আ.ন.ম মাঈন উদ্দিন

আধুনিক সভ্যতার যুগে মানুষের অস্তিত্বের সাথে যতগুলো বিষয় জড়িত আছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ অন্যতম। সভ্যতার উন্নতির ধারায় বিদ্যুতের ভূমিকা অপরিমেয়। বর্তমান আধুনিক জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের জীবনে নতুন ছন্দ যোগ হয়েছে। বর্তমান সভ্যতার ক্রমবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারের কারণে বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা যায় না। বিদ্যুৎ কে তাই বলা হয়ে থাকে আধুনিক জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি।
এখানে ১৯৮০ সালে কুতুবদিয়া দ্বীপের সদর ইউনিয়ন বড়ঘোপ এলাকায় ডিজেল দিয়ে পরিচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। পুরানো সেই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন গ্রাহকদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে মর্মে পত্র পত্রিকা সূত্রে জেনেছি। প্রকল্পের অধীনে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া। কুতুবদিয়াকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সাগরের তলদেশ দিয়ে ২ লেনে ৬ কিলোমিটার ক্যাবল বসানো হয়েছে। সেখানে ১২ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন উপকেন্দ্র এবং ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। কুতুবদিয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দ্বীপবাসীর জন্য একটি বড় স্বপ্ন পূরণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করে দেখালেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,এমপি মহোদয় ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের আন্তরিকতায় এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলো। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
কিন্তু কেউ পাবে আর কেউ পাবে না সেই নীতি বর্তমান ডিজিটাল যুগে হতে পারে না। অত্র উপজেলাধীন উত্তর ধূরুং ‘সতরুদ্দীন’একটি জনবহুল গ্রাম। গ্রামটিতে শিক্ষার হার আশানুরূপ। গ্রামের জনগণ নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গ্রামটি বিদ্যুৎ-সংযোগ হতে আজও বঞ্চিত রয়েছে। সংশ্লিষ্টগণ আশা দিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। গ্রামটির অর্ধ কিলোমিটারে মধ্যে আশপাশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। শুধু এ গ্রামের মানুষই আধুনিক সুবিধা থেকে এখনও বঞ্চিত। সকলের জানা আছে যে, এখানে সতরুদ্দীন “ধূরুং ঘাট” নামে একটি ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম ছনুয়া ঘাটে পারাপারের একটি ঘাট রয়েছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ থাকলে গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা দ্রæত বদলে যেতো। এতৎসঙ্গে এখানকার স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম সহজতর হতো।
যদিও আজ সত্যিই দ্বীপবাসীর দীর্ঘকালের একটি লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। আজ দ্বীপবাসীর ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই গ্রামবাসীর ঘরে তো আনন্দ নেই, নেই কোন উচ্ছ্বাস আর আধুনিকতার ছোঁয়া। আজীবন অবহেলায় থেকে গেলো এই এলাকার জন মানব। শুনেছি নাকি, খুঁটির অভাবে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম হচ্ছে না। সেইদিন মিডিয়ার বরাতে জাহাজ ভর্তি খুঁটি দেখে আশান্বিত হয়েছিলাম যে, এবার হয়ত এই জনগোষ্ঠীর কপাল খুলবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখনো আলোর মুখ দেখে নাই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কুতুবদিয়ায় সকল সুযোগ সুবিধা উপজেলায় বসবাসকারী জনগণ সবার আগে পেয়ে থাকলেও প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী সবসময় অবহেলায় থেকে যায়। স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একমাত্র চলাচলের রাস্তা অর্ধ কিলোমিটারের বেঁড়িবাধ এর উপর নেই কোন ইট ও কার্পেটিং। যার ফলশ্রুতির বহিঃপ্রকাশ এলাকার শিক্ষার্থী সহ বসবাসরত মানুষদের সুদূর উপজেলায় গিয়ে তাদের দৈনন্দিন কার্য সমাপ্ত করা কষ্টসাধ্য।
কুতুবদিয়ার মানুষ শিক্ষিত ও ক্রিয়েটিভ মানোভাবের। তাই কুতুবদিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতায়নে ও এতৎসঙ্গে অনতিবিলম্বে সতরুদ্দীন ঐতিহ্যবাহী “ধূরুং ঘাট” পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গ্রামবাসীর জীবনমানের উন্নতি সাধনের সুযোগ করে দিতে মাননীয় এমপি মহোদয় সহ সংশ্লিষ্টদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


লেখক : আ.ন.ম মাঈন উদ্দিন , সিনিয়র শিক্ষক ও জেলা অ্যাম্বাসেডর (a2i)