নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার শহরের খুরুশকুল ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এখানে নির্মিত হয়েছে দোকানপাট। সরকারি জায়গা বিক্রি ও ভাড়া থেকে লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। বছরের পর বছর রয়ে যায় অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু উচ্ছেদ হলো ব্যায়ামের জায়গায় বসার স্থান, সাইনবোর্ড। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ব্রিজের দক্ষিণ পূর্ব খালি জায়গায় দীর্ঘ এক যুগ ধরে ব্যায়াম করে আসছিল বিভিন্ন বয়সী, নানা শ্রেণী পেশার লোকজন। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে ঘন্টা-দেড়েক সময় ধরে এখানে তারা ব্যায়াম করে। পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়েও আলোচনা হয়। প্রায় দেড়শ লোকের প্লাটফর্মটির নাম “স্বাস্থ্য কল্যাণ ব্যায়াম পরিষদ”। যেখানে শিক্ষক, আলেম, ব্যাংকার, ক্রিড়াবিদ, সমাজসেবক, সাংবাদিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ যুক্ত রয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির ব্যানারে ব্যায়ামের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় দিবসসমূহ যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়।
অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের মালিকানাধীন জায়গাটি দখলে নিতে অনেকদিন ধরে চেষ্টায় আছে চিহ্নিত একটি চক্র। পরিকল্পনা করেছে দোকানঘর নির্মাণের। সে মতে এগোচ্ছে তারা।
সড়কের দুই পাশে সরকারি জায়গা দখল করে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে উঠেছে। সেগুলো উচ্ছেদ না করে, কেবল শরীরচর্চা করতে আসা লোকদের বসার স্থান ও সাইনবোর্ড গুড়িয়ে দিল বুলডোজার দিয়ে। যেন মশা মারতে কামানের ব্যবহার!
সড়ক বিভাগের এমন কাজটিকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও একপেশে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কথা ভিন্ন। আদালতের আদেশে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুস্তফা মুন্সী।
তিনি বলেন, পাশের বাড়িওয়ালা হাইকোর্টে একটি রিট করেছে। ৩০ দিনের ভেতর জানাতে হাইকোর্ট আমাদের নির্দেশ দেয়। তাই স্থাপনা ভেঙ্গে লেভেল করে হাইকোর্টকে জানিয়েছি।
খুরুশকুল ব্রিজ সংলগ্ন এই জায়গাটিতে শুধু স্বাস্থ্য কল্যাণ বিয়াম পরিষদ নয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে। সন্ধ্যা ও রাতে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল খেলে ক্রীড়ামোদীরা। সরকারের যতদিন প্রয়োজন পড়বে না ততদিন খোলা জায়গাটি ব্যবহারের সুযোগ চায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্বাস্থ্য কল্যাণ ব্যায়াম পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোঃ আখতার উদ্দিন হেলালি বলেন, ব্যায়ামের মাঠে নির্মিত অস্থায়ী বসার বেঞ্চ ও ফুলের গাছের স্থাপনা গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে ভেঙ্গে দেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের লোকজন।
প্রকৃতপক্ষে এজমির মালিক বিএফডিসি। তাদের কাছ থেকে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের স্থাপনা নির্মাণ করার শর্তে ইজারা নেয় ‘ইষ্ট এশিয়া এন্টারপ্রাইজেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ধরণের মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন না করায় প্রতিষ্ঠানটির ইজারার কর্যকারিতা হারিয়েছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ প্রায় অর্ধেক জমি অধিগ্রহণ করে নেয়। বিএস খতিয়ান ও মূল মালিকানা বিএফডিসির হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি কোন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারও রাখে না।
ব্যায়ামের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত সড়ক বিভাগের জমিটি নিজেদের দাবি করে অবৈধ দোকান ও স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি এই জমি শুধুমাত্র ব্যায়াম পরিষদের কারণে দখল করতে পারছে না তারা, এমন মন্তব্য এডভোকেট আখতার উদ্দিন হেলালির।
তিনি বলেন, হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি রীট করে চিহ্নিত চক্র। সেই রীটের আদেশকে ‘মিসইউজ’ করে ব্যায়াম পরিষদের কোন বক্তব্য না শুনে অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙে দেয় সড়ক বিভাগ।
অথচ সড়কের বাকি দুই পাশে বহু অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে দখলবাজরা।
এদিকে, উচ্ছেদের পর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাথে দেখা করেন ব্যায়াম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এই ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। এর আগে এই জায়গায় ব্যায়াম করতে মৌখিক অনুমতি দিয়েছিল সড়ক বিভাগ। এরপরও কেন উচ্ছেদ করা হলো, প্রশ্ন সবার।
ব্যায়াম পরিষদের অন্যতম সদস্য ও খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ফয়জুল্লাহ বলেন, সড়ক বিভাগের বিভিন্ন খালি জায়গা দখল হয়ে গেছে। আমরা ব্যায়াম না করলে এটিও দখল হয়ে যেত। বর্তমানে ব্যায়ামের জায়গাটিতে দোকান করতে চাচ্ছে একটা গ্রুপ। সে জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সড়কের কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। আমরা ব্যায়ামের মাঠটি স্বাভাবিক নিয়মে ফেরত পেতে চাই।
প্রশিক্ষক মাস্টার মাহবুবুল হক বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমরা ব্যায়াম করতেছি। মাঠের জন্য কউক, জেলা পরিষদ অনুদান দিয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরও আর্থিক সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, অনেকটা ডোবা শ্রেণীর জায়গাটি আমরা ভরাট ও সংস্কার করে ব্যবহারের উপযুক্ত করেছি। সাধারণ মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার একটি জায়গা হয়েছে।
এখানে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা আছে। রাস্তার উপর ঘর, দোকান হয়েছে। তাতে হাত না দিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নির্দিষ্ট একটি জায়গায কেন উচ্ছেদ? এখানে এলাকার ছেলেরা খেলাধুলা করে। মানুষ একটু বিশ্রাম নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুশ শুক্কুর বলেন, এক ঘন্টা ব্যায়াম করে আমরা চলে যাই। এরপর এলাকার ছেলেরা ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলে। মানুষজন বিশ্রাম নেয়।
তিনি বলেন, আমরা দখল করেছি বলে হাইকোর্টে রীট করেছে একটি মহল। তারাই মূলত আদালতের দোহাই দিয়ে এই জায়গা দখল করতে চাচ্ছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।