জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম:
অনলাইন জুয়া যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, খুব শীঘ্রই এটা মহামারি আকার ধারণ করবে। করোনা মহামারিসহ শারীরিক অসুস্থতাজনিত যত মহামারী আছে সবকিছু নির্মূলে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকলেও অনলাইন জুয়া নামক মহামারী নির্মূলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের কোন মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষ সূত্র জানায়, শহরের মতো কর্ণফুলীর বিভিন্ন গ্রামে এখন অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। অনলাইন জুয়া এখন তাদের কাছে এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বকাটে, কিশোর ও শিক্ষার্থী, বিভিন্ন চাকরিজীবীসহ বেকার যুবক। তারা মাস শেষে যে বেতন পান সেটাও অনলাইন জুয়ার পেছনেই খরচ করেন। কখনো কখনো আবার সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে জুয়া খেলেন।
জুয়ার কারণে তাদের অনেকেরই স্ত্রী চলে গেছে। সংসার ভেঙেছে। মারামারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে লিপ্ত তারা। সূত্র জানায়, অনলাইন জুয়া চক্রের নাটেরগুরুরা এখনো অধরা। ইছানগরের বিএফডিসি গেইট সংলগ্ন বিভিন্ন দোকান অটো রিকশার গ্যারেজে প্রতিদিন চলে অনলাইন জুয়া। এছাড়াও শিকলবাহার মাষ্টার বাজার এলাকার একাধিক দোকান ও ক্লাব ঘরে চলছে জুয়া। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জুয়া এখন অফলাইন ছেড়ে অনলাইনে।
তিনপাত্তি গোল্ড মূলত একটি অ্যাপ, যা মুঠোফোনে ডাউনলোড করে খেলা যায়। এই অ্যাপের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ মুনফ্রগ ল্যাবসের হাতে। এটি ছাড়াও ‘রাখি’, ‘অন্দর বাহার’ ‘চিপস’ ও ‘পোকার’ নামের অনলাইন জুয়ার গেমস আছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়- রাশিয়া থেকে পরিচালিত জুয়ার সাইট বেটউইনার (betwinner) ও 1xbet-সহ একাধিক সাইটে বাংলাদেশিদের লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় যুক্ত। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমেও পেমেন্ট করার সুযোগ। ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা যায় এসব সাইটে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে ২০১৯ সালে বন্ধ করা হয় অনলাইনে জুয়া খেলার ১৭৬টি সাইট। চলতি মাসের ১০ তারিখ ৩৩১টি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করে বিটিআরসির ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল’। ‘গুগল’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত ১৫০টি গুগল অ্যাপস বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হলে এরই মধ্যে গুগল কর্তৃপক্ষ প্লে স্টোর থেকে ১৪টি অ্যাপস বন্ধ করেছে এবং অবশিষ্ট অ্যাপস বন্ধের জন্য যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ছে জানিয়ে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
একই সঙ্গে ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট ও গুগল অ্যাপসের প্রচার এবং অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ায় এ ধরনের ২৭টি ফেসবুক লিংক, ৬৯টি ইউটিউব লিংক বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি ফেসবুক লিংক ও ১৭টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট লিংক বন্ধের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
অনলাইনে জুয়া খেলেন বা বাজি ধরেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন জুয়ার সাইট ওয়ানএক্সবেট (1xbet)। এছাড়া বেটউইনার, বেট৩৬৫, মেলবেট, প্যারিম্যাচ সাইটও বেশ জনপ্রিয়। এগুলোর বিজ্ঞাপন নিয়মিত দেওয়া হয় ফেসবুকে। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত এ সাইটগুলোতে ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলা নিয়ে বাজি ধরা যায়। ক্রিকেটে প্রতি বলে বলে, ম্যাচের প্রথম ওভারের প্রথম বলে, প্রতি ওভারে, প্রতি ম্যাচের প্রথম ছয় ওভার, পরবর্তী ওভারে উইকেট যাবে কি না ও কোন দল জিতবে এমন করে জুয়ার ক্যাটাগরি সাজানো।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ইন্সপেক্টর সঞ্জয় গুহ বলেন, ‘সর্বনাশা এই অনলাইন জুয়ার কবল থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে সবার আগে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই বিশেষায়িত টিমের এই কর্মকর্তা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।