সিরাজুল কাদের

আজ জাপানে উইকেন্ডের দিন। পুরো সপ্তাহের ক্লান্তিতে একটু রিফ্রেশমেন্ট মোডের তাড়নায় সুপ্রভাতের প্রতীক্ষায়..! বিছানা থেকে অলস বদনে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারতেই এক দুঃখজনক, হৃদয়বিদারক, অনভিপ্রেত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনার সংবাদে হতভাগ্য পাঠক হয়ে গেলাম।
সংবাদ পড়তে গিয়ে দেখি কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার অন্তর্গত পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক এবং পালংখালী খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, আমার পরম আপনজন জনাব মোক্তার আহমদ স্যারের উপর নৃশংস হামলা! অমানুষেরা কি এভাবে সমাজটাকে গিলে গিলে খাবে? কিছু হলেই মানুষ গড়ার কারিগরদের উপর নৃশংস হামলা, আমি মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ! তাহলে বই, খাতা, কলম ফেলে শিক্ষিত সমাজকেও লাঠিসোঁটার খেলায় নামতে হবে..!?? একজন মোক্তার স্যারের উপর হাত তুলে তাকে রক্তাক্ত করে সমাজে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে, একটুও কি খেয়াল করেছেন? সব নষ্টদের দখলে দিয়ে উৎকৃষ্টদের শবযাত্রার অদৃশ্য মিছিল নষ্টপুরীর গন্তব্যে হাঁটছে…!! হে বিবেকধর্মী আত্মজরা, একটু জেগে উঠুন মনুষ্যত্বের দৃপ্ত শপথ নিয়ে। নয়তো আমাবস্যার অনিষ্ট তিমির পিছু ছাড়বে না; হ্যালোইনের বেশ ধরে কংকাল মৃত্যুসার, দগদগে রক্তের বারিতে আবৃত ভয়ংকর রাঙানো চোখ, ক্ষত-বিক্ষত বিভীষিকাময় রেসিডেন্ট ডেভিল এবং বায়োহাজার্ডের আক্রান্ত মরিজরা আপনার, আমার, এবং সমাজের ঘাড় মুচড়ে ধরবে। আগাম পরিণতি কী হবে একটু ভেবে দেখুন!!
কথায় বনিবনা বা মিশ্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। সমাধানযোগ্য না হলে বিচার আছে, প্রশাসন আছে, সেখানে স্মরণাপন্ন হওয়াটাই সংগত এবং সমীচীন।
নাহ….! এ তো—ধার নাই, তলোয়ার নাই, দুই কড়ির নিধিরাম সর্দার রূপী এক মাষ্টারকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত বা মেরে ফেললেই কারও কিছু আসে যায় না, এই একটু সময়ের জন্য মায়াকান্না ছাড়া! কেননা অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে এই সমাজে লেবাসধারী ভালো মানুষের মোড়কে আবৃত চেঙ্গিস খান এবং হালাকু খাঁদের প্রেতাত্মাদের জয়জয়কার। এরাই এখানকার নিয়ন্তা, এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের দৌরাত্ম্যে অসংলগ্ন জঠরে প্রসবিত কীট এবং জারজদের হামলায় মোক্তার স্যারেরা চরম অসহায় এবং চুনোপুঁটি তুল্য। তাই পান থেকে চুন খসলেই কুপা শামসু টাইপের অদৃশ্য নিকৃষ্টতম কালচারের বলির পাঁঠা হচ্ছেন মোক্তার স্যারেরা এবং তাদের সমগোত্রীয় জনগোষ্ঠী। হাল আমলে পরিবর্তনের নামে হিড়িক পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার বাজারে; বাদক দলেরা বাজারে ঘুরে ঘুরে মোহাবিষ্ট করছে বাজারীদেরকে ভিন্ন সুর ও লহরে। ক্ষণে ক্ষণে থামে এবং বার্তা দেয়—আমরা পরিবর্তন চাই। এই পরিবর্তন, সেই পরিবর্তন, অমুক, তমুক, আরো কত কী..!?? কিন্তু সমাজে বার্ট্রান্ড রাসেলের বেশ ধরে জায়গা পোক্ত করা রাসেল ভাইপার এবং তার বংশধরদের মূলোৎপাটনে উপযুক্ত শাস্তির বিধানের সংস্কৃতি যতদিন ডেভেলপ না হবে, ততদিন পরিবর্তনের মরমী সংগীত কাজে আসবে না, পাগলা..!
তাই Approach towards much people interest এ হাত দিন। তারপর দেখবেন, পুকুরের গভীরের সুশীতল, সুমিষ্ট পানির ধারা। তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন, সাবধান হন। অন্যথায় মোক্তার স্যারেরা পদদলিত হতে হতে একদিন পিষ্ট হওয়া দুর্বাঘাস থেকে জন্ম নেওয়া প্রতিবাদী প্রজন্ম আপনাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। তাদের পূর্বপুরুষদের উপর ঘটে যাওয়া অবিচার এবং হিংস্রতার ক্রমাগত অভিশাপে জর্জরিত করবে, তখন আমার আপনার বিদেহী আত্মা অশান্তির দাবানলে জ্বলবে অনন্তকাল ধরে..!

তাই নিজের জন্য এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে আপনার সময়োচিত, যৌক্তিক, দূরদর্শী পদক্ষেপ এবং প্রতিবাদ মোক্তার স্যারের দগদগে ক্ষতগুলো সমাজ বিনির্মাণে অমৃতসুধার এক জ্বলজ্বলে নির্দেশক হিসেবে পরিগণিত হবে! সেই সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ—যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের এমন শাস্তি নিশ্চিত করা হোক যাতে আর কেউ যেন এই জঘন্য এবং ঘৃণ্যতম ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস না পায়..!