ইউসুফ আরমান:
বাংলাদেশ একদিকে যেমন সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা অন্যদিকে প্রবল বর্ষণ ও খরায় পীড়িত একটি দেশ। ভৌগোলিক অবস্থানই এর কারণ। নদীমাতৃক হওয়ার ফলে বাংলার মাটি সুজলা-সুফলা। বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত নদী, নালা, খাল, বিল, হাওড়-বাওড় নেই। এসব থাকার জন্যেই বাংলার জন জীবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব। প্রকৃতিগত কারণেই যে দেশে নদী-নালা ও সবুজের এমন সমারোহ সে দেশে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও দুর্ভিক্ষ থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিংবা কম হয় তখনই তা হয় দুর্যোগের নামান্তর। অতিবর্ষণ ও খরা তার অনিবার্য প্রকাশ। এর বাইরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি। বাংলাদেশ মৌসুমী বায়ু নির্ভর দেশ, বর্ষা অতিরিক্ত হলে হয় বন্যা। বন্যার ফলে সৃষ্ট হয় মানুষের পানিবন্দি জীবন, মাঠে নষ্ট হয় ক্ষেতের ফসল, আবার খরা হলে পুড়ে হয় ছারখার, চৌচির হয় মাঠ ঘাট। এর প্রভাব পড়ে খাদ্য শস্যে আর পানীয় জলে। বিরূপতার ফলে সৃষ্ট হয় দুর্ভিক্ষ। এছাড়া ও রয়েছে কালবৈশাখী তান্ডবলীলা আর সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এভাবে বাংলাদেশের কখনো বন্যা, কখনো খরা, কালবৈশাখী তান্ডবলীলা ও জলোচ্ছ্বাস দূর্যোগের কারণ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের তিন টি ঋতুতেই প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিরাজমান থাকে।

বাংলাদেশ নদীতৃক দেশ। বৃষ্টিপাত প্রধান মৌসুমী অঞ্চলে তার অবস্থান। বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি। বন্যায় ঘর বাড়ি, শহর-গ্রাম ডুবে যায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। আকস্মিক বন্যার ফলে মানুষ ও পশু স্রোতে ভেসে যায়, এতে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বন্যায় গাছপালা বিনষ্ট হয়। বন্যার সময় নানাবিধ রোগ ব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তাছাড়া বর্তমান মহামারী করোন ভাইরাসের প্রভাবে পুরা বিশ্ব জিম্মি।

বন্যা বাহিত পলি মাটি আমাদের ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধির সহায়ক বটে। কিন্তু তার ফলে আমাদের জীবনে কার্যকরী হয়ে উঠার অবকাশ পায় না।
পরিবেশ বলতে আমরা আমাদের চারপাশের আলো-বাতাস, মাটি-পানি, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, উদ্ভিদ-প্রাণী জগৎ সব কিছুর সম্মিলিত রূডকেই বুঝি। মানুষ ও তার পরিবেশর মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে নান সমস্যা ও সংকট দেখা দেয়। পরিবেশের এই ভারসাম্য নানা কারণে অকারণে বিনষ্ট হয়। অপরিকল্পিত কলকারখানা, প্রতিষ্ঠান, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ক্রটিপূর্ণ বায়ু নিষ্কাশন, কীটনাশকের ব্যবহার, রসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, পাহাড় কাটা, গাছপালা উজাড় ইত্যাদি এ ধরনের আরো বহু কারণে পরিবেশের ভারসাম্য প্রতিনিয়তই বিনষ্ট হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বায়ুমন্ডলের ও জোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে।

কাজেই আমাদের সবাই মিলে পৃথিবী নামক গ্রহ টিকে দূর্যোগ প্রতিরোধ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং প্রাণী জীবনের উপযোগী করে তোলাই আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

লেখক পরিচিতি
ইউসুফ আরমান
কলামিষ্ট ও সাহিত্যিক
দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী
বিজিবি স্কুল রোড় সংলগ্ন
পৌরসভা, কক্সবাজার।
০১৮১৫৮০৪৩৮৮/০১৬১৫৮০৪৩৮৮
yousufarmancox@gmail.com