নুর মোহাম্মদ
আফগানিস্তান আর তালেবান একসূত্রে গাঁথা। আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন আসলে সাধারণ মানুষ কি শান্তি সুখে থাকবে? তারা যদি শান্তি সুখে থাকে এভাবেই লোকাল ট্রেনের যাত্রীর মত একজনের আগে আরেকজন, টেনেহেঁচড়ে, গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে বিমানে উঠে পালাচ্ছে কেন? বিমান থেকে পড়ে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো কয়জনের মৃত্যু হয় আল্লাই মালুম?
এক্ষেত্রে অনেকে বলতে পারেন, তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরেও তারা যে যাচ্ছে সেটা তাদের ব্যাপার। তার অর্থ কি দাঁড়াল? তালেবানদের পূর্ব শাসনের হাল-হাকিকত সম্পর্কে তারা বেশ অবগত। তাই তাদেরকে কোন প্রকার বিশ্বাস করতে তারা ভরসা পাচ্ছে না। দ্যাটস ক্লিয়ার।
আমাদের দেশের কিছু ধ্বজভঙ্গ জজবাওয়ালা লোক আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন আসাতে ফেইসবুকে ভুবন জয়ী স্ট্যাটাস দিচ্ছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’
কেউ বলছে ‘আমি একটা রোজা রাখব’
কেউ মনে মনে ‘দান-খয়রাত’ করার বাসনা করেছে,
কেউ শরীয়াহ আইন চালু হবে এই পুলক চিত্তে আল্লাহু আকবর বলে হর্ষ ধ্বনি দিচ্ছে।
আর কেউ বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে যোগদান করার জন্য এক পায়ে খাড়া। ভাগ্যিস,আওয়ামী লীগ সরকার হওয়ায় অনেকে আনন্দ মিছিল বের করতে পারে নাই। এখন তারাই জানে তাদের মর্মতলের যাতনা কীভাবে সংবরণ করেছে? আবেগ নয় বিবেক দিয়ে চিন্তা করুন।
আফগানিস্তানের তালেবান, মধ্য প্রাচ্যের আইএসআই, নাইজেরিয়ার বোকো হারাম কত নিষ্ঠুর জঙ্গিগোষ্ঠী! ধর্মের লেবাসে তারা কত জঘন্য হতে পারে যা সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। ইসলামের ঝান্ডাকে তারা উড্ডীন করে নাই,বরং বহির্বিশ্বের কাছে ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। ইসলামের কথা বলে কত মানুষের মানবাধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে একমাত্র উপরওয়ালাই জানে। একুশ শতকের সভ্যতায় এসে তারা নারীকে যৌন দাসী হিসাবে ব্যবহার করে। কিম্বা গনিমতের মাল বলে যদি ব্যবহার করে? বস্তুত তারা যদি তোমার আমার মা-বোন হয় তখন ব্যাপারটা কেমন লাগবে? একবার কল্পনা করুন। কল্পনা করলে গা শিউরে উঠে না? অবশ্যই উঠে। ব্যাপারটা কত বিশ্রী বুঝলেন তো? ইসলামে চারটা বিয়ে জায়েজ, সমস্যা নাই। কিন্ত শতশত অবলা নারীকে হারেমে বন্দি করে যৌন লালসা মেটানো ইসলাম সমর্থন করে না। তারা মূলত ধর্মের অমিয়বাণীকে তলোয়ার হিসাবে ব্যবহার করে তাদের নিজেদের আখের গোছানো ব্যতীত ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে কিছুই করেনি।
বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা আর তার গুন্ডাবাহিনী ন্যাটো আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে ছিল আফগানদের তালেবানি শাসনের কব্জা থেকে মুক্ত করবার দোহাই দিয়ে। মূল উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানের মাটির তলে থাকা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ লুট করা। তারা তাদের কাম সেরে চেটেপুটে খেয়ে অবস্থা বেগতিক দেখে সবকিছুই ছেড়ে লাফাত্তা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের এক দাঁতের বুদ্ধির সাথে ঠাই দেওয়ার মতো বুদ্ধি তালেবানদের নাই। কেবল ঈমানী জজবার বুলি আওড়ানি ছাড়া খালি ঝুড়ির তলায় অবশিষ্ট কোন বাক্য নেই।
আমাদের লোকগুলো কি বুঝে, কি ভেবে তালেবানদের সমর্থন করে? আসলে ব্যাপারটা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের কোন অংশে বোধগম্য হচ্ছে না!
আফগানিস্তানের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস তা আগে জানতে হবে। ইসলামের শামিয়ানায় আমরা ভাই হতে পারি।মাগার, জাতিতে আমরা ভিন্ন। কোথায় আফগান, কোথায় বাংলাদেশ। বিশ বছর পরে তালেবান আবার আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়েছে। দেখুন,তাদের পরবর্তী শাসন ব্যবস্থা কেমন হয়। নাকি সেই চর্বিত শাসন ব্যবস্থার চর্বণের পুনরাবৃত্তি ঘটে। কি উত্তর কোরিয়া হয়, না ভেনিজুয়েলা না আফ্রিকার বুরুন্ডি হয় তা সময় বলে দেবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর ,রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ ,কক্সবাজার সিটি কলেজ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।