হ্যাপী করিম, মহেশখালী :
মহেশখালী পূর্ব ফকিরাঘোনা গ্রামের সবচাইতে প্রবীন মদন শাইর। বয়সের ভারে হাটেন লাঠিতে ভর করে। শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, কানেও শুনে কম, কম দেখেন চোখেও। ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ের মা মদন শাইর। মারা গেছেন তিন ছেলে। জীবিত বড় ছেলে মোহাম্মদ শরীফের বয়স ৭৭ বছর হলেও মায়ের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৪৯ বছর। বৃদ্ধ দুই ছেলে বয়স্ক ভাতা পেলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল থাকায় বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না মদন শাইর। এই নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা।

মদন শাইর কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফকিরাঘোনা গ্রামের মৃত নজির আহমদ স্ত্রী। ঘর না থাকায় পড়ে থাকেন নাতির ঘরের এক কোনে তার বসবাস। পরিবারের লোকজন দাবি, মদন শাইর বর্তমান বয়স ১১৯ বছর। অথচ জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বয়স ৪৯ বছর। যে কারণে তিনি পাচ্ছেন না বয়স্ক ভাতা।

শনিবার (১২ ই অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফকিরাঘোনা গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাঠিতে ভর করে কুজো হয়ে হেঁটে আসছেন মদন শাইর। তিন থেকে চারবার ডাক দিলেও তিনি কোন সাড়া দেননি। পরে নাতি এসে জানায়, তার দাদি কানে কম শুনেন, চোখেও দেখেন কম। যে কারণে তিনি সাড়া দিচ্ছেন না।

নাতি বেলাল বলেন, দাদি আমার ঘরেই বসবাস করেন। আমরা জানি দাদির বয়স ১১৯ বছর বেশি। অথচ, জাতীয় পরিচয় পত্রে দাদির বয়স দেখাচ্ছে ৪৯ বছর। যে কারণে দাদি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না। প্রশাসন যদি দাদির একটা ভাতার কার্ড করে দেয়। তাহলে শেষ বয়সে দাদির দিনগুলে ভাল কাটত।

প্রতিবেশিরা জানান, উনি আমাদের এলাকার সবচাইতে প্রবীন, আমাদের অভিবাবক। অথচ, জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুলে উনার বয়স দেখাচ্ছে ৪৯ বছর। বৃদ্ধ বয়সে অভাব অনটনের সংসারে একটি বয়স্ক ভাতার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু, তার বয়স্ক ভাতার কার্ড হচ্ছে না। এই বয়সে উনার একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড খুব প্রয়োজন।

এবিষয়ে ছেলে মোহাম্মদ শরীফ বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী মায়ের বয়স ১০০ বছরের উপরে। কিন্তু, জাতীয় পরিচয় মায়ের বয়সে মা আমার ছেয়ে ৩০ বছরের ছোট। আমি তার ছেলে হয়ে বয়স্ক ভাতা পেলেও আমার মা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে না। আমারা মার জাতীয় পরিচয় পত্রের বয়স ঠিক করতে কম চেষ্টা করিনি।

বৃদ্ধা মদন শাইর দৈনিক আজকের সংবাদের প্রতিনিধি হ্যাপী করিম’কে বলেন, কার্ডের লাইগা মেম্বারবাড়ি গেছি। মেলা (অনেক) পয়সা খরচ করছি। কার্ড ভালা না, কার্ডের মধ্যে বয়স কম। দৌড়াদৌড়ি করছি, পয়সা খরচ করছি, কিন্তু ভাতার কার্ড অইছে না।

এবিষয়ে জানতে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শা.আ.ম এনায়েত উল্লাহ বাবুল জানান জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে,

মহেশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিমলেন্দু কিশোর পাল গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু জানতে পেরেছি নির্বাচন কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি সুরাহা করা হবে।