সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে পরিচালিত “সেন্ট্রালিটি অফ প্রটেকশন ইন প্রটাকটেড ক্রাইসেস (সিপিপিসি)” প্রকল্পের অধীনে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) টেকনাফ উপজেলার ক্যাম্প-২১, ২২ ও ক্যাম্প-২৪ এ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও এফআইভিডিবি’র যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে তিন ক্যাম্পের সর্বমোট ২৩০ জন কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ২১ ও ২২ ক্যাম্প ইনচার্জ সাইদুজ্জামান চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে কন্যা শিশুরা নানা ভাবে সহিংসতা এবং বৈষ্যমের শিকার হয়ে থাকে। এসব সহিংসতা এবং বৈষম্য প্রতিরোধে ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। সবাই নিজ নিজ পরিবার থেকে কন্যা শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়ার আহবান জানান।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারগুলোতে ছেলে মেয়ে উভয়ের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি সকলকে কন্যা শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাল্যবিবাহ বন্ধে কঠোর হতে হবে।

শিশুদের উদ্দেশ্য করে ক্যাম্প ইনচার্জ সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মেয়ে শিশুদের ইভটিজিং করা ও সকল ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে সবাই দূরে থাকে এবং যেন সকল ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুদের প্রতি সহযোগিতা করে।

আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে সিপিপিসি প্রকল্পের স্টাফ, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের সাইড ম্যানেজমেন্ট টীমের স্টাফবৃন্দ, ক্যাম্পের এফআইভিডিসহ বিভিন্ন সংস্থার শিক্ষা কর্মসূচীর শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল “সচেতনতা র‍্যালি, কন্যা শিশুদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে গল্প বলা, চিত্রাংকন, মেহেদী আর্ট ও সুই সুতা খেলা প্রতিযোগিতা।” সকল ইভেন্টের অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে থেকে ১ম, ২য়, ও ৩য় স্থানে নির্বচিত বিজয়ীদেরকে প্রধান অতিথির হাত থেকে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়।

ক্যাম্প ২১ এর কিশোরী কোহিনূর (বয়স ১৪ বছর) আজকের আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আজ আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করতে এসে আমি অনেক খুশি এবং এইদিন কন্যা শিশুদের প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আমি আমার মা বাবার সাথে মায়ানমার ফিরে যেতে চাই এবং সেখানে গিয়ে লেখাপড়া করে বড় শিক্ষক হতে চাই।”

ক্যাম্প ২২ এর কিশোরী তসমিদা (বয়স ১৩ বছর) বলেন, ”আজ আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করতে এসে আমি কিশোরী হিসেবে নিজের অধিকার ও সুরক্ষা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমি বাল্যবিবাহ, সহিংসতা ও নির্যাতনের বিষয়ে আমার বন্ধুদের বলবো।”

অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে কন্যা শিশু দিবস ২০২৪ উদযাপনের এই আয়োজনকে একটি কার্যকর ও সৃজনশীল উদ্যোগ হিসেবে স্বাগত জানান।

তারা আরো বলেন, কন্যা শিশুদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে গল্প বলা ইভেন্টে কিশোরী মেয়েদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা এবং তাদের সমস্যার সমাধান, প্রয়োজনীয় সেবায় প্রবেশাধিকার, তাদের অধিকার বাস্তবায়ন ও সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন ।

সিপিপিসি প্রকল্পটি টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, টেকনাফ সদর এবং চারটি ক্যাম্পে (ক্যাম্প ২১, ২২, ২৪, এবং ২৫) শিশু সুরক্ষা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান ও আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি) উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন।

আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো, “কন্যা শিশুর চোখে ভবিষ্যৎ দেখি” এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কন্যাশিশুদের অধিকার রক্ষায় তাদের দাবি এবং তাদের স্বপ্ন থেকে প্রণোদিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়।