ফেসবুক কর্ণার:
কোরবানির ইদের রাতে মেরিন ড্রাইভ রোডে বাইক এক্সিডেন্ট এ নিহত রিফাত এবং আসিফ দুইজন ই আমার ছাত্র ছিল। রিফাত ২০১৬ সালে আমার কাছে প্রাইভেট কোচিং এ পড়তো। আমার কাছে পড়ার আগে তাকে আমি চিনতাম না। কোচিং এ আসার পরে পাহাড়তলী এলাকার এক ভাই আমাকে জানায় যে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। এরপর থেকে আমি ওকে ফ্রি ই পড়াতাম। আচার আচরণ ছিল খুবই ভদ্র।
এস এস সি পাশ করার পরে রাস্তাঘাটে প্রায়ই দেখা হতো সবসময়ই দেখতাম বাইক নিয়ে ঘুরতে।আর্থিক অবস্থার কারনে যার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটতো সে এত দামি বাইক চালায় কেমনে, এই চিন্তা কখনো করিনি। কারন জানতাম কোচিং এসে অনেকই এ ধরনের প্রপঞ্চ করে থাকে। এটা আমাদের কাছে খুবই নৈমিত্তিক বিষয়।পজিটিভলি চিন্তা করলে মনে করতাম দুই আড়াইলাখ টাকার বাইক হয়তো বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়ে চালায়।
এক্সিডেন্টের পর আমি ওখানকার প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানতে পারি ঘটনাটি ঘটে দরিয়ানগর প্যারাসেইলিং পয়েন্ট’র পাশে ২ নং ব্রিজের কাছে। প্রায় নিউজে বাইকদুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ’র কথা বলা হলেও মূলত প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য মতে বাইক দুইটি মূলত রেস করছিল এবং রেসের সময় সাধারণত তীব্র গতি থাকে। ফলে একটি অপরটির সাথে লেগে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারায়। ঘটে এই অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা। তাদের কারো মাথায় হেলমেট ছিলনা। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিষয়ে জানিনা। দুইটা বাইকে মোট ৫ জন ছিল বলে জানতে পারি।
দূর্ঘটনা যেকোন সময় ঘটতে পারে। রাস্তায় অনেক দূর্ঘটনার শিকার অনেক ব্যক্তি নিজে দায়ী থাকেন না। অন্যের ভুলে যে কেউ দূর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
বাংলাদেশে সড়ক দূর্ঘটনা একটি মাল্টি ফ্যাক্টোরিয়াল ইস্যু। তবে আসিফ এবং রিফাতের দূর্ঘটনার জন্য আমার মতে প্রথম যে বা যারা দায়ী তারা হলেন উভয়ের অবিভাবক। বাইক চালক সন্তানের জন্য গর্ববোধ করা অবিভাবককেই প্রথম দায় নিতে হবে। আরেকটি বিষয় আছে, সেটি হল রাস্তায় প্রায় দেখি উচ্চ ইঞ্জিনের শব্দে তীব্র গতিতে টিনএজ ছেলেরা বাইক ছুটায়। বিরক্ত পথচারীকে অনেক সময় বদদোয়া দিতে দেখেছি। কি বদদোয়া দেন সেটা এখানে উল্লেখ করলাম না। না জানি আল্লাহ কার বদদোয়া কবুল করে ফেলেছেন। সেটা আল্লাহ ই ভালো জানেন।
আসিফ এবং কফিল দু জনই আমার চোখে খুবই ভদ্র আর সদা হাস্যোজ্জ্বল ছেলে। তাদের এই অকাল প্রয়ানে গতকাল থেকে তীব্র মানসিক যন্ত্রনায় আছি। আল্লাহ ওদের বেহেশত নসিব করুক। যারা আহত হয়েছে তারাও আমার ছাত্র। তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা শিক্ষা নেইনি। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটবে বলে আমার মনে হয় না। আগামীকালই হয়তো কোন সন্তান বাইক কেনার জন্য বায়না ধরবে। সচ্ছল পিতা মাতা প্রিয় সন্তান কে নিশ্চয়ই মনে কষ্ট দিবেনা।

 

Tahmidul Muntasir এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।