নিজস্ব প্রতিবেদক;
এবার রাতের আঁধারে ইদগাহ হাইস্কুলের তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এসময় লুটেরার দল স্কুলের অফিসে ঢুকে হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও নথিপত্র লুট করে নিয়ে যায়। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১ টায় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত বলে ধারণ করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাত। বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা ও জালালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনি। এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। লুটপাটের ঘটনায় ঈদগাঁও থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে নৈশ প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইদগাহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও হিসাব রক্ষাকারীর অফিসে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় অফিসের আলমিরা থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবের বিভিন্ন ফাইল ও নথিপত্র চুরি করা হয়। গত ২৮ আগস্ট থেকে চলমান ইদগাহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, অন্যায় ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ দাবি করে আসছিল একটি অংশ। অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যে প্রধান শিক্ষককে তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবল চাকমা। এ নিয়ে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও। এদিকে তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত ও পুরা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে একটি কু—চক্রী মহল। তারই প্রেক্ষিতে এই ভাঙচুর ও ফাইল চুরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করছেন শিক্ষকদের। গত মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে ঈদগাঁও বাজারের একটি দুতলা ভবনে কয়েকজন শিক্ষক ও তাদের ভাড়া করা লোকদের নিয়ে গোপনে একটি মিটিং করা হয়। ধরনা করা হচ্ছে সেই গোপন সংলাপের পরেই নৈশ প্রহরী রাতের খাবার খেতে গেলে সুযোগ বুঝে তারা স্কুলে প্রবেশ করে এবং নিচতলার গ্রিলের তালাসহ দুটি অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে এই তাণ্ডব ও লুটপাট চালানো হয়।
হাইস্কুলের নৈশ প্রহরী বাবুল জানান, রাত ১০ টার দিকে সে বাড়িতে গেলে স্কুলের মূল ফটকের দায়িত্ব দিয়ে যান সোনাধন নামের এক দারোয়ানকে। বাড়ি থেকে ফিরে এসে যথারীতি স্কুলের সব স্থান পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখতে পায় স্কুলের নিচতলার গ্রিলসহ দুটি অফিসের দরজার তালা ভাঙ্গা। তার সন্দেহ হলে ফোন করেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হককে। সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলের অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দেখতে পান অফিসের ভিতরে থাকা বিভিন্ন আলমারির দরজা খোলা এবং কাগজপত্রগুলো অগোছালো অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান।
এদিকে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ঈদগাঁও থানার দায়িত্বরত অফিসারসহ ঘটনা উদ্ঘাটনে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈদগাঁও বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, ঘটনা শুরুর পূর্বে মধ্যরাতে হাইস্কুলের দুইজন শিক্ষক ও তাদের সাথে বেশ কয়েকজনকে স্কুল গেটের আশেপাশে বেশ কয়েকবার ঘুরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি ওই শিক্ষকদের কারণে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন হয়েছিল বলেও জানান অন্য আরে ব্যবসায়ী। স্কুলের অন্য একজন শিক্ষক বলেন, পুরো স্কুল ভবন সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। কিন্তু আশিক নামের একজন শিক্ষক গত দু-দিন আগে কারও বাঁধা না মেনে ইউএনও স্যারকেও না জানিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার রেকর্ড লাইন বন্ধ করে দেন। ঠিক তার একদিন পরেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটানো হল। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক জানান, সমস্ত কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে। এটি স্কুলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাত বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা আমাকে ফাঁসানোর জন্যে আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে এই ধরনের ঘৃণিত কাজ করেছেন। স্কুলের যাবতীয় হিসাব—নিকাশসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র অফিসে সংরক্ষণ রাখা ছিল যা তদন্ত কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু তদন্তের জন্যে যথার্থ। তার দাবি মূলত: তাকে অপরাধী বানাতে এসব নথিপত্র চুরি ও অফিসে তাণ্ডব চালানো হয়। না হয় যে সমস্ত নথিপত্র আমি নির্দোষ প্রমাণে যথেষ্ট তা কেন চুরি হবে? তিনি এই ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।