ডেইলি স্টার :
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গত ২১ মাসে হওয়া ৬৬৮টি মামলা পর্যবেক্ষণ করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) জানিয়েছে, এই মামলাগুলোর বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দ্বারা না হয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাদের নেতাদের পক্ষ হয়ে করেন।
যেসব রাজনৈতিক মামলা তারা খুঁজে পেয়েছে, তার ৮৫ ভাগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, যদিও মোট কতগুলো মামলাকে তারা রাজনৈতিক মামলা হিসেবে বিবেচনা করেছেন, সে তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর তিন বছর: একটি পর্যবেক্ষণমূলক ফলাফল’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মামলা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ৭৬টি মামলা করেছে, যা মোট দায়েরকৃত মামলার ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে এই পর্যবেক্ষণের মূখ্য গবেষকের মন্তব্য, ‘আইনটি ভিন্নমতকে অপরাধে পরিণত করছে।’
আগামীকাল ১ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৩ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এই ৩ বছরে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে এই আইনের ব্যবহার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সিজিএস ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮- এর অধীনে দায়ের করা মামলাগুলো চিহ্নিত করে নথিভুক্ত করছে। প্রকল্পটি ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পে মুখ্য গবেষক হিসেবে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিজিএস ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৬৮ টি মামলার বিবরণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই মামলাগুলোয় অভিযুক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫১৬ জন, যার মধ্যে ১৪২ জন সাংবাদিক, ৩৫ জন শিক্ষক, ১৯৪ জন রাজনীতিবিদ, ৬৭ জন শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাংবাদিক ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মামলাগুলোতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিকদের সংখ্যা অসমভাবে বেশি। গ্রেপ্তারকৃত ৪৯৯ জনের মধ্যে ৪২ জন সাংবাদিক, ৫৫ জন রাজনীতিবিদ, ৩২ জন শিক্ষার্থী। এমনকি ১৮ বছরের কম বয়সী ১৩ জনকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সিজিএসের পর্যবেক্ষণ বলছে, এই আইনের অধীনে এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানহানির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৭৪টি। এর মধ্যে ১৩ ট মামলা করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ৬১টি মামলা করেছে অন্যরা।
এছাড়া মন্ত্রীদের মানহানির অভিযোগে ৪১টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৪টি মামলা করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে, ৩৪টি মামলা করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই মামলাগুলো অত্যন্ত ধীরগতির উল্লেখ করে সিজিএস বলেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র ২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। তাছাড়া আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে সাইবার ট্রাইব্যুনালের অনুমোদন সাপেক্ষে আরও ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়। কিন্তু গত তিন বছর ধরে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করার পরেও অভিযুক্ত এখনও হেফাজতে আছে এবং বিচারের আগেই তারা কার্যকরভাবে শাস্তি ভোগ করছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব প্রবণতাতে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং গুরুতর রকমের আশঙ্কাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘এই প্রবণতা দেখাচ্ছে যে কীভাবে একটি আইন উদ্ভূত কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসরমান শাসনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘আইনটির নির্বিচার ব্যবহার বাংলাদেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনটি বাতিল করা জরুরি।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।