। ভালো বন্ধু আস্থার জায়গা হিসেবে গণ্য হয়।
যার ভালো বন্ধুর সংখ্যা বেশি সে তত বেশি সুখী এবং তার জীবন তত বেশি সহজ। তবে সত্যিকারের বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারাটাও এক ধরণের যোগ্যতা। তবে তাদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে যারা সৎ ও নীতিবান মানুষ। যাদের কথা, কাজ ও আচার-আচারণ আপনাকে সৎ পথে চলতে সহযোগিতা করবে। ভালো স্বভাব-চরিত্রের মানুষকে বন্ধু হিসেবে পাওয়া এবং তাদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারাটা বড় ধরণের সৌভাগ্য। কারণ তারা সুন্দর কথা বলেন, তাদের চারিত্রিক মাধুর্য্য মানুষকে আকৃষ্ট করে, তাদের কাজ অন্যকে জীবন সম্পর্কে আশাবাদী করে তোলে। আপনি যে বন্ধুর সঙ্গে চলছেন সে ভালো না খারাপ তা নির্ণয় করার সুযোগ আপনার কাছেই রয়েছে। অত্যন্ত সহজভাবে বলা যায়, কারো সঙ্গে চলার পর যদি ভালো গুণ আপনার ভেতরে আসতে থাকে, তাহলে মনে করতে হবে সে আপনার ভালো বন্ধু। অন্যদিকে যদি খারাপ কিছু আসতে থাকে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সেই বন্ধু ত্যাগ করে ভালো বন্ধু খুঁজে বের করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সমাজবিদ্যা, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, এবং দর্শনে বন্ধুত্বের শিক্ষা দেয়া হয়। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ডেটাবেজ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে মানুষ সুখী হয়।
আপনার প্রকৃত বন্ধু সেই, যে আপনার ভুলগুলোকে স্পষ্ট ভাষায় আপনাকে জানায়। সে নয় যে আপনাকে খুশি করতে আপনার ভুলগুলোকে সঠিক বলে সামনে তুলে ধরে। জীবনে একজন সৎ বন্ধু পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো, নিজে একজন সৎ বন্ধু হয়ে ওঠা।
সাফল্য আমাদের নতুন বন্ধুত্ব তৈরী করে,
কিন্তু ব্যর্থতা দেখিয়ে দেয় কে প্রকৃত বন্ধু।
লেখক-
এম এ মাসুদ
ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার ও
ম্যানেজিং ডিরেক্টর
আইডিয়াল প্রিন্টার্স, কক্সবাজার।
E-mail: mamasudcx@gmail.com
https://www.facebook.com/mohammed.alammasud
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।