সিবিএন ডেস্ক:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আরিফ’কে অপহরণ, ৩৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি ও পরবর্তীতে হত্যা করে পুকুরে লাশ গুমের ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী এবং অপহৃতের স্বজনদের সরাসরি কল করে মুক্তিপণ দাবিকারী মোঃ রুবেল খানকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন আন্দরকিল্লা কাচাঁ বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫, র্যাব-৭ এবং র্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টার দিকে পারিবারিক প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আরিফ। এরপর আনুমানিক রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ি না ফেরায় তার স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু তাকে ফোন দেয়। কিন্তু ভিকটিম আরিফ এর মোবাইলে রিং হলেও কল রিসিভ করেননি। পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে তার স্ত্রী ঐ দিন রাত ১১.৫০ ঘটিকার দিকে পেকুয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন, যার জিডি নং ১০৩৫, তাং ২৮/০৯/২০২৪। উল্লেখ্য, ওই দিন বাদে এশা জনৈক এক ব্যক্তির সঙ্গে ভিকটিমের পরিবারের জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে শালিশের কথা ছিল। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাতস্থান থেকে অধ্যক্ষ আরিফের নাম্বার থেকে তার মা’কে ফোন করে ছেলে অপহরণের শিকার হয়েছে বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে রাত ২টার দিকে পুনরায় ফোন করে চট্টগ্রাম নগরীর ফ্রিপোর্ট থেকে ভিকটিমকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হলেও পরদিন ফ্রিপোর্ট এলাকায় গিয়ে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আরিফ পাওয়া যায়নি। পরে ভিকটিমের মুক্তির জন্য ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং পরদিন বিকেল ৪টার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর নতুন ব্রিজ পুলিশ বক্সের সামনে ভিকটিমের স্ত্রীকে যেতে বলেন অপহরণকারীরা। পাশাপাশি তারা হুমকি দিয়ে বলে, “কোন চালাকি অথবা পুলিশ, র্যাব কিংবা আর্মির দ্বারস্থ হলে তোর স্বামীর মরদেহ পাবি”। কিন্তু এরপর আবারও মোবাইল বন্ধ করে দেন অপহরণকারীরা। তবে গত ০৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উল্লেখিত মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ভিকটিমের স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ রাখে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় ভিকটিমের ছোট ভাই বাদী হয়ে কক্সবাজারের পেকুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ০২, তাং ০১/১০/২০২৪, ধারা-৩৬৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
অধ্যক্ষ আরিফ অপহরণের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে আলোচিত ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব-১৫। একপর্যায়ে ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও অপহৃতের স্বজনদের নিকট কল করে মুক্তিপণ দাবীকারী হিসেবে রুবেল’কে শনাক্ত ও তার বিস্তারিত পরিচয় এবং অবস্থানস্থল উদঘাটনে সমর্থ হয় র্যাবের আভিযানিক দল। এরই ধারাবাহিকতায়, ১১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ অনুমান ০৩.৩০ ঘটিকার সময় র্যাব-১৫ এর সিপিসি-৩, র্যাব-৭ এর সিপিসি-৩ এবং র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ এর যৌথ আভিযানিক দল র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার সার্বিক সহযোগিতায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন আন্দরকিল্লা কাচাঁ বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ রুবেল খান (২৭), পিতা-হাবিবুল্লাহ খান, সাং-চরপুরচন্ডী, থানা-সদর, জেলা-চাঁদপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
অপহরণ ও হত্যাকান্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত রুবেল অন্যতম। এই রুবেলই সরাসরি অপহৃতের স্বজনদের নিকট অপহৃতের মোবাইল থেকে দফায় দফায় কল দিয়ে ৩৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এছাড়া অপহরণের আগে অধ্যক্ষ আরিফের গতিবিধির উপর দীর্ঘদিন যাবত নজরদারিও করে রুবেল। গ্রেফতারের পর রুবেল এই হত্যাকান্ড ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ বিকেল অনুমান সাড়ে ৩টার দিকে অধ্যক্ষ আরিফের নিজ বাড়ীর পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে তার বস্তাবন্দী গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।