জালাল আহমদ, ঢাবি:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর নির্যাতিত শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর জাহাঙ্গীর আলমকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে বুয়েট ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ’।

আজ শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভিসি বরাবর এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদের সমন্বয়ক এম ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “বর্তমানে পরিবর্তিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশে বুয়েটের শিক্ষক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হওয়া নিপীড়নমূলক প্রতিটি আচরণের তদন্ত ও বিচার এবং একই সঙ্গে তাকে তার সব মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশল পরিষদ মনে করে।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল ফেসবুকে একটি মন্তব্যকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে বুয়েটের তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন।গায়ে হাত তোলেন এবং বিভাগে তার রুম লন্ডভন্ড করেন। পরবর্তী সময়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নেতা ড. আবদুল জব্বার খানের প্ররোচনায় সিয়াম হোসেন নামের ছাত্রলীগের এক নেতা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন। যা এখনো চলমান।”

ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে অনৈতিকভাবে সাময়িক সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যদিও তিনি ফ্যাসিবাদী বুয়েট প্রশাসনের মদদে আর কখনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেননি। এমনকি পরবর্তী সময়ে ড. আবদুল জব্বার খানের অলিখিত নির্দেশে তাকে বিভাগের কনসালট্যান্সি কাজ থেকেও বাদ দেওয়া হয়। ফলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন। অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খানের প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ভিক্টিম শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিটি মিথ্যা মামলা এখনো চলমান এবং যা তার আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক চাপের কারণ দাঁড়িয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০২৩ সালের শেষের দিকে হঠাৎ অফিস আদেশের মাধ্যমে জানানো হয় যে তার চাকরি ছাড়ার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেনা-পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়, যদিও তার পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এদিকে পেনশন প্রাপ্তির বিষয়টি আজ অবধি সুরাহা করেনি বুয়েট প্রশাসন।”

এ সময় অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি যে বৈষম্য ও অন্যায় হয়েছে, সমাধানের জন্য বুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ বি এম বদরুজ্জামান বরাবর তিনি বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-

১. সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। ড. জাহাঙ্গীরের উপর নির্যাতন, অপমান- অপদস্থ করন এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বুয়েটের অর্ডিন্যান্স ও ফৌজদারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. অনতিবিলম্বে পুনঃ যোগদান নিশ্চিত করতে হবে।

৩. বিভিন্ন সময়ে বুয়েট প্রশাসনের অসহযোগিতা ও সাবেক প্রো-ভিসি আব্দুল জব্বারের প্রত্যক্ষ মদদে ক্রমাগত হুমকি-ধামকি এবং মামলা-গ্রেপ্তারের মতো অনৈতিক চাপের মাধ্যমে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয় ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। তাই ওনার অব্যাহতিপত্র অনতিবিলম্বে বাতিলপূর্বক আগামী ৫ কর্মদিবস তথা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে পুরকৌশল বিভাগে স্বপদে সসম্মানে যোগদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. মৌলিক সুযোগ-সুবিধার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্য হয়ে বুয়েটের টিচার্স কোয়ার্টার ছাড়তে হয়, অনৈতিকভাবে বিভাগের কনসাল্টেন্সি থেকে বিরত রাখা, অন্যায়ভাবে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়াসহ মিথ্যা মামলায় প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই বুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে পূর্বের বকেয়া সকল বেতন-ভাতা পরিশোধপূর্বক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি গ্রহণে সহযোগিতা, ফ্যাসিবাদের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতের অব্যাহতি গ্রহণে বুয়েট প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে হবে।