চকরিয়ায় গণসংবর্ধনায় সালাহউদ্দিন আহমেদ

শেখ হাসিনার শেষ রক্ষা নাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই তার বিচার হবে

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০৯:১৩ , আপডেট: ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০৯:১৩

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ইমাম খাইর, সিবিএন:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। পৃথিবীর যেই প্রান্তেই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, তার বিচার বাংলাদেশের আদালতে হবে এবং তার বানানো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হবে। প্রয়োজনে তাকে টেনে-হেচড়ে দেশে আনা হবে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনাল চত্বরে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা ও মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি যৌথভাবে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের বিচার বিভাগ ঢেলে সাজাতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদদের দাবি ছিল বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র। যেখানে আইনের সুশাসন থাকবে সমান, অধিকার সমুন্বত থাকবে। আমরা আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব। যে বিচারক বাংলাদেশের প্রকৃত বিচারক হবে। দক্ষ, সৎ, আইনের সুশাসন কায়েম করবে এবং ন্যায় বিচারক হবে। যদি তা না হয়, আমি বলব বিচারপতি খায়রুল ও কালো মানিকের মতো অবস্থা হবে।

চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফখরুদ্দীন ফরাজীর সঞ্চালনায় গণসংবর্ধনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, জেলা বিএনপি নেতা এম মোক্তার আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট হাসান সিদ্দিকী, জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ আহমদ উজ্জল, চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী।

বুধবার সকাল ১১ টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান সালাহ উদ্দিন আহমেদ। সেখান থেকে সোজা চকরিয়ায় সমাবেশে বক্তব্য দেন। এরপর দলের নেতা-কর্মীরা মোটর শোভাযাত্রা সহকারে পেকুয়ায় পৌঁছেন। পূর্ব নির্ধারিত চৌমুহনিতে দলীয় সভায় বক্তৃতা করেন।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দুটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। এছাড়া সালাহ উদ্দিন আহমেদকে বরণ করতে পথে পথে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে সংখ্যক মানুষ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

সংবর্ধন অনুষ্ঠানে চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে গুমের শিকার হয়ে ভারতের শিলং থেকে দীর্ঘ ১০ বছর পর এলাকায় ফেরার খবরে বিএনপির পাশাপাশি সাধারণ মানুষও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।
বুধবার দুপুর থেকে চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনালের এলাকা পেরিয়ে আশপাশের দোকানপাট, বহুতল ভবন, এমনকি বাসা বাড়িতেও লোকজন অবস্থান নেয়।
তার আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে মিছিল সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেয় দলীয় নেতাকর্মীরা।
সালাহউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে হাজির হতেই বজ্রকন্ঠে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মঞ্চে উঠেই সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। কড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার কষ্ট ভুলে যায় উপস্থিত স্বতঃস্ফূর্ত জনতা।

জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ এর বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া সদরে। দীর্ঘ ১০ বছর ২ মাস ১৪ দিন পর নিজ এলাকায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুটি গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে স্থানীয় বিএনপি।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ জুন কক্সবাজারে জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২০১৫ সালের ১০ মে রাতে রাজধানী ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। দুই মাস একদিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের গলফ কোর্স ময়দান থেকে উদ্ধার হন তিনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েক দিন পর সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর কুমিল্লাসহ কয়েকটি বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে দুইবার ( ১৯৯৬ ও ২০০১) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদও একবার (২০০৮) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।