চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেছে। জানুয়ারিতে সেমিফাইনাল হবে, সেখানেও আমরা জিতব। আগামী নির্বাচনে হবে ফাইনাল খেলা। সেই খেলায়ও আমরাই জিতব।

চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে সোমবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

প্রথম অধিবেশনে সম্মেলন ও দ্বিতীয় অধিবেশনে হয় কাউন্সিল। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানকে পুনরায় স্ব স্বপদে বহাল রাখার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।

সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে এসে উপস্থিত হন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বিএনপির ১০ দফার বিষয়ে বলেন, বিএনপিই নির্বাচনের কফিনে পেরেক ঠুকে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিল। এদেশে সর্বপ্রথম সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ। আর কোনো দল করেনি। ক্ষমতা হস্তান্তর করে শেখ হাসিনা যখন গণভবনে যান, তখন দেখেন গণভবনে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। ১৩ জন সচিবকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এভাবে গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘মরে ভূত হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না, শুধু পাকিস্তান ছাড়া। সামনের নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। নির্বাচনে সহায়তা করবে শেখ হাসিনার সরকার। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। আমরা চাই নির্বাচন নিরপেক্ষ হোক, স্বচ্ছ হোক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি বলেছিল সরকারের পতন ঘটাবে, ১০ তারিখের পর থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে। তারা সরকারের পতন ঘটাতে এসে নিজেদের পতন ঘটিয়ে দিয়েছে। সরকারের পদত্যাগ চাইতে এসে নিজেরা পদত্যাগ করে বসলেন সংসদ থেকে। বিএনপি মনে করেছে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে সরকারের ভিত নড়ে যাবে। সরকারের একটু কাতুকুতু লেগেছে এর বেশি কিছু হয়নি। তারা যেদিন পদত্যাগ করেছে সেদিনই সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে সংসদের আসন শূন্য ঘোষণা করেছে। সামনে উপনির্বাচন হবে, এখন তারা বুঝবে কি ভুলটি তারা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিতে গিয়ে বিএনপি নিজেরাই ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এমন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে কেউ ধাক্কা দিলে সেই নিচে পড়ে যায়। কঠিন দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেলে, দেওয়ালের যেমন কিছু হয় না, উল্টো যে ধাক্কা দেয় সেই মাথায় ব্যথা পায়। তেমনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ধাক্কা খেতে এলে আওয়ামী লীগের কিছুই হবে না। উল্টো বিএনপি ভেঙে পড়ে যাবে।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা জনগণকে মনে করিয়ে দিতে হবে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। তাহলে মানুষ আওয়ামী লীগকে ছাড়া অন্য কাউকে বেছে নেবে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিএনপি প্রথমে ৫টি আসন পেয়েছিল পরবর্তীতে সংরক্ষিত নারী আসনসহ তাদের ৭টি আসন হয়েছিল। শুনছি এবার তারা ৩৩ দলের সমন্বয়ে নির্বাচন করবে। আশা করবো এবার তারা কিছুটা হলেও বেশি আসন পাবে।

সম্মেলনের উদ্বোধক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে যে চেনে না, সে কবরস্থানও চিনে না। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে অচল করার পাঁয়তারা করছে। যে হাতে তারা আক্রমণ করবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে না দিলে কোনো কাজ হবে না। আগামী দিনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে, মোকাবেলা করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বিএনপি, জামায়াত, স্বাধীনতা বিরোধীদের চিনতে হবে।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, ড. আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।