সিবিএন ডেস্ক:
করোনা এমনই এক রোগ, মানুষকে একাকীত্বের চরম সত্য উপলদ্ধি করায়। আইসোলেশনে থাকা মুহূর্তগুলোতে মানুষ নানা সংকটে পড়েন। খাবার দেওয়ার মতো পাশে কেউ থাকে না। এই সংকটাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইন্দোনেশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়েছেন অভিনব উদ্যোগ। বাড়িতে বানিয়েছেন রোবট। এই রোবট তারা নিয়ে যাচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার গ্রামে। যেখানে মহামারিতে বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করছে এই রোবট। মূলত আইসোলেশনে থাকা করোনা রোগীদের কাছে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে রোবটগুলো।

বাড়িতে পড়ে থাকা পণ্য যেমন, বাক্স, প্যান কিংবা পুরনো টেলিভিশনের মনিটর ব্যবহার করে এই ডেলটা রোবট তৈরি করছে দলটি। পুরো ইন্দোনেশিয়ায় করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এ উদ্যোগ নিয়েছেন শিক্ষকরা।

রোবট তৈরি প্রকল্পের কমিউনিটি লিডার আসেয়ান্তো বলেন, নতুন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি করোনা মহামারি পুরো ইন্দোনেশিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। সে জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হয়, মানুষের সেবায় রোবটকেই কাজে লাগাতে হবে, যেহেতু মানুষের জন্য এই কাজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। রোবটগুলো জীবাণুনাশক স্প্রে করতে পারে, খাবার ডেলিভারির কাজ করতে পারে, যারা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দিতে পারে। রোবটগুলো এভাবেই ফাংশন করা, যার অনেক বেশি প্রয়োজন, তার কাজই করবে রোবট।

রোবটের মাথা তৈরি হয়েছে রাইস কুকার দিয়ে। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে এট অপারেট করা হয়। ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রোববটি সচল রাখে ব্যাটারি। এই রোবটে জীবাণুনাশক স্প্রে করা যায়, যেন ভাইরাস না ছড়ায়। ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া গ্রামে কাজ করছে এই রোবটগুলো। দেশটির পূর্ব জাভা প্রদেশের রাজধানী এবং ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণে বিপর্যস্ত ইন্দোনেশিয়ার এ গ্রাম।

আইসোলেশনে থাকা কোন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দিতে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রোবটের স্পিকার থেকে বার্তা দেওয়া হয় একটি ডেলিভারি এসেছে, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। আসেয়ান্তো জানান, ডেল্টা রোবট খুবই সাধারণ একটা রোবট, করছে অসাধারণ কাজ। পড়ে থাকা পট, পড আর টেলিভিশনের টিউব দিয়ে রোবটগুলোকে বানানো হয়েছে। এগুলোকে যখন বানানো হয়, তখনই মাথায় ছিল পরিত্যক্ত জিনিসই ব্যবহার করব।

স্মার্ট ভিলেজের কমিউনিটি লিডার আসেয়ান্তো জানান, এই রোববটি গ্রামের মানুষের তৈরি। এটা কোনো হাইটেক রোবট না। বডির জন্য গাড়ির অংশ ব্যবহার করা হয়েছে, পাওয়ারের জন্য ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। চলাচলের নিয়ন্ত্রণ করা হয় রিমোটের সাহায্যে। ইন্দোনেশিয়ার টেলকম ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষকরা জানান, গ্রামের মানুষের সাহায্যের জন্য আসেয়ান্তোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই রোবট বানাতে সহযোগিতা করেছেন তারা।

এশিয়ায় করোনা মহামারির রেড জোন হিসেবে পরিণত হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে এক লাখ মানুষ। তবে ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে এখানকার মানুষের মাঝে সংক্রমণের হার।