অন্তর দে বিশাল:
পর্যটন কেন্দ্র খুলার সাথে সাথে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ভিড় করতে শুরু করেছে পর্যটকরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গুলা খুলে দেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে পর্যটকদের সচেতন করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। কিন্তু মাইকিং কানেই তুলছে না অনেকেই।
সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) থেকে খুলেছে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। প্রথম দিনই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছিলো কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। সকাল থেকে সমুদ্র পাড়ে মানুষের ভিড় ছিল। খোলা হয়েছে সব হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট। খুলেছে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে সাগর পাড়ের ঝুপড়ি দোকান, ছাতা-চেয়ারও। সৈকতের ফটোগ্রাফার এবং ঘোড়ার দৌড়ও থেমে নেই। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও চেনা রূপে ফিরেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, পর্যটন কেন্দ্র খোলার সাথে সাথে সৈকত নগরীতে পর্যটকের উপস্থিতিও বেড়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশের মধ্যে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। যে যার মতো করে সৈকতে ঘোরাফেরা করে যাচ্ছে। দূরত্ব যেমন মানা হচ্ছে না, তেমনি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারো মুখে নেই মাস্ক। পর্যটকরা কেউ মানছেন না করোনার স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক পরা নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে চরম অনীহা। দিচ্ছেন নানা অজুহাত। তেমনই পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেকেই মুখে মাস্ক পরিধান না করে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা।
সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায়, কয়েক হাজার পর্যটক এসব পয়েন্টে ভিড় করছে। আগত পর্যটকরা সৈকত, পানি, বালিয়াড়ি ও কিটকটে (ছাতায়) বসে আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে রয়েছে। আর তাদের আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে হার মানতে বাধ্য করোনার স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক ব্যবহারের লেশমাত্র চোখে পড়ে না । যারা মাস্ক ব্যবহার করে সৈকতে নেমেছেন তারাও কিছুক্ষণ পর সৈকতের বালিয়াড়িতে ফেলে দিচ্ছেন ব্যবহৃত মাস্কটি। কিটকট ( ছাতায়) বসা পর্যটকদের ও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। মাস্ক পরিধান বিহীন হৈ-হুল্লোড়, তাদের মাঝে ও নাই সামাজিক দূরত্ব মানার কোন বালাই।
চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক মোশাররফ হোসেন বলেন, কখন কক্সবাজার আসবো সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে আসছিলাম। তবে কক্সবাজারে এসে ভালো লাগতেছে , অনেক মজা হচ্ছে। সমুদ্রের হাওয়ায় মাস্ক পড়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। আসলে মাস্ক ব্যাগে রয়েছে।প্রয়োজন হলে পড়ে নিবো।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সুমি আক্তার বলেন, মাস্ক রয়েছে তবে এখন পানিতে নামব তাই ফেলে দিয়েছি। পানিতে নামলে তো মাস্কটা ভিজে যাবে।
আরেক পর্যটক রুবেল দাশ বলেন, ‘এখন তো সৈকতে উৎসব চলছে। এই উৎসবে আমাদের তো সচেতনতা অনেক কম, আগের মতো নেই বললেই চলে। তারপরও চেষ্টা করব মাস্ক ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকতে। কারণ, আমরা সুরক্ষিত থাকলে পরিবারও সুরক্ষিত থাকবে।’
এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মুহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন পর খুলেছে পর্যটন কেন্দ্র গুলা। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও মাস্ক পরিধানের জন্য উদ্ভুদ্ধ করতে। আগে পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসলেও এখন পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে পর্যটকদের সচেতন করতে মাইকিং, টহলরত মাইকিং, বিচ বাইকযোগে মাইকিং করতেছি। কোন সরকারি নিষেধাজ্ঞা বা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমাদের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়রা জরিমানা সহ বিভিন্ন ভাবে আইন মানাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, পর্যটকদের পাশাপাশি স্হানীয় কিছু কিটকট ব্যবসায়ী,ঘোড়া চালক,ফটোগ্রাফার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের মাঝে মাস্ক পরার প্রবণতা কম,নানা অজুহাতে তারাও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা যদি সচেতন হয় পর্যটকরা সচেতন হতে বাধ্য হবে বলে মনে হচ্ছে। আশা করি, তারা ও পর্যটকরা সচেতন হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাপারে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম জানান, করোনার সংক্রমণ রোধে পর্যটকদের সচেতন করতেই প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব কিছুতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে এই অভিযান ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।