এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার:

হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে ফল বিক্রেতা সিন্ডিকেট। পাইকারি আড়ত থেকে কম মূল্যে ফল কিনলেও খুচরা পর্যায়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সব ধরনের ফল। তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিবারের জন্য যারা নিয়মিত ফল কিনতেন, তারা বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। এছাড়া খুব প্রয়োজনে খরচ সমন্বয় করতে একটি—দুটি করে ফল ওজন দিয়ে কিনছেন। ফলে একদিকে ভোক্তার পকেট কাটা যাচ্ছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার ফল কিনতে পারছে না।

বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের বাজারঘাটা, ফায়ার সার্ভিস এলাকা ও বনবিভাগে সম্মুখে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, রক্তচোষা বিভিন্ন ফলের দাম। যা কিনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। দোকানগুলোতে প্রতি কেজি আম ৩৫০ টাকা, মাল্টা ৩৮০ টাকা, কলা হালি ৮০ টাকা, পেয়ারা ১৮০ টাকা, কমলা, ৩৫০ টাকা, আপেল ৩৫০—৪০০ টাকা, আঙুর ৫০০—৬০০ টাকা, আনার ৪৭০—৫০০ টাকা ও নাশপাতি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগেও ফলের দাম কেজি প্রতি গড়ে ছিল ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। বিক্রেতারা বলছে, পাইকারিভাবে প্রতিদিন মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। একদিন কমলে অন্যদিন বাড়ে। তবে এর নেপথ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে ধারণা করছেন তারা।

ফল কিনতে আসা ওসমান ও তারেক জানান, “এক সময় সপ্তাহে দুই দিন পরিবারের জন্য ফল কিনে বাড়ি ফিরতাম। অসহনীয় দামের কারণে এখন আর কেনা হয় না। নিত্যপণ্য মূল্যসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বেড়েছে। তাই খুব দরকারে একটি—দুটি করে ফল নিয়ে ওজন মেপে যে টাকা হয় সেভাবে ফল কিনতে হচ্ছে। দোকানি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আপেলের দাম চাচ্ছে। তাই দুটি আপেল কিনেছেন। এখন দুটি মাল্টা ওজন দিচ্ছি। ওজনে যে দাম হবে সেটা দিতে হবে। তিনি জানান, ফলের কোনো সংকট নেই। তারপরও বিক্রেতারা বাড়িয়ে বিক্রি করছে।”

কক্সবাজার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, “বিদেশি ফলকে ‘বিলাস-পণ্য’ দেখিয়ে অতিরিক্ত এলসি মার্জিন ও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে গত বছর ঠিক একই সময়ের তুলনায় সব ধরনের ফলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট অতি মুনাফার লোভে দাম আরও বাড়াচ্ছে। কারণ পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে হবে।”

বনবিভাগের সামনে ফল বিক্রেতা জাহেদ ও জালাল বলেন, “পাইকারি বাজার থেকে আমরা যে দরে ফল আনি, কিছু লাভে তা বিক্রি করি। আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। পাইকারি পর্যায় থেকে ফল আনতে কিছু ফল নষ্ট হয়।”

কক্সবাজারের বণিক বার্তার প্রতিনিধি ছৈয়দ আলম বলেন, “বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিস অকেজো। দীর্ঘদিন ধরে এখানে সহকারী পরিচালক নেই। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাথা ব্যথা নেই। মানুষ বাজারে গিয়ে আগুনে পুড়ছে। তা দেখার কেউ নেই।”

বাসায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রেখে বাজারঘাটায় ফল কিনতে এসেছেন কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম। ফলের দাম প্রসঙ্গে তিনি হাস্যরস করে বলেন, “মাল্টা—কমলার যে দাম, রোগীর জন্য নিয়ে গেলে দাম শুনেই আবার বেহুঁশ হয়ে যেতে পারে।”

তিনি বলেন, বাজারে ফলমূলের অসম্ভব দাম। আগে আমরা ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২২০ টাকা দিয়ে মাল্টা কিনেছি। এখন সেই মাল্টা কিনতে হয়েছে ৩৮০ টাকা কেজি। এটা তো আসলে অসম্ভব দাম। দাম বেশি হলেও তো কিছু করার নেই। ডেঙ্গু রোগী বাসায়, তার জন্য বেশি দামে হলেও কিনে খাওয়াতে হবে। টাকার চিন্তা করে তো কোনো লাভ নেই। আমাদের দেশের মানুষ অনেকটা হুজুগে প্রকৃতির। কেউ কিছু একটা বললে সবাই এটাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর এই সুযোগটাই সব সময় সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা নিয়ে থাকে। কিছুদিন আগে ডেঙ্গুতে ডাবের উপকারিতার কথা উঠে আসায় দাম হয়ে গেছে দ্বিগুণ। এখন আবার মাল্টার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সবই আসলে ব্যবসায়ীদের কারসাজি।