ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন ভিসি:

দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধকে ধারণ করে জাতির চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

প্রকাশ: ২২ জুন, ২০২৩ ০৩:৪২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধকে ধারণ করে জাতির চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য শিক্ষক ও গবেষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প ২০৪১’ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে নেতৃত্ব দিতে হবে। আজ ২১ জুন ২০২৩ বুধবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

অধিবেশনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ৯১৩ কোটি ৮৯লাখ ৮৭হাজার টাকার রাজস্ব ব্যয় সংবলিত প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ৯২৪ কোটি ৫০লাখ ৩৫হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। উপাচার্যের অভিভাষণের পর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এই বাজেট উপস্থাপন করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, জাতীয় উন্নয়নে সরকারের স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা, গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রশাসনিক দক্ষতা, পরিবেশ-প্রকৃতি, সময়োপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন, আদর্শ মানব সম্পদ তৈরিসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমাদের নিরন্তর কাজ করতে হবে। জেন্ডার সমতা, ন্যায়বিচার, নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ন্যানোটেকনোলজি সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে শেখ কামাল-সুলতানা কামাল ট্রাস্ট ফান্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯০টি ট্রাস্ট ফান্ড রয়েছে। এসব ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৩হাজার শিক্ষাথীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।যৌথভাবে বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং যুক্তরাষ্ট্র ও স্থানীয় একটি বায়োটেক কোম্পানি অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতামূলক গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে। গবেষণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটি বায়োসিমিলার কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে এবং ইঁদুরের দেহে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক হিসাব ডিজিটালাইজড করার অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র অ্যাকাউন্টস ড্যাশবোর্ড চালু করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সনদপত্র, নম্বরপত্র ও ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের কাজ সম্পন্ন করতে পারছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ই-নথি’ কার্যক্রম প্রবর্তনের উদ্যোগ শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিদ্যমান নানামুখী চ্যালেঞ্জের সময়োপযোগী সমাধানের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটলে শিক্ষার্থীদের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার সামগ্রিক গুণগত মান উন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ^বিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং উন্নত করার লক্ষ্যে ‘টিচিং ইভ্যালুয়েশন’ সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশি বিশ^বিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ মুহূর্তে ১৬১টি বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। উপাচার্য বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির নীতিমালা যুগোপযোগী করা হয়েছে। এ নীতিমালায় উচ্চতর পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি পেতে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি ও প্রকাশনার শর্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রকাশনা ও গবেষণার মৌলিকত্ব এবং স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার উন্নয়নে ‘প্ল্যাজিয়ারিজম পলিসি’ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রকাশনা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে গতবছর প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে দু’দিনব্যাপী ‘গবেষণা-প্রকাশনা মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে ‘সেন্টিনিয়াল রিসার্চ গ্রান্টস্’-এর আওতায় ২৫১টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধিবেশনে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বক্তব্য রাখেন। উপাচার্যের অভিভাষণ ও কোষাধ্যক্ষের বাজেট বক্তৃতার উপর সিনেট সদস্যগণ আলোচনায় অংশ নেন।

ক্যাপশন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আজ ২১ জুন ২০২৩ বুধবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে অভিভাষণ প্রদান করেন।