বদরুল ইসলাম বাদল

শোকের মাস আগষ্ট শেষ হল । পুরো মাস বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক আলোচনা হল। হল বক্তৃতা, কথামালা,কবিতা, স্মৃতিচারণ,কালো ব্যাজ ধারণ।বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ।দোয়া মাহফিল,কান্না,আলোচনায় শোককে শক্তিতে পরিণত করার শপথ। বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর জীবনাচরণ থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রতিজ্ঞা।ফটোশেসনে বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে রঙিন পোস্টারে নিজের নাম সম্বলিত আত্মপ্রচার।আর ও কত কিছু । কিন্তু মাস শেষে এসব বিষয় কতটা মনে রাখা হয় কিংবা মনে থাকবে জানি না ।বাঙালি জাতি বড়ই ভুলোমনের।স্বল্প সময়ে সব ভুলে যেতে অভ্যস্ত ।এমনি ভাবে প্রতি বছর আগস্ট আসে, আগস্ট যায় ।কিন্তু আমরা অাগষ্ট মাস থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে থাকি কিনা বা নতুন প্রজন্ম ত্যাগের শিক্ষায় কতটা সচেতন হয় কিংবা কত টুকু চেষ্টা করা হয়। তার হিসাব নিকাশ করা দেখা দরকার এই সময়ে।

কথা হল আলোচনা সভায় যে কথা হয়ে থাকে কিংবা স্মৃতি চারণ হয় তা নিজেদের মধ্যে কত টুকু ধারণ করি কিংবা আধো বিশ্বাস করি কিনা। নাকি বলা কথা গুলো শুধু কথার কথা,তা নিয়ে বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখা যায়।যদি বিষয় গুলো বিশ্বাস করা হয় তাহলে হতাশা, নিজেদের মাঝে তর্কযুদ্ধ থাকতে পারে না।একে অন্যের প্রতি বিষোদগার করার নয়। অনৈক্য থাকার কথা নয়।তাই আত্মসমালোচনা করে আত্মোপলব্ধি থেকে সংযত হবার পাঠ হতে পারে আগষ্টের শিক্ষা।আমরা সবাই জানি বঙ্গবন্ধু একটি চেতনার নাম।যে চেতনায় আছে ত্যাগ, আদর্শ, ভালবাসা,নীতি, নৈতিকতা এবং স্বচ্ছতা। সংগ্রামের আপোষহীন ধারাবাহিক ইতিবাচক সাক্ষ্য ।সর্বোপরি অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শন। ক্ষুধা ও বৈষম্যহীন সমাজের আমৃত্যু লড়াই ।তাই যদি হয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার সবার অভিন্ন অভীষ্ট লক্ষ্য , তাহলে বিভেদ, বিবাদ, বিভাজন থেকে দুরে থাকার শপথ নেয়া যায়, বলে মনে করি শোকের মাসে।

বিশ্বের হাতেগোনা কয়েক জন রাষ্ট্র নায়কদের মত ভূখণ্ডের নিজস্ব সংস্কৃতির চেতনায় অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু ।যা কোন অর্থনীতিবিদ বা দার্শনিকের ধার করা নয়।যাতে সীমারেখার মধ্যে বসবাসকারী সমস্ত শ্রেণীর মানুষের অধিকার ও সমান সুযোগের নিশ্চয়তার বিধি সন্নিবেশিত। কিন্তু কথা হল আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যতটা কান্না কিংবা ধারণ করি তার কর্মসূচি সমূহ নিয়ে কতটা চর্চা করি? দেখা যায় অনেকে উনার নির্দেশিত পথ বা রুপরেখা নিয়ে তেমন অবগত নয়।কারণ অধিকাংশ নেতাকর্মীর রাজনীতি নিয়ে লেখাপড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে নাই ।তাই যত দিন প্রজ্ঞায় মেধায় রাজনৈতিক মননের বিকাশ না হবে ততদিন অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচী বাস্তবায়ন সম্ভব হবার নয়। আজকাল সংখ্যার দিক দিয়ে যত মুজিবসেনা দেখতে পাওয়া যায় তত জন মুজিব আদর্শিক কর্মী হলে বঙ্গবন্ধুর দেখা সোনার বাংলার বাস্তবতা বেশী দুরে নয়।কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় ।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং সন্মানের জায়গায় বসিয়েছেন।সাধুবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষা করার কঠিন দায়িত্ব এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে অনেক নেতা কর্মী বিভিন্ন হামলা, মামলা, হুলিয়া নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ।পরাজিত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক নেতা কর্মী শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার, পঙ্গু, বাড়িঘর ভাঙ্গচুরের ফলে সহায় সম্বলহীন, অনেকে নিজের ভার নিজে বহন করতে অক্ষম। আমার এবং বিশ্লেষকদের ধারণা যে, তাঁরা ও যোদ্ধা। স্বাধীনতা রক্ষার যোদ্ধা, সিপাহী।বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বীর পুরুষ। কথা হল দল কিংবা দলের শীর্ষ মহল কতটা তাদের মনে রাখে।খোঁজ খবর নেয় ।উপরন্তু অনেকে চরম অবহেলার স্বীকার হয় বলে বিভিন্ন সময় দেখা যায় । তাই রাজধানী, শহর, উপশহর কিংবা গ্রামে নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা থাকা এবং তাদের পাশে থাকার জন্য বঙ্গবন্ধু দর্শনের পতাকাবাহী সংগঠনের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।জেলা উপজেলা কমিটির কাছে তাদের তালিকা সংরক্ষণ করা দরকার । কারণ বঙ্গবন্ধু আদর্শের নিঃস্বার্থ রাজনীতি করতে গিয়ে তাদের শক্ত ভূমিকার কারণে হামলা, প্রতিহিংসার সম্মুখীন হন।তাদের প্রতি সন্মান, আন্তরিকতা এবং সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকতে পারলে দলের নিবেদিত প্রান নেতা কর্মীরা সাহস পাবে, ভরসা হারাবে না।যাহা রাজনৈতিক দুর্যোগ, সংকট উত্তরণে সুদুর প্রসারী তাত্ত্বিক গুরুত্ব পাবে।তাই শোকের মাসের আত্ম উপলব্ধির অবস্থান থেকে নিগৃহীত নেতা কর্মীদের অবদানের বিষয় টি সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ নীতি নির্ধারনী সভায় আলোচনার দাবি রাখে।

বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি এখনো ষড়যন্ত্রের নীলনকশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই। ইতিহাসের বিকৃতি রোধ,অপপ্রচার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত সহ আদর্শ বিবর্জিত রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য মুজিব বর্যে বঙ্গবন্ধু চর্চাই একমাত্র সংকট উত্তরণের উপায়।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : নব্বই দশকের সাবেক ছাত্র নেতা , E-mail :badrulislam2027@gmail.com