নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় কৃত্রিম ঘাসে তৈরি খেলার মাঠ (টার্ফ) দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে জুবায়ের উদ্দিন বাবু (২৬) নামে যুবক নিহতের ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে থেকেও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. নুরুল আমিন কে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে মো. নুরুল আমিন (৪২) গত (৮ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম এন্ড অবস), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর মহাপরিচালক, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোট ঢাবি, সিএমপি কমিশনার, উত্তর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও অফিসার ইনচার্জ বরাবরে আবেদন জানিয়েছেন।

এতে চান্দগাঁও থানার হত্যা মামলার (নং-২৮/২৮৭) ঘটনাস্থল হতে ৩ কিলোমিটার দূরে থেকেও মিথ্যা ভাবে তাকে জড়ানো মামলা হতে তদন্তপূর্বক অব্যাহতি চেয়েছেন।

আবেদন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬ টার সময় চান্দগাঁও থানাধীন পাঠালিয়া গোদা ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের উত্তর পাশে চান্দগাঁও স্পোর্টস জোন টার্ফে প্রবেশ

করে ১ থেকে ৪০ জন লোক টার্ফের বিভিন্ন লোকজনসহ দর্শকদের উপর অতর্কিত হামলা করেন।

এতে লোকজনের পরস্পর যোগসাজশে ছোরা ও কিরিচের এলোপাতাড়ি আঘাতে জুবায়ের উদ্দিন বাবু (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়। পরে সিএমপি চান্দগাঁও থানার হত্যা মামলা (নং-২৮/২৮৭) দায়ের হলে সেখানে আবেদনকারীকে প্রধান আসামি করা হয়। অথচ ঘটনার সময় সেদিন শুক্রবার বাদে আসর থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিনি ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার খানকায়ে শরীফে ছিলেন বলে দাবি।

সেখানে ছোট বোনের স্বামীর ছোট ভাই রাজুর আকদ অনুষ্ঠান ছিলো। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মো. মনছুর আলম, আব্দুল মতিন, আনোয়ারুল করিম রাজু, আব্দুস সাত্তার। এরা সবাই সে দিনের প্রত্যক্ষদর্শী।

এজাহারমতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ঘটনা ঘটে ‘চান্দগাঁও ৪ নম্বর ওয়ার্ড স্পোর্টস জোন টার্ফে’ অথচ ঘটনার সময় আমি ছিলাম ‘নগরীর পশ্চিম ষোল শহর নাজির পাড়া, পাঁচলাইশে। ঘটনাস্থল থেকে আবেদনকারীর দূরত্ব ছিলো তখন ৩ কিলোমিটার। এই ৩ কিলোমিটার দূরে থেকেও তিনি হত্যা মামলার আসামি।

সূত্র আরও জানায়, সে দিন ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত মোবাইলের লোকেশন দেখলেও বিষয়টির স্পষ্ট হওয়া যাবে। আকদ অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি পাশের শ্যামলী আবাসিকে আমার বড় বোনের বাসায় যান। সেখানে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে যেতে হাঁটতে হাঁটতে খতিবের হাট এসে পৌঁছান। এরপর রিক্সা করে বাসায় যেতেই শুনতে পাই ‘চান্দগাঁও স্পোর্টস জোন টার্ফে’ ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার একদিন পর হত্যা মামলা হলে সেই মামলায় আবেদনকারীকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। তার দাবি, সঠিক তদন্ত করলে উঠে আসবে এ ঘটনার সাথে তিনি কোনোভাবেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত নন।

এমন পরিস্থিতিতে নামে-বেনামে গণহারে, নির্বিচারে মামলা দিচ্ছে। আর নিরীহ লোকজনকে বিভিন্ন মামলায় জড়াচ্ছে। তেমনি ভাবে আবেদনকারীর  বিরুদ্ধে করা এই মিথ্যা বানোয়াট, ভুয়া, আজগবি ও গায়েবি মামলা হতে তদন্তপূর্বক পরিত্রাণ চেয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিএমপির চান্দগাঁও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘নিরীহ কাউকে মামলা হলেও হয়রানি করা হবে না। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একইভাবে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম চট্টগ্রাম আসলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মামলার আসামি হলেই গ্রেপ্তার করা হবে না। শুধুমাত্র তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেই গ্রেপ্তার করা হবে। নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।’

প্রসঙ্গত, চান্দগাঁওয়ে টার্ফ দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে জুবায়ের উদ্দিন বাবু (২৬) ছুরিকাঘাতে নিহতের ঘটনায় গত ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানায় নিহতের ভগ্নিপতি আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দীন বাদী হয়ে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।