মোঃ ফারুক,পেকুয়া:

দীর্ঘ ১০বছর পর নিজ জন্মভূমি পেকুয়ায় এসে লক্ষ জনতার সামনে বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ।

বুধবার (২৮আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে পেকুয়া চৌমুহনীস্থ চত্ত্বরে পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সদর ইউপির চেয়ারম্যান এম বাহাদুর শাহ’র সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন ও যুগ্ন-সম্পাদক এম শাহনেওয়াজ আজাদের পরিচালনায় সংবর্ধিত প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিঁনি।

ওই সময় বিএনপির নির্যাতিত নেতা সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আজ কোথায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়েছে। আবার যদি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার রাজনীতি করতে আসে তাহলে আপনারা তাদের প্রত্যাখান করবেন।

পেকুয়াবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ঘুম, খুন আর নির্যাতনের বিচার করা হবে। এখন থেকে ঘুম, খুন আর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। যদি আমার দলের কোন নেতাকর্মী এই সব ঘটনায় জড়িত হয় তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। সকল অবিচারের অবসান হউক, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হউক।

সকল ধর্মের মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ যার যার ধর্ম পালন করবেন। আমাদের সবার পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। সামনের দিনগুলোতে সবার সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।

আ,লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলের, এই দেশ এই মাঠি ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয়ে পবিত্র হয়েছে। হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদী সরকার এখনো ষড়যন্ত্র চালু রেখেছে। বিভিন্ন দপ্তরে এখনো তাদের অনুসারীরা রয়েছে। সজাগ থাকতে হবে। এদেশের ছাত্র জনতা আর কখনো অস্থিরতার সুযোগ দিবেনা। আমরা এখনো চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করি নাই। আমরা চুড়ান্ত বিজয় সেইদিন অর্জন করবো যেইদিন একটি গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তাই সকলের অধিকারের জন্য সব সময় আন্দোলন করতে হবে। যদি আমরা রাজপথ ছেড়ে দিই তাহলে ফ্যাসিবাদী সরকার আবারো সুযোগ নিতে পারে। তাদেরকে আর রাজনীতি করতে সুযোগ দেয়া যাবেনা।

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর উদ্দেশ্যে তিঁনি বলেন, আপনারা হলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। জনগণের কর্মচারী হিসেবে তাদের সেবাই নিয়োজিত থাকবেন। অন্যতায় জনগণ আপনাদের বিচার করবে।

নিজেকে ঘুম করা নিয়ে তিঁনি বলেন, হাসিনা সরকার আমাকে ৬৩দিন ঘুম করে আয়না ঘরে রেখেছিল। প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনেছি। আমি তাদেরকে বলছিলাম, এখানে যদি আমার মৃত্যু হয় অথবা হত্যা করা হয় তাহলে গ্রামে আমার লাশটি যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই গ্রামের মাঠি ও মানুষ আমার প্রাণ।

ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে তিঁনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে। তাদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ বাংলাদেশ ২য় বার স্বাধীন হয়েছে। কোন অবস্থাতেই স্বাধীনতার মানক্ষুন্ন হয় সেই রকম কাজ করা যাবেনা। বাংলাদেশ কাউকে অন্যায়ভাবে ঘুম করা হবেনা, বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হবেনা, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাল্লাহ। আসুন আমরা ছাত্র-জনতার বিজয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে উৎযাপন করি।

পেকুয়ার সন্তান ওয়াসিমকে হত্যার ঘটনায় শোক জানিয়ে তিঁনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের সন্তান ওয়াসিমকে হত্যা করা হয়েছে। তার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানানো হবে। সকল হত্যার বিচার বাংলার মাঠিতে হবে ইনশাল্লাহ।

এই দিকে বুধবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিমানযোগে কক্সবাজার বিমানবন্দর নামলে হাজার হাজার জনতা স্বাগত জানায়। শতশত গাড়ি বহর নিয়ে রামুতে এসে বক্তব্য রাখেন। দীর্ঘ গাড়ি বহর নিয়ে চকরিয়ায় আসেন বিকেল ৫টার দিকে। সেখানে লক্ষ জনতার সামনে বক্তব্য শেষে ২ঘন্টার পর পেকুয়া চৌমুহনী চত্ত্বরে এসে বক্তব্য রাখেন।

তার আগে সকাল থেকে পেকুয়ার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্থরের জনগণ চৌমুহনী চত্ত্বরে সভামঞ্চে এসে জড়ো হন। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বাঁশখালী থেকে হাজার হাজার জনতা চৌমুহনী চত্ত্বরে আসলে লক্ষ জনতা পুরো সড়ক ভরে যায়। সালাউদ্দিন আহমদকে দেখতে আসা দীর্ঘ সময় সমাবেশে আসা জনগণের মাঝে কোন ধরণের ক্লান্তি দেখা যায়নি।

ওই সময় মঞ্চে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন, উপজেলা ছাত্রদল, উপজেলা যুবদল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদল, বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা।

পরে রাতে মরহুম পিতা মাওলানা সাঈদুল হক ও মরহুমা আয়েশা হকের কবর জিয়ারত করেন।