মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম :
‘শহরে-গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে নানান দুর্ঘটনা ঘটে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা স্বপ্ন দেখেছিলেন তারহীন বিদ্যুৎ প্রবাহের। বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার প্রস্তাবিত ‘টেসলা কয়েল’ দিয়ে বাস্তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখালেন আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবতিংস চাকমা ও তার দল। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলায় ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাবতিংস চাকমার বিজ্ঞান প্রজেক্টের এ চিত্র দেখা গেছে।

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদমে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের দিয়ে অভূতপূর্ব আয়োজন ঘটেছিল আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের এই বিজ্ঞান মেলায়। রহস্যের উন্মোচনে বিজ্ঞান’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ বিজ্ঞান মেলায় ৫০টি বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞান মেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলীকদম সেনা জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল শওকাতুল মোনায়েম, পিএসসি, আলীকদম ব্যাটালিয়নের (৫৭ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আকিব জাভেদ, পিএসসি, আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মোঃ শেহের আলী হায়দার ও আলীকদম প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিন গিয়ে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তির দেশসমূহে বর্তমানে বেতার প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কিছু যন্ত্রপাতির অতি প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্রাংশ ‘টেসলা কয়েল’। এ কয়েলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তিকে অতি উচ্চ বৈদ্যুতিক চার্জে রূপান্তর করে। শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে এ চার্জ। ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাবতিংস চাকমা অতিথিদেরকে তারহীন এই বৈদ্যুতিক শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছিলেন। এ সময় পাশে দাঁড়ানো আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মোঃ শেহের আলী হায়দার জানালেন, আমাদের এই শিক্ষার্থীর উদ্ভাবনী গুণ আমাদেরকেও মুগ্ধ করে।

শুধু তাবতিংস চাকমাই নয় তার মতো আরো অনেক শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রজেক্টগুলো ছিলো কৌতুলোদ্দীপক। ‘পাহাড় না কেটে পাহাড়ি এলাকায় রাস্তা নির্মাণ’ শীর্ষক একটি বিজ্ঞান প্রজেক্ট নিয়ে হাজির ছিলেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব ও তার দল। ওয়েস্ট ফুড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ইফাত ও তার দল, ‘ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিনির্ভর শহর’ নিয়ে রাইসা ও তার দল এবং ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার’ শীর্ষক প্রজেক্ট নিয়ে মেলায় হাজির ছিলেন মাহির ও তার দল। এ ধরণের অন্তত ৫০টি প্রজেক্টে বিজ্ঞানের নানান রূপকল্প তুলে ধরে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা।

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের একজন জানালো, সূর্যের আলো দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সহজ। এতে জ¦ালানী লাগে না। তাই কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের ঝুঁকিও নেই। এতে পরিবেশ দূষিত হয় না। এছাড়াও মেলায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আবিস্কার স্থান পেয়েছে। অভূতপূর্ব আয়োজনে সেদিন সেজেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিশাল হলরূম। অতিথি ও দর্শনার্থীদের নিজেদের আবিস্কার নিয়ে বিশদভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা!

আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মোঃ শেহের আলী হায়দার বলেন, প্রথমবারের মতো এ বছরই তাঁরা বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করেছেন। প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে এ ধরণের বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ ধরণের পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত হবে এবং একদিন সত্যিকারের বিজ্ঞানী তৈরী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।