জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথি করায় সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাবির সাদা দল সহ বিভিন্ন সংগঠন। কেউ আবার ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর আগমনের নিন্দা জানিয়ে সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে গণসংহতি
আন্দোলনের ছাত্র সংগঠন “বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন” ।একই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ রোববার ২৯ অক্টোবরর (২০২৩) বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক ও সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা এক যৌথ বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতিথি হিসেবে আগমনের নিন্দা জানান ও প্রতিবাদে সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “বর্তমান সরকারপ্রধান দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনা করছেন। এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কবলে পড়ে বাংলাদেশের প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ভেঙে পড়েছে। সর্বত্র চাটুকারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ছড়াছড়ি। আজ যেখানে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার দাবিতে দেশের সর্বত্র আন্দোলন চলমান, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা তোষণে ব্যস্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ঘৃণাভরে এই সমাবর্তন বর্জন করছে।“
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। ক্যাম্পাসে হলগুলোর দৈন্যদশা। প্রতিটি হলে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের উৎপাতে ছাত্রদের জীবন অতিষ্ঠ, তার সাথে যুক্ত হয়েছে ক্যান্টিনে খাবারের ভয়াবহ উচ্চমূল্য। একদিকে ক্যান্টিনের খাবারের উচ্চমূল্যে ছাত্র আধা পেটে দিন কাটায় ,অন্যদিকে প্রশাসন মল চত্বরে স্থাপনা নির্মাণ ও বঙ্গবন্ধুকে ডিগ্রি প্রদানে ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে চাটুকারিতায় ভরা এই সমাবর্তন আমাদের ক্যাম্পাসের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পরিপন্থি। তাই চোখ ধাঁধানো মিথ্যা আয়োজনে প্রভাবিত না হয়ে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
সাদা দলের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন:
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন বর্জন করেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
গত বৃহস্পতিবার ২৬ অক্টোবর(২০২৩) সাদা দলের এক বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়ে আমরা ভিন্নমত পোষণ করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার লালন কেন্দ্র। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি, পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসক, এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা আমরা সবাই জানি।
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এমন একজন প্রধানমন্ত্রীকে, যার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও বাকস্বাধীনতা হরণ করছে।
আসিফ মাহমুদ: সরকারের নির্দেশে গতকাল বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগ এনে আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ।
তিনি আজ ২৯ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই ঘোষণা দেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।