নুরুল কবির ,বান্দরবান:
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিপাঠাগারটি অবৈধ ভাবে দখল করে সেখানে আওয়ামী লীগের থানচি উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বসবাসের ঘর হিসেবে বসবাস করছেন। তারা এই পাঠাগারকে থাকার ঘর হিসেবে প্রায় ৫ বছর যাবত পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। কেবল মাত্র ক্ষমতার দাপট দেখিয়েই সেখানে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বান্দরবানের থানচি উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের একতলা ভবনের ওপর সরকারি প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়। দুটি কক্ষ ও দুটি শৌচাগার রয়েছে এই পাঠাগারে। ওই বছরই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীরবাহাদুর এমপি উক্ত পাঠাগার উদ্বোধন করেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে ঐতিহাসিক বই, খাতা, কলম, আসবাবপত্র, রেক, আলমিরা এবং ক্যারাম বোর্ড সংগ্রহ করা হয়। উপজেলা আওয়ামীলীগ পাঠাগারটি পরিচালনা করে থাকে।
অভিযোগ উঠে, ওই পাঠাগারে থানচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পরিবার নিয়ে ওই পাঠাগারে বসবাস শুরু করেন।
তারা দুজন উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধি হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়েই কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি পাঠাগারকে ব্যক্তিগত বসবাসের ঘর বানিয়ে পরিবারনিয়ে সেখানেবসবাস শুরু করেন।
এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।
উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৯-৯০ সালে থানচি উপজেলা আওয়ামীলীগ গঠিত হয়। তখন থেকে ত্যাগী নেতাকর্মীরাই দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আলোচিত দুই নেতা (থোয়াইহ্লা ও রনি) তাদের আত্মীয়সজন নিয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী বীর বাহাদুরের নৌকা প্রতীকের থানচির বলি পাড়া কার্যালয়ের তোরণটি ভেয়ে দেয়। তারাওই সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাংলাই ¤্রাের পক্ষে কাজ করেন। তবে ওই সময় তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর রাজনীতি করতেন।
তবে ২০০৯ সালেতৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতার হাতধরে থোয়াইহ্লা মং ও রনি মারমা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়।
থোয়াইহ্লামং মারমা ২০০৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের পরে আওয়ামীলীগের যোগ দেন। ২০১৪ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নিয়োগ পান। ২০১৫ সালে হঠাৎ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ২০১১ সালে নির্বাচিত সাধারণসম্পাদক উবামং মারমাকে বাদ দিয়ে থোয়াইহ্লামং মারমাকে সাধারণসম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর যুগ্ম সাধারণসম্পাদকহন রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি।
পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওযামীলীগের সাধারণসম্পাদক দুই পদে ক্ষমতা থাকায় ২০১৭ সালে বঙ্গবন্দু স্মৃতি পাঠাগারটি দখল করে রেখেছে বর্তমান পর্যন্ত। অপর দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য সরকারি ভাবে দেয়ার দোত লাভবনটি ২০১৭ সালে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নের সংস্কার করা হলেও তিনি সেখানে না উঠে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারে বিনা পয়সায় বসবাস করে আসছেন।এতে করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পাঠাগারে বসবাসকারী রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুইশৈথুই মারনা রনি গতকাল (বৃহস্পতিবার) সেখানে প্রায় ৫ বছর যাবত বসবাসের কথা স্বীকার করেন। তিনিবলেন, তিনি দুর্গম এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় উপজেলা সদরে এই পাঠাগারটিতে থাকেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমার বক্তব্য নেয়ার জন্য কয়েক বার চেষ্টা করেওতাঁর বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে অন্য একটিগণমাধ্যমকে তিনি সেখানে থাকার কথা স্বীকার করে ছিলেন।
এ ব্যাপারে থানচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি উবামং মারমা বঙ্গবন্ধু স্মৃতিপাঠাগারে বসবাসের কথা স্বীকার করেন বলেন, এতে পাঠাগার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তারা কোনো অনুমতি বাকা উকে না জানিয়েই সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। রনি মারমা মাসিক এক হাজারটাকাভাড়া দেন-এ প্রশ্নে উবামং মারমা বলেন, না কোনো ভাড়াই দেয় না তারা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।