রশীদ আহমেদ চৌধুরী

সম্প্রতি চীন সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন “আমার বাসায় কাজ করে গেছে যে পিয়ন সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না, কী করে বানাল সে এ টাকা, যখন আমি জেনেছি , তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি”(প্রথম আলো তারিখ- ১৫-৭-২০২৪) তিনি এ প্রসংগে আরো বলেন,” আমি কঠোর হয়েছি বলেই দূর্নীতিবাজরা ধরা পড়ছে, এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারের ইমেজ নস্ট হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না”

প্রধানমন্ত্রীর এ সাহসী বক্তব্যকে আমি স্বাগত জানাই সাধুবাদ জানাই । তাঁর এ যুগান্তকারী ভাষনের মধ্য দিয়ে এ সমাজের প্রত্যেকস্তরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির কি ভয়াবহ বিস্তারলাভ করেছে তার চিত্র ফুটে উঠেছে। অতি সম্প্রতি পিএসসি’র ড্রাইভার আবেদ আলী গংদের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে একেক জনের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার খবর জাতি জানলো।

বেনজীর, আজিজ, ছাগল কান্ডের মতিউর ও সাদিক এগ্রোর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর টক অবদি কান্ট্রি। আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় অর্জন গুলো দুর্নীতির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। অর্জনের উজ্জ্বলতা দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মাত্র কিছুদিন পূর্বেও জাতীয় অর্থনীতি, রাজনীত ও সামাজিক সব সূচকে উন্নতির বিস্মকর চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার চেয়ে সব সূচকে আমাদের দেশ এগিয়ে ছিল।উন্নয়নের রোল মডেল তকমা পাওয়া দেশ এখন দুর্নীতির শিরোপা পেতে যাচ্ছে।

কিছুদিন পূর্বেও সমাজে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে সবাই ঘৃণা করতো এড়িয়ে চলতো, একঘরে করে ফেলতো।কেউ তাদের সাথে সামজিক সম্পর্ক করতে চাইতো না। এখন দিন পাল্টেছে, মূল্যবোধ পাল্টেছে। এখন সামাজিক সম্পর্ক করতে গেলে জিজ্ঞেস করে ছেলে কি চাকুরী করে, উপরি কতো পায়। এখন দুর্নীতিবাজদের কদর বেশী। তাদের প্রভাব বেশি। সম্পদের পাহাড় বেশী। তাদের চাকচিক্যময় জীবনের দ্যোতি দেখে তরুন সমাজ হতাশাগ্রস্থ হচ্ছে। সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। তরুনরা দুর্নীতি বাজদের মত সম্পদের পেছনে ছুটতে গিয়ে বিপদগামী হচ্ছে। দুর্নীতি চিহ্নিতকরন,প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য দেশে আইন আছে,সংস্থা আছে।কিন্তু ওই সবের কোন প্রয়োগ না থাকার কারনে দুর্নীতি হ্রাস পাওয়া তো দুরের কথা বরং তা দিন দিন দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সমাজদেহে এ দুর্নীতি ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে গেছে। বেনজির, আজিজ, মতিউর, আবেদ, ড্রাইভার ও পিয়ন কান্ড গুলি তারই সিম্টম। তাদেরকে ধরপাকড় রিমান্ড জেল নির্যাতন হচ্ছে মলম। মলম চিকিৎসা দিয়ে ক্যানসার সারবে না, তার জন্য দরকার সার্জারী। তার জন্য দরকার সার্জন।

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবারে, পাড়ায়, মহল্লায়, ক্লাব সোসাইটিতে সমাজের প্রতিটি স্তরে এ লুটেরাদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্ত্রী, ছেলে মেয়েদেরকে তার স্বামী, পিতা মাতার অজ্ঞাত আয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে হবে। তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে তাদেরকে অপকর্মের কোশেয়ারার বানিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়া থেকে বিরত রাখতে হবে। পরিবারে নৈতিক শিক্ষার বিস্তার করতে হবে। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে কারিকুলামে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নৈতিকতার ভিত্তিতে শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সমাজকে নতুনরূপে গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: আয়কর আইনজীবী