জালাল আহমদ,ঢাবি :

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল গুলো এখনো দখলদার মুক্ত হয় নি।ঢাবির আবাসিক হল গুলোতে নানা পরিচয়ে এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ, অবৈধ ও ‘বহিরাগত’ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কে পুর্নবাসনের অভিযোগ উঠেছে।

কয়েকটি হলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে অভিযোগের ‘সত্যতা’ পাওয়া গেছে।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে অবৈধভাবে রুম দখল করে ‘মহারাজার’ রাজত্ব করছেন রনি:

রেলওয়ের টিকেট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ‘মহিউদ্দিন রনি’। সেই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অন্যায় -অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। অথচ সেই রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে অন্যায়ভাবে রুম দখল করে অবৈধভাবে থাকছেন। তিনি পুরো হলে মহারাজার মত রাজত্ব কায়েম করছেন!

মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি হন। এখনো তার ছাত্রত্ব আছে বলে দাবি করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পরদিন ৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকহলসমূহ খুলে দেওয়া হয়। সেদিন থেকেই হলে শুরু হয় রনির রাজত্ব।তার অনুমতি ছাড়া কাউকে হলে না উঠতে নির্দেশ দেন বলে কয়েকজন ছাত্র অভিযোগ করেন। তার সাথে দেখা করে হলে উঠতে বাধ্য হন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেলো কোটা সংস্কার আন্দোলনে মহিউদ্দিন রনি সমন্বয়ক বা সহ সমন্বয়কের কোন পদে ছিলেন না। তবে আন্দোলনে সক্রিয় উপস্থিতি ছিলো তার ।

৬ আগস্ট হল খোলার পর তিনি শিক্ষার্থীদের খাওয়াইয়ে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা দিয়ে হলে আধিপত্য বিস্তার শুরুর চেষ্টা করেন।

মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্দেশের অভিযোগ উঠেছে রনির দিকে। অভিযোগ উঠেছে, হল থেকে বের করা বাইকের একটি বিক্রি করে ফেলা হয়েছে আর কয়েকটি বাইকের চাবি পরিবর্তন করে তার ছোট ভাইদের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন রনি।

রনির রুমে গিয়ে যা জানা গেল:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ২৭৪ রুমে থাকেন রনি। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের ছাত্র শেখ রেজওয়ান আলীর নামে ২৭৪ রুমটি বরাদ্দ হলেও দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আশিক এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একই সেশনের শিক্ষার্থী আলিম কে নিয়ে রুমে থাকছেন রনি।তাদের কারো আবাসিক কার্ড নেই।

ছাত্রদলকে হলে উঠতে বাধা :

ছাত্রত্ব আছে এমন কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী হলে উঠতে গেলে তাদের বাধা দেন মহিউদ্দিন রনি। ফলে তারা হলে উঠতে পারে নি।

সার্বিক বিষয়ে মহিউদ্দিন রনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “হলে তার বৈধ রুম নেই- এটা সত্য। তবে তার ছাত্রত্ব আছে। তিনি এখনো অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।”

মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ কে ‘অপবাদ’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি।

তবে ছাত্রত্বের পে ইন স্লিপ এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠানোর কথা থাকলেও গত দুই দিনে তিনি পাঠান নি। পরে কল দিলেও তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যান্য হলেও দখলদারিত্ব:

অমর একুশে হল নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড একজন সমন্বয়ক,এক বছর আগে যার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে।

বিজয় একাত্তর হল সহ কয়েকটি হলের ভিতরে ঢুকতে গেলে গেটের সামনে একদল শিক্ষার্থীকে জবাবদিহি করতে হয়। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানান, “আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী।” বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন পদে আছেন কিনা জানতে চাইলে তারা উত্তর দিতে অপারগ।

ফজলুল হক মুসলিম হল সহ কয়েকটি হলে প্রশাসনিক সামান্য নিয়ন্ত্রণ থাকলেও মুহসীন হল সহ কয়েকটি হলে প্রশাসনের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নাম্বার রুমের আগে দখলদার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা আইনুল ইসলাম মাহবুব। ছাত্রলীগ হলের নিয়ন্ত্রণ হারালে মাহবুব হল ছেড়ে চলে যায়। হলে উঠার জন্য ছাত্রলীগ থেকে পল্টি মেরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাজলেও হলে উঠতে ব্যর্থ হন। তার রুম দখল করে থাকছেন আরবি বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহ।

ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে পুর্নবাসনের অভিযোগ :

ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কে পুর্নবাসনের অভিযোগ উঠেছে।কবি জসীম উদ্দিন হলের ছাত্র মতিউর রহমান জানান,“কুমিল্লা নিবাসী ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড সমন্বয়কদের সহায়তায় গত ১৫ জুলাই আমাদের উপর হামলাকারী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা এখনো অবস্থান করছে। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কে পুর্নবাসনের অভিযোগ রয়েছে আরো কয়েকটি হলে।

মেয়েদের হলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ : রোকেয়া হল সহ মেয়েদের কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করলেও হাউস টিউটরদের সক্রিয়তার কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে ।

সার্বিক বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম,সারজিস আলম সহ কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করলেও তারা কল রিসভি করেন নি।ফলে তাদের বক্তব্য পাওয়া নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এএসএম মাকসুদ কামাল সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে কেউই দায়িত্ব গ্রহণ করেনি।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার জানান,“ কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করার কারণে এসব দখলদারিত্ব ও অপকর্ম হচ্ছে। প্রভোস্ট পদত্যাগ করলেও হাউস টিউটরদের সহায়তায় প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে।তারা বিষয়টি দেখবেন।”