নুরুল আলম সাঈদ,নাইক্ষ্যংছড়ি;

বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ‍্যংছড়ি উপজেলায় সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন দিনে-রাতে সমানতালে আসছে মিয়ানমারের চোরাই গরু- মহিষ।

এই চোরাই গরু-মহিষেই নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা বাজার ও সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত রামুর গর্জনিয়া বাজারে বসে জমজমাট পশুর হাট।

প্রতি সপ্তাহের এই দুই বাজারে ২ দিন বসে চোরাই গরুর জমজমাট হাট। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ এ বাজারের আশেপাশে রয়েছে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ।

তথ্য মতে, বাংলাদেশ-মিয়ানমারে স্থল সীমান্তের ৪৪ নং সীমান্ত পিলার থেকে ৫০ নম্বর সীমান্ত পিলার পর্যন্ত ; দীর্ঘ সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অংশে পশুর হাট বসে শুধু মাত্র চাকঢালা বাজারে। যেটি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। যা মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক ২-৩ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত । সীমান্ত ঘেঁষে এই বাজার গড়ে উঠায়, চোরাকারবারিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার ( ১০ অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিজিবি টহল জোরদার থাকায় দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত গর্জনিয়া বাজারের গরুর হাট হয়ে উঠে ঢিলেঢালা।

একই চিত্র দেখা গেছে,বুধবার (৯ অক্টোবর) চাকঢালা বাজারে। বিজিবি টহল জোরদার থাকায় দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চাকঢালা বাজারে পশুর হাট বসে নি।

বিজিবির জোয়ানরা দুপুরে খাবার খেতে যাওয়ার প্রাক্কালে দুই-তিন স্থান দিয়ে ছুঠাছুঠি করে চোরাকারবারিরা তড়িঘড়ি করে গরু নিয়ে আসে। মুহুত্বেই হয়ে উঠে জমজমাট পশুর হাট। চাকঢালা বাজারে যার মধ্যে শুধু মেহেরপুর সড়ক দিয়ে আসে অর্ধশত বিশালাকারের মহিষ। অন্যান্য সড়ক দিয়ে আসে আরো বেশি গরু-মহিষ। জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার গর্জনিয়া বাজারে বসে পশুর হাট। এবং প্রতি রবি ও বুধবার চাকঢালা বাজারে বসে মিয়ানমারে চোরাই গরু – মহিষের হাট।

সূত্র মতে, হাট সকাল সাড়ে ১১টায় শেষ হওয়ার কথা, সে পশুর হাট চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সূত্র আরো জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে, সার, তেল, মুরগি, ডিম মাছ, চাল, ঔষধ,পলিথিন, কীটনাশকসহ, সার, বিস্কুটসহ কয়েকশ প্রকারের বাংলাদেশি পণ্য।

আর এ সব চোরাচালানে জড়িত রয়েছে, চিহ্নিত ও আলোচিত ব্যক্তিরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,এই সব মিয়ানমারে গরু-মহিষ এবং মালামাল আনা-নেয়ার জন্যে সড়ক ব্যবহার হচ্ছে ৫ টি। মেহেরপুর সড়ক,হামিদিয়া পাড়া সড়ক,দক্ষিণ মৌলভীরকাটা সড়ক, নিকুছড়ি টু সোনাইছড়ি সড়ক, ছালামী পাড়া শাহ আলমের দোকানের পাশ হয়ে লাইটে গোড়া সড়ক, আলী মেম্বার-আইক্যের ঘোনা সড়ক হয়ে লাইটে গোড়া সড়ক, মৌলভীকাটা রাবার ড্যাম ও শামশুর ঘোনা হয়ে ছালামীপাড়া, খামারপাড়া অংক্য পাড়া থেকে লাইটের ঘোনা সড়ক। স্থানীয় দক্ষিণ চাকঢালার মসজিদের ইমাম মৌলনা হোসন বলেন,আগে বিজিবি টহল বেশি ছিল, এখন কম। রাত যত গভীর হয় চোরাকারবার তত বাড়ে। এখানে নেতা থেকে শুরু করে অনেকেই এই চোরাকারবারে জড়িত।

চাকঢালা বাজার ব্যবসায়ী, শামশুর আলম, ছৈয়দ আলম ও ছব্বির আহমদ বলেন, বিশেষ করে চাকঢালা বাজারের রশিদের মাধ্যমে সব পশু বৈধতা পাচ্ছে। গরু, মহিষ ও ছাগলসহ অন্য পণ্য। মিয়ানমার কেন্দ্রিক সশস্ত্র ২ টি গোষ্ঠী নিজেদের খাদ্য জোগান দিতে চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়ায়, এপারের বিজিবি সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিরোধে। ওপারে খোলা, এপারে বাধা। এ অবস্থায় চোরাকারবারিরা গোপনে পায়ে হেঁটে বা মটর বাইকে চড়ে ওপারের কারবারিদের সাথে আতাঁত করে এই সব অপকর্ম চালিয়ে আসছে। তাদের দাবি সীমান্তে বিজিবির অস্থায়ী তল্লাশি ক্যাম্প বসিয়ে নজরদারি বাড়ালে এ চোরাকারবার বন্ধ হবে।

তাদের দ্বিতীয় দাবি, এ দেশের বিজিবি, পুলিশ, নেতা, গোয়েন্দা, সাংবাদিক, আনসার শিক্ষক ও ইমামদের সমন্বয়ে তদারকিসহ পাহারা বসালে ১ সপ্তাহের মধ্যে চোরাকারবার বন্ধ হবে। এবং বিজিবিকে প্রতিটি বিওপি পয়েন্ট ও সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিজিবির টহল জোরদার করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নাইক্ষ‍্যংছড়ি ১১ বিজিবির জোন কমান্ডারের বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলে ফোন রিসিভ না করাই কথা বলা সম্ভব হয়নি।তবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ‍্যংছড়ির স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সাহল আহমদ নোবেল বলেছেন, চোরাকারবারিরা দেশের শক্র, জাতির শত্রু। তাদের কোন ছাড় দেওয়া যাবেনা। সীমান্ত রক্ষী বিজিবি সদস্যরা কঠোর অবস্থানে থেকে অভিযান চলমান রেখেছে।