নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে আবাসিক হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও দখলবাজদের পক্ষে পুলিশের প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও তদন্ত কর্মকর্তা তা আমলে নেননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

স্থানীয়রা বলছে, ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করছে কিছু অবৈধ চক্র। কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনেও রয়েছে এমন একটি অপরাধী গোষ্ঠী। যারা ভাড়ায় গিয়ে প্লট, ফ্ল্যাট, আবাসিক হোটেল, বাসা বাড়ি ইত্যাদি দখল করে দিচ্ছে। বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এমন একটি লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে পর্যটন শহরে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঝিমিয়ে পড়া প্রশাসনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দখলবাজিতে মেতে উঠে একটি চিহ্নিত চক্র। দীর্ঘদিনের পরিচিত ‘হোয়াইট বিচ’ দখল করতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। রাতারাতির নাম পাল্টিয়ে দিয়ে ‘মারমেইড বে ওয়াচ রিসোর্ট’ করেছে। অবৈধ দখলদারিত্ব ধরে রাখতে সন্ত্রাসী ব্যবহার ও ভাড়াটিয়াদের তাড়াতে মিথ্যা মামলাও করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হোয়াইট বিচ নামক হোটেলটির মালিক উখিয়ার রত্নাপালংয়ের মরহুম সাহাব উদ্দীন চৌধুরী। তার মৃত্যুর পরে হোটেলটি দেখভাল করেন স্ত্রী শাহনূর বেগম।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর শাহনূর বেগম ও নির্মাণকারী কোম্পানী ওয়াহিদুল কাদের টিটুর কাছ থেকে ৫ বছরের জন্য ভাড়া নেন মোহাম্মদ শাহেদুজ্জামান বাহাদুর, মুজাহিদুল ইসলাম, মো.মীর কাসেম আলী ও নুরুল আনোয়ার মুন্না।

চুক্তি অনুযায়ী আড়াই বছর সুনামের সঙ্গে হোটেলটি পর্যটকদের সেবা প্রদান করে আসলেও ৫ আগস্ট এসে দখলবাজদের খপ্পরে পড়েন। সেদিনই ভাঙচুর ও এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। দখলে নিতে কর্মীদের মারধর করে চক্রটি। প্রাণে বাঁচতে হোটেলটির কর্মীরা পালিয়ে রক্ষা পান। পরে হোটেলটির নাম পরিবর্তন করে এখন ‘মারমেইড বে ওয়াচ রিসোর্ট’ দেয়া হয়েছে।

এসব ঘটনা সিসিটিভিসহ অসংখ্যা মানুষের মুঠোফোনের ভিডিও রক্ষিত হলেও উল্টো ভাড়াটিয়া মালিকদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যে মামলা দায়ের করেন দখলবাজ চক্রটির সদস্য শাহাদাত বখত ইয়াছিন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, দখলবাজিতে ইন্ধন দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল, তার স্ত্রী উম্মে আইমন, সিরাজুল ইসলাম, মো. আশরাফুল ইসলাম। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করেছেন তারা। শুধু তাতে শেষ নয়, ভাড়াটিয়া মালিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার প্রতিবেদন অনুকূলে নিতে মোটা অঙ্কের মিশনে নামে তারা। ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহীন মিয়া।

সিসিটিভি ফুটেজে দখলবাজদের হামলা-ভাঙচুর স্পষ্ট হলেও তিনি উল্টো মিথ্যা মামলাটির সত্যতা পেয়েছেন বলে একটি উদ্ভট প্রতিবেদন দেন। যা নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী আড়াই বছর ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সুযোগে হোটেল দখল করতে ভাঙচুর চালায়। নিজেরা অগ্নিসংযোগ করে উল্টো মিথ্যা মামলা দেয়। তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়। অথচ ওইদিন কারা ঘটনা ঘটিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা সব দেখেছে। হামলা, অগ্নিসংযোগকারীরা প্রকাশ্যে থাকলেও তাদের বিষয়ে প্রতিবেদন না দিয়ে উল্টো ভাড়াটিয়া পক্ষকে ফাঁসানো হচ্ছে।

হোটেলের মালিকানা দাবি করে শাহাদাত বখত ইয়াছিন নামক ব্যক্তি ৫ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আদালতে মামলা করেন। যার মামলা নং-৬৫/২৪।

ভুক্তভোগী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না, ঘটনা সম্পর্কে জানেন না তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে হোটেল মোটেল জোনে আমি ব্যবসা করে আসছি। চাঁদা দাবি তো দূরের কথা, অবৈধ লেনদেন সংক্রান্ত কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। এরপরও দুই লাখ চাঁদা দাবি করেছি অভিযোগে মামলা এবং পুলিশের প্রতিবেদন একেবারেই মিথ্যা ও হাস্যকর।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. শাহীন মিয়া বলেন, কয়েক দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাক্ষীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে দিয়েছি। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

তিনি বলেন, ১২৬ পাতা তদন্ত প্রতিবেদনের প্রতিটি বক্তব্যের অনুকূলে ডকুমেন্টস সংযুক্ত করেছি। এরপরও প্রতিবেদনের ব্যাপারে অভিযোগ থাকলে বিবাদীপক্ষ আদালতে ‘নারাজি’ দিতে পারেন।

তবে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ সংক্রান্ত কিছু জানি না। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।