রহিম আব্দুর রহিম :
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলো,”৪০শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।” শিরোনামের দ্বিতীয় প্যারায় উল্লেখ,”বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানিয়েছেন, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে চালু হয়েছিল বিছিন্নভাবে কিছু স্থানে শিক্ষার্থী করোনা সংক্রমন হওয়ায়, অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছে।এ কারনেই অনুপস্থিত সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ছে।
“সাংবাদিক বন্ধু এই রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গত কয়েকদিনের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন।শিক্ষা সংশ্লিট উধ্বর্তনদের সাথে কথাও বলেছেন।সেক্ষেত্রে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যও গ্রহণ করেছেন।দায়িত্বশীলরা যার যার অবস্থান থেকে গতানুগতিক জবাবই দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকরা সাংবাদিককে যা বলেছেন,তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।করোনা ইস্যুতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১২সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব অবস্থা খুবই দুঃখজনক।শহরের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসছে না সপ্তাহে এক বা দুইদিনের জন্য দুটি ক্লাস করতে।গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আসছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম ক্লাস না হওয়ার কারনে।
ভয়াবহ সমস্যার বিষয়টি হচ্ছে, টানা দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৩০শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবা-মায়ের সাংসারিক কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে।অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী গ্রাম ছেড়ে শহরে কিংবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় কাজের জন্য পাড়ি জমিয়েছে।এরা লেখাপড়া করতে চায় কিংবা করবে, কিন্তু ফুলটাইম ক্লাস না হওয়ায় এলাকায় আসতে রাজী নয়।অথচ তথা কথিত বিশ্লেষকরা বলছেন,”করোনার ভয়ে কোন কোন অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না।” এধরনের বিশ্লেষণ, গবেষণা ‘মস্তিষ্কে করোনা’সংক্রমনেরই শামিল।
সম্প্রতি কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনা সংক্রামনের যে খবর, ‘সংবাদ’ এবং ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে’ পাওয়া গেছে তা যে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারনে হয়েছে এবং যা আতংকের বিষয় তা কিন্তু নয়।ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে মৌসুমী সর্দি-জ্বর-কাশি যুগ যুগ ধরে চলমান।যে দেশের হাটে-বাজারে,মাঠে-ঘাটে,মিছিল-মিটিংয়ে,যান -বাহনে ঠেলা-ঠেলি,ধাক্কাধাক্কিতেও করোনা সংক্রমন মাত্রা নিম্নগতিতে, সেখানে দেশের দুইটি প্রিন্ট মিডিয়া,একটি অনলাইন পোর্টাল এবং একটি বাহাত্তুরা টিভি চ্যানেল প্রতিদিন, প্রতিমূহুর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে করোনা খুঁজে বেড়াচ্ছে।এদের বিকৃতি চিন্তা-চেতনার ফলে দেশের শিক্ষা পরিস্থিতির আজ কঠিন দুঃখজনক অবস্থা।
আর একটিবার যদি কোন প্রকার অযৌক্তিক ইস্যুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়,তবে স্বাধীন, উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশের ইতিহাসে শিক্ষা সেক্টর “অন্ধকার যুগে”র কলংকে কলংকিত হবে।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে শিক্ষা কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক হয় নি; কোন দূর্যোগ,মহামারিকালীন কোন সেক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য একটি সময় পার করা হয়।করোনা ইস্যুতে বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার অর্ধমাস অতিবাহিত হচ্ছে। এখনও শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু না হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনে এক ব্যাঙ্গাত্মক পরিবেশ বিরাজ করছে।
করোনাকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ খুবই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।একমাত্র বাংলাদেশে যা হয় নি।কারণ,এই দেশের চৌকস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স পদ্ধতিতে দেশ এবং দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।শুধু তাই নয়,তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে যাতে আর কোন ক্ষতি না হয়,তা ভেবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।এই সরকারের বড় সাফল্য রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে “নকডাউন” নামের বিধি নিষেধ তুলে নিয়ে দেশের মানুষের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক করেছে।একইভাবে জাতির মূল ভিত্তির কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিদ্রুত স্বাভাবিক শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করে জাতির মেরুদন্ড শিক্ষাকে পুর্ণজ্বীবিত করতে প্রধানমন্ত্রীরই হস্তক্ষেপ জরুরী বলে অনেকেই মনে করছেন,তবে আমরা চাই, শিক্ষা সংশ্লিটরাই শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে সক্ষম এবং তা করবেন।
(লেখক,শিক্ষক,নাট্যকার ও গবেষক)।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।