কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি;
বুধবার বৃষ্টির মাঝে পড়ন্ত বিকালে লোকচক্ষুর আড়ালে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নাধীন আচার্য মৌজার বৈদ্যের বাজার নিকটস্থ আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০০ গজ পশ্চিম দিকের সরকারী রাস্তার গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অবৈধভাবে সরকারী রাস্তায় বসবাসকারী গোলাপ মিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি প্রায় পনেরো বছর ধরে সরকারী রাস্তার সামান্য অংশ রেখে বাকী রাস্তা দখল করে চারটি টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। তিনি কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের বাসিন্দা, কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাকে তার স্থায়ী ঠিকানা হতে স্থানীয় লোকজন বিতাড়িত করেছেন মর্মে জানা যায়। তার নিকট সরকারী রাস্তার ৩টি গাছ ২১০০ টাকায় ক্রয় করেন বৈদ্যের বাজারের গাছ ব্যবসায়ী মজিবর রহমান। গাছ ব্যবসায়ী মজিবর রহমান প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, গোলাপ মিয়া তাকে জানান, তার জমিতে তার নিজের রোপনকৃত ৩টি গাছ বিক্রয় করবেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঐ স্থানে বসবাস করে আসছেন, তাই আমি গাছ তিনটি তার নিজের মনে করে ২১০০ টাকায় ক্রয় করেছি। এগুলো সরকারী রাস্তার গাছ বিষয়টি জানা থাকলে কখনোই ক্রয় করতাম না। গাছগুলো ছোট ছিল তাই স মিলে চিড়ে খড়ি করা হয়েছে। ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি দায়িত্ব পালনকারী প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ঘটনাটি তিনি শুনেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মৌজার (আচার্য) মেম্বার আশীষ কুমার রায় ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেছেন এবং মেম্বার আশীষ কুমার রায় সরেজমিন পরিদর্শনে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন মর্মে চেয়ারম্যানকে জানান। উক্ত মেম্বার চেয়ারম্যানকে আরো জানান যে, গাছগুলো গোলাপ মিয়া সরকারী রাস্তায় রোপণ করেছেন এবং সন্তানের চিকিৎসার জন্য তা বিক্রয় করেছেন।
সরকারী রাস্তার গাছ কেটে বিক্রয় করা যায় কিনা, জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান বলেন, বাচ্চার চিকিৎসার জন্য নিজের রোপণ করা গাছ কেটে এবং বিক্রয় করেছেন, বিষয়টি মানবিক। তথাপিও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোলাপ মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।
রাজারহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশাদুল হককে বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তথ্য পেলেই তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান যে, গোলাপকে আমরা অনেকেই বলেছি, সরকারী রাস্তার বসবাস না করে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে, কিন্তু তিনি তা করতে আগ্রহী ছিলেন না। বরং সরকারী রাস্তায় দিনের পর দিন স্থানীয়দের আবাদি জমির ক্ষতি করে নির্জন স্থানে তিনি বসবাস করে আসছেন। কেউ কেউ বলে থাকেন তার একজন মেয়ে জামাই নেশায় আসক্ত হওয়ায় তিনি হয়তোবা তার বাড়িতে মেয়ে জামাইয়ের মাধ্যমে নেশারুদের নেশা করার সুযোগ দিয়ে অবৈধ সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন।
তার অবৈধ বাড়ি সংলগ্ন আবাদি জমির মালিক ইয়াকুব আলী খন্দকার বলেন, প্রতিবছরই তিনি আমার ফসলি জমির ফসল নষ্ট করে থাকেন এবং জমিতে গর্ত খননসহ বাড়ি ব্যবহার্য ময়লা আবর্জনা জমিতে ফেলে ফসল নষ্ট করে থাকেন। তাকে এ ধরনের কাজ না করার কথা বলতে গেলেই তিনি মেরে ফেলার হুমকি প্রদানসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে থাকেন। ইয়াকুব আলী খন্দকার সরকারের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে বলেন, গোলাপ মিয়া যেহেতু সরকারী রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন, তাই তাকে ভূমিহীন হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়ে সরকারী রাস্তা উদ্ধারসহ তার বাড়ি আশেপাশের আবাদি ফসলি জমিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে অনুরোধ করছি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।