সিবিএন ডেস্ক:
রিমান্ড শেষে আসামিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা বাধ্যতামূলক হলেও, তা করেননি দুর্নীতি দমন কমিশনের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। আসামিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে কক্সবাজার আদালত থেকে পুনরায় রিমান্ড নেন তিনি। এমন ঘটনায় হতভম্ব আইন বিশ্লেষকরা। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের দৃশ্য মনে পড়লেই এখনও আঁতকে ওঠেন, কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান। তার দাবি, যে মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়- সে মামলায় তিনি জড়িত নন। নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আমি কোনোকিছুর সাথে জড়িত ছিলাম কি না তা আপনারা তদন্ত করে বের করেন। আমার পাঁচদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু রিমান্ড হয়েছে সাতদিনের। একেকদিন একেকভাবে নির্যাতন করা হতো।

আরেক বিবাদী মোহাম্মদ ইদ্রিস জানালেন, আমার রিমান্ডের সময় প্রথম দিন আমি রোজা ছিলাম। আমাকে রোজা ভাঙার জন্য প্রচণ্ড চাপ দেয়া হয় কিন্তু আমি রোজা ভাঙ্গিনি। এরপর আমাকে প্রচণ্ড মারলো। এমনভাবে মেরেছে যে আমি নামাজের সিজদায় যেতে পারছিলাম না। এমন নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করেছে।

তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন। ৯৩ লাখ টাকা উদ্ধারের সে মামলায় বক্তব্য গ্রহণের জন্য তাকে একটি নোটিশ পাঠান দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ। সে নোটিশে তাকে ২০২১ সালের ৭-ই মার্চ হাজির হতে বলা হয়।

বিবাদী মোহাম্মদ ইদ্রিস আরও বলেন, এজন্য আমার যে কাগজপত্রগুলো চেয়েছে সে কাগজগুলো আমি সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম, ঠিক এই মুহূর্তে ৩ তারিখে উনি আমাকে গ্রেফতার করেন। অথচ যে মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার সাথে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুন মাহবুব এ প্রসঙ্গে বলেন, যাকে আপনার সাত তারিখে গ্রেফতার করার কথা তাকে আপনি তিন তারিখে গ্রেফতার করলেন, এটা হচ্ছে অ্যাবিউজ অব দ্য প্রসেস। এবং, এর মাধ্যমে আপনি আইনের বাড়াবাড়ি করেছেন, আইন লঙ্ঘন করেছেন।

এরপর কক্সবাজার বিশেষ জজ আদালত থেকে দুই দফা রিমান্ডে নেয়া হয় মোহাম্মদ ইদ্রিসকে। রিমান্ডের বর্ণনা দিয়ে বিবাদী মোহাম্মদ ইদ্রিস আরও বলেন, আমাকে প্রথম পাঁচদিন কক্সবাজার আদালতে, রিমান্ড শেষে ওইদিন আমাকে চট্টগ্রাম আদালতে প্রেরণ করে। উনি কক্সবাজার থেকে আবার আমার পাঁচদিনের রিমান্ড নেন।

আদালতের নথিও বলছে, ২০২১ সালের ১৮ মার্চ প্রথম দফা রিমান্ড শেষে ইদ্রিসকে হাজির করা হয়, চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে। সেখান থেকে পাঠানো হয়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। অথচ, একই দিনে কক্সবাজারে আদালতে হাজির না করে আবারও রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মঈদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এটা তো হতে পারে না। যে আদালত এখন রিমান্ড দিচ্ছেন তিনি কী করে জানলেন যে সেই আসামি জীবিত আছে না কোথায় গেছে নাকি পালিয়ে গেছে, এটা কী করে জানলেন?

এমন ঘটনায় বিস্মিত তিনি। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মঈদুল ইসলাম আরও বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা যারা তাদেরও কাণ্ডজ্ঞানের যে অবস্থা তাতে আমাদের বিচারের ভবিষ্যত খুব খারাপ দেখছি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনের সেই দোকানে গিয়ে পাওয়া যায়নি শরীফকে। দোকানে না পেয়ে তার বাসভবনে গেলে সেখানেও মেলেনি তার সাক্ষাত। এরপর তার শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো যে, তিনি হজ করতে গেছে সৌদি আরবে। তিনি দেশে ফিরে আসেন ১৫ দিন পর। এরপর বার বার ফোন করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। -সুত্র: যমুনা টিভি।